কুশের বিধানসভা নির্বাচনই এখন বিজেপির পাখির চোখ। লোকসভা ভোটে বিপুল জয় গেরুয়া শিবিরকে বাড়তি অক্সিজেন দিচ্ছে। মাঠে-ময়দানে বিজেপির লড়াই বলে দিচ্ছে বাংলা জয় করতে তারা আত্মবিশ্বাসী।

লোকসভা ভোটে বিজেপি পেয়েছে ১৮ টি আসন। গতবারের থেকে ১২ টি আসন খুইয়ে, তৃণমূল পেয়েছে ২২ টি আসন। কংগ্রেস ২ টি। একটি বাদে, সব আসনে জামানত খুইয়েছে সিপিএম-সহ বামেরা। এই ফলকে রাজ্যের ২৯৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রওয়াড়ি ফলে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে রাজ্যের ১২২ টি বিধানসভা সিটে, তৃণমূল এগিয়ে ১৬৩ টিতে, কংগ্রেস ৯ টি বিধানসভা আসনে। বামেরা একটিও বিধানসভা আসনে এগিয়ে নেই। অর্থাৎ, তৃণমূলের চেয়ে মাত্র ৪১ টি আসনে পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি।

আসলে এ সবই খাতায় কলমে। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হতে এখনও ৮-৯ মাস বাকি। এর মধ্যে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে যাবে। উঠে আসবে নতুন ইস্যু। নতুন নেতা। কোন ঘটনা কীভাবে অভিঘাত ফেলবে বাঙালির মনে তা ঈশ্বরই জানেন। তবুও সংগঠন এবং গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে যে ৫ জেলায় বিজেপি অনায়াস জয় হাসিল করে নিতে পারে তারই একটা তালিকা করলাম আমরা।

alipurduar1

১। আলিপুরদুয়ার – ২০১৪-র লোকসভা ভোটের পর থেকেই এই জেলায় নিজেদের জমি শক্ত করতে শুরু করে বিজেপি। দু’বছর পর বিধানসভা নির্বাচনে চা বাগান অধ্যুষিত মাদারিহাট আসনে জয় ছিনিয়ে নেয়। এক বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটে সার্বিক জয় না পেলেও অনেক জায়গাতেই তৃণমূলকে বেগ দেন বিজেপি নেতারা৷ আর ২০১৯ লোকসভা ভোটে জোড়াফুলকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয় গেরুয়া শিবির। এখানকার সাতটি বিধানসভার প্রতিটি এলাকাতেই পদ্মফুল ফুটিয়েছেন বিজেপি নেতারা। আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও এই জেলা নিয়ে আশাবাদী বঙ্গ বিজেপির নেতারা।

kanak durga

২। ঝাড়গ্রাম – পঞ্চায়েত ভোটের ফল ইঙ্গিত দিয়েছিল হাসি ফিকে হচ্ছে জঙ্গলমহলের। ঝাড়গ্রামের হাসি ফেরানোর ভার দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু লাভ হয়নি। তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সরেনকে ৯,৬৬৬ ভোটে ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হন বিজেপির কুনার হেমব্রম। পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম লোকসভা এলাকায় তৃণমূল পেয়েছিল ৪৭% ভোট। আর বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৩৯.০৪%। কিন্তু লোকসভায় পাশা উল্টে যায়। আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও এই জেলা থেকে জয় রাখার ব্যাপারে আশাবাদী পদ্মশিবির।

maxresdefault 1

৩। কোচবিহার – বন্ধ চা-বাগান খোলা, দু’টাকা কিলো দরে চাল বিলির মতো রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ কোনওভাবেই দাগ কাটেনি কোচবিহারে। তরাই-এর প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ গোর্খা জনজাতি ‘আপন’ করেছে পদ্মফুলকে। ২০১৬-র উপনির্বাচনে পার্থপ্রতীম রায়কে প্রার্থী করে সাড়ে চার লক্ষ ভোটে জিতেছিল তৃণমূল। কিন্তু গোষ্ঠী বিবাদের কারণে লোকসভা ভোটে টিকিট পাননি তিনি। তাঁর জায়গায় দাঁড় করানো হয় প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লকের মন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে। কিন্তু তিনিও বামেদের ভোট তৃণমূলে আনতে পারেননি। অন্য দিকে দল থেকে ছেঁটে ফেলা যুবনেতা নিশীথ প্রামানিক ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে শেষ ছোবল দিয়েছে শাসককে। একুশের নির্বাচনেও এই জেলায় গেরুয়া ঝড় তুলতে আত্মবিশ্বাসী পদ্মশিবিরের নেতারা।

p508429104 4

৪। পুরুলিয়া – পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূলের জয়জয়কার হয়। কিন্তু তার মধ্যেই বেশকিছু জেলায় শক্ত আঁচড় কাটে বিজেপি। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পুরুলিয়া। জঙ্গলমহলের এই জেলায় ৫টি পঞ্চায়েত সমিতিই ঘাসফুলের হাতছাড়া হয়েছে। লোকসভা ভোটেও বজায় থেকেছে সেই হাওয়া। সাংসদ হিসাবে জিতেছেন জ্যোতির্ময় মাহাতো। আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও পুরুলিয়ায় জয় নিয়ে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা।

Radhamadhab Temple at Bishnupur in Bankura district of West Bengal

৫। বাঁকুড়া – পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই বিজেপির বাড়বাড়ন্ত ছিল। লোকসভা ভোটেও সেটাই বজায় থাকে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট নেতাকেও হেলায় হারিয়ে দেন বিজেপির অনামি সুভাষ সরকার। সুব্রতর সমর্থনে একাধিকবার সভা করেছিলেন মমতা নিজে। কিন্তু তাতেও লাভের লাভ হয়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেন, বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ মানুষই হিন্দু। সংখ্যালঘু খুবই কম। ফলে হিন্দুত্ববাদী হাওয়া এখানে বিজেপির পক্ষে কাজ করছে। একুশের নির্বাচনেও সেই হাওয়া কাজ করবে বলেই মনে করে ওয়াকিবহাল মহল।