# ওজন কন্ট্রোল

অনাহারে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ”

–বাংলা সিনেমার এই জনপ্রিয় সংলাপটি ফিগার কনসাস কিছু মানুষজন প্রায় মন্ত্রের মতন করেই জপ করে দিনরাত। সত্যি কথা বলতে, বেশি খেলেই মানুষের ওজন বেড়ে যায় এইরকম একটা ধারণা কমবেশি আমাদের সবারই রয়েছে। কারণ ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের শেখানো হয়, কম খেলে খ্যাংড়াকাঠিড় মতন দেখতে লাগবে, কিন্তু থপথপে চেহারা হবে বেশি বেশি খেলেই। ফলে যারা ভোজনরসিক মানুষ, তাঁদের গোলগাল নাদুসনুদুস দেখতে না হলে খুবই অবাক হয়ে যায় সবাই। এর পিছনে কারণও শুধু একটা, আমরা সবাই ভাবি যে চেহারা ভারি হবার পিছনে বা শরীরে মেদ জমার একমাত্র কারণ হল অপরিমিত খাওয়া। প্রচুর যারা খায়, তাঁদের মোটা হওয়া আটকানো যায়না, এ ধারণাও অনেক অনেকদিন আগের থেকে চলে আসছে। সিনেমা, নাটকে, গল্পের বই বা কার্টুনে ভারি চেহারার সমস্ত চরিত্রকে সবসময় পেটুক বা মিষ্টির থালা হাতেই দেখা যায়। কনসেপ্টটা এমন ভাবে মগজের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে যে ওজন বাড়ার পিছনে যে আরও কোনও গুরুতর কারণ থাকতে পারে, বেশিরভাগ মানুষজন মানতেই চায় না এই কথাটা। কিন্তু এখনকার সমস্ত ডাক্তারই প্রায় একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে মেদ জমার জন্য বেশি খাওয়াই দায়ী হয় না সবসময়। বরং ওজন বেড়ে যাবার এমন অনেকগুলো কারণ রয়েছে যা আমাদের জানা ভীষণ জরুরি।


অনিদ্রা কিংবা অতিনিদ্রা— ভীষণ অবাক লাগলেও এ কথা সত্যি যে ঘুমের সঙ্গে ওজনের একটা সরাসরি সংযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষ দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমোতে পারে। কিন্তু এই পরিমাণ ঘুমের সময়ে বৃদ্ধি বা ঘাটতি- কোনটাই যদি দেখা যায় তাহলে শারীরিক নানান উপসর্গ দেখা দিতে বাধ্য। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সমস্যা হল ওজন বেড়ে যাওয়া।


অনাহার—জনপ্রিয় সিনেমার ডায়লগ যে এই পর্যায়ে ইনভ্যালিড তা কিন্তু মেনে নিতেই হবে। সমীক্ষায় জানা গেছে ওজন বেড়ে যাবার ভয়ে যারা খাবার খেতে চাননা, শরীরে উপযুক্ত ভিটামিনের অভাবে তাঁদের চামড়ার তলায় চর্বি জমার সম্ভাবনা থাকে অনেকটাই বেশি। আবার লো-ফ্যাট খাবারের উপর ভিত্তি করে জীবনযাপনের চেষ্টা করলে তখনও ওজন আচমকা বেড়ে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশি। ফলে বেশি খেলে নয়, বরং মেদ কিন্তু অনাহারেই বেশি বাড়ে।

ওজন


অবসাদ—মনের দুখে মানুষের শরীর শুকিয়ে যাবার কথা তো ঠাকুমা-দিদিমাদের মুখে হামেশাই শুনেছি। কিন্তু মনে আনন্দের ঘাটতি দেখা দিলে তা যে শরীরে মেদ জমিয়ে দেয়, তা কে কবে জানতে পেরেছিল! হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে অবসাদে ভুগতে থাকা মানুষের শরীরে মেদের আধিক্য দেখা যায়। ডিপ্রেশনে মানুষের জীবনীশক্তি ক্ষয় পেতে থাকে, ফলে শরীরেড় নড়াচড়া অনেকখানি কমে যায়, মোটা হওয়া একরকম অনিবার্য হয়ে পড়ে।


হরমোনাল সমস্যা—শরীরে বিভিন্ন হরমোনের অনুপাতে তারতম্য হলেও কিন্তু ওজন অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কোনও সম্পর্ক ই নেই। থাইরয়েড বা পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে জরুরি হরমোন নিঃসৃত না হবার ফলে চট করে ওজন অনেকটাই বেড়ে যায়। এই ধরনের সমস্যার শিকড় আমরা প্রথমে খুঁজে বের করতেই পারি না মাঝে মাঝে।


জিনগত সমস্যা—এই ধারণা বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই প্রচলিত যে ওজন বাড়ার পিছনে বংশের ধারার একটা প্রভাব রয়ে গিয়েছে। যে পরিবারে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন মানুষজনের মধ্যে সবার চেহারাই কিছুটা ভারি দেখা যায়, খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে এঁদের আগের প্রজন্মের লোকেরাও খুব রোগাপাতলা ছিলেন-এমনটা হওয়া অসম্ভব। ফলে মেদবৃদ্ধি যে বংশগত সমস্যা হতে পারে, এই কারণটাও মনে রাখা ভীষণ দরকার।


সুতরাং ওজন বাড়ার সমস্যাকে প্রথমেই খাবার খাওয়ার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে ভোজনরসিক মানুষদের বেকায়দায় ফেলবার দিন কিন্তু শেষ! কম কম খেলেও এরকম নানান কারণে মানুষের ওজন বেড়ে যেতেই পারে। ফলে এখন থেকে আস্তে আস্তে এই ধরনের শারীরিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই হবে মুশকিল আসান।

ওজন বাড়ার কারণ হিসেবে কোনটা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে মনে হয় তোমাদের? উপরের এই কারণগুলো ছাড়া হঠাৎ করে মেদ বৃদ্ধির আর কোনও উল্লেখযোগ্য কারণ কি তোমরা কেউ জানো? তাহলে চটপট লিখে ফ্যালো আমাদের কমেন্ট সেকশনে।





1 COMMENT

  1. […] স্ট্রবেরিতে রয়েছে ভিটামিন সি। এই ফলটিকে তো আমরা সবাই চিনি। অথচ অনেকেই জানি না যে এটা দাঁতে ঘষলে দাঁত থাকে পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও ঝকঝকে। দিনে একবার অন্তত একটি স্ট্রবেরি দুতিনফালি করে কেটে নিয়ে দাঁতে আর মাড়িতে ঘষলে দাঁতের হলদে নিষ্প্রাণ ভাব দূর হয়ে যায় খুব সহজেই। […]