স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগুরু যিনি সমগ্র বিশ্বের দরবারে ভারতীয় ধর্মকে না কেবল তুলে ধরেন, সঙ্গে প্রতিষ্ঠিতও করেন। ভারতীয় বেদান্তকে তিনি এক অনন্য স্থানে তুলে ধরেন। স্বামী বিবেকানন্দ এমন এক মহাপুরুষ ছিলেন যিনি আজও তার বাণীর মাধ্যমে মানুষের মন,প্রাণকে অনুপ্রানিত করে চলেছেন।
স্বামী বিবেকানন্দের বাল্যকালঃ
আজ থেকে ১৫৮ বছর আগে ১৮৬৩ সালে ১২ই জানুয়ারি তিনি কলকাতার দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মগুরু হবার আগে তিনি নরেন্দ্রনাথ দত্ত নামে পরিচিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই নরেন পড়াশুনা, গানবাজনা, খেলাধুলা সবেতেই পারদর্শী ছিলেন। ছোট থেকেই তিনি করুণার সাগর ছিলেন। লোক্মুখে শোনা যায় তিনি দরিদ্র ভিক্ষুকদের কষ্ট দূর করবার জন্য বাড়ির সমস্ত জিনিস বিলিয়ে দিতেন। বিলে ছিল তার ডাকনাম। এই নামে তার মা ভুবনেশ্বরী দেবী তাকে ডাকতেন। ভুবনেশ্বরী দেবী বুঝতে পারতেন নরেন আর সাধারণ বালকের মতো ছিলেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন এই শিশু ভবিষতে এক অনন্য সম্মানে ভূষিত হবেন। বিলের আর একটি বৈশিষ্ট ছিল তিনি খুবই চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন। এক বিকেলে বিলে নিজের গান রেওয়াজ করবার সময় দেওয়াল থেকে নির্গত এক ব্যক্তির প্রতিছবি দেখে খুব ভয় পেয়ে যান, পরবর্তী সময়ে নরেন বুঝতে সক্ষম হন যে সেই প্রতিছবি আর কেউ নন বুদ্ধদেবের ছিল। তিনি তার অবগ্মন কালে স্বামীজিকে দেখে জান।
প্রভু রামকৃষ্ণের ছত্রছায়া লাভঃ
কৈশর কাল পেরোবার পর থেকে নরেন এর জীবনকালে তিনি বহু ঝড়ঝাপ্টার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি জীবন থেকে সমস্তরকম বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন। ঠিক সেই সময়ে তার জীবনে আগমন ঘটে মহাপ্রভু শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের। মহাপ্রভু শ্রী রামকৃষ্ণ দেব নরেনকে ধর্ম নিয়ে পাঠদান করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে নরেন বেদান্ত জ্ঞ্যানে সমৃিদ্ধ হতে থাকেন। নরেন মহাপ্রভু শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের প্রত্যেকটি বাণীর মর্ম বোঝেন ও তার সম্মান করেন। শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের তিরোধানের পর নরেন সন্ন্যাস গ্রহণ করেন এবং ভারতীয় বেদান্তকে সমগ্র বিশ্বে প্রচলন করবার গুরু দায়িত্ব কাঁন্ধে তুলে নেন।
শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে ভারতীয় বেদান্তকে তুলে ধরাঃ
১৮৯৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে উপস্থিত হন এবং সেখানে তিনি তার গুরু শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের বেদান্ত সম্পর্কে বার্তা প্রেরণ করেন। তার বার্তায় উচ্চারিত প্রথম লাইনেই সমগ্র সম্মেলনে উপস্থিত শ্রোতাগণ তাকে সসস্মানে আহ্বান জানান এবং তার ধর্ম বার্তার প্রশংসা করেন। স্বামী বিবেকানন্দের উচ্চারিত প্রথম লাইন ছিল, ” আমার প্রিয় আমেরিকান ভগিনী ও ভ্রাতাগন”। যেখানে প্রথমে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী শোনার আগ্রহ খুব কম দেখা যাচিল, ঠিক সেখানেই তার বাণীতে প্রভাবিত হয়ে পরে সমগ্র আমেরিকা। সুধুমাত্র আমেরিকাই নয় বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও স্বামীজির বাণী ছড়িয়ে পরে। ১৮৯৭ ও ১৮৯৯ সালে দক্ষিণেশ্বরের ঠিক বিপরীত পাড়ে স্বামীজি গড়ে তোলেন বেলুরমঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন। আজও বহু মানুষ তার বাণীতে প্রভাবিত হয়ে জীবনের সঠিক মানে বুঝতে সক্ষম হন।
স্বামীজির কয়েকটি বিখ্যাত বাণীঃ
“যখন আমাদের মধ্যে অহংকার থাকে না, তখনই আমরা সবথেকে ভালো কাজ করতে পারি, অপরকে আমাদের ভাবে সবচেয়ে বেশি অভিভূত করতে পারি।”
“এমন কাজ করে চলো যে তুমি হাসতে হাসতে মরবে আর জগৎ তোমার জন্য কাঁদবে।”
“ওঠো , জাগো এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না।”
“কখনো না বোলোনা, কখনো বোলোনা আমি করতে পারবোনা। তুমি অনন্ত এবং সব শক্তি তোমার ভিতর আছে , তুমি সব কিছুই করতে পারো।”
“গীতা পড়ার পরিবর্তে আপনি ফুটবলের মাধ্যমে স্বর্গের আরো কাছাকাছি চলে যেতে পারবেন”
[…] […]