শাড়ির সাথে বাঙালীর সম্পর্ক চিরন্তন। আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে মেয়েরা যতই জিন্স টপ পরুক না কেন এখনো কোন অনুষ্ঠানে বা বিশেষ দিনে শাড়ি পরা চাই ই চাই। শাড়ি বাঙালীর কাছে শুধু পোশাক হয় একটা ইমোশান ছোট বেলায় লুকিয়ে মায়ের শাড়ি পরা কিংবা শাড়ি পড়ে প্রথমবার সরস্বতী পূজোর অঞ্জলি  দেওয়ার অভিজ্ঞতা, এমনই অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকে বাঙালীর শাড়ির সাথে।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ট্রাডিশানাল ১৮টি শাড়ি যা দেখতে মিস করবেন না
DusBus

আর শাড়ি মানেই চাই ভালো কালেকশন। বাংলার তাঁতের শাড়ি থেকে বেনারসী বঙ্গ নারীদের ওয়াড্রপে এদের উপস্থিতি শোভা দিগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমরা অনেকে শাড়ি পরতে ভালবাসলেও শাড়ির ধরণ বা বৈচিত্র সম্পর্কে তেমন অবগত নই। তাই আজ আমরা বাংলার কিছু বিখ্যাত শাড়ির সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-  

আকর্ষণীয় ফ্যান্সি শাড়ি কালেকশন ২০টি
DusBus

১) তাঁত-

একটি তাঁতের শাড়ি প্রায় সময়ে দড়ি, কাঠের মরীচি এবং খুঁটি দিয়ে তৈরি শাটল-পিট তাঁতে বোনা হয়। তাঁতের শাড়ি আকারে এবং মানের দিক থেকে বিভিন্ন হতে পারে। সুপরিচিত ভারতীয় তাঁত শাড়ির কিছু  ধরণ যেমন- কাঞ্চিপুরম, সিল্ক শাড়ি, মহেশ্বরী শাড়ি, বাগ মুদ্রণ শাড়ি, চান্দেরী সিল্ক শাড়ি, তসর, সিল্ক শাড়ি, বেনারসি, হাফ সিল্ক শাড়ি, বালুচরি শাড়ি, সাম্বালপুরি শাড়ি, কাঁথা সেলাই শাড়ি, ভাধিনি শাড়ি এবং মুঙ্গা শাড়ি। ঝলমলে চেহারা দেওয়ার জন্য হস্তচালিত তাঁতের  শাড়িগুলো ভাল মানের সিল্ক দিয়ে তৈরি করা হয়।

Bartaman Patrika
Bartaman Patrika

২) শান্তিপুরী

শান্তিপুরী শাড়ির বিশেষত্ব হল এই শাড়ির পাড়। তাঁতিরা বুননের মাধ্যমে শাড়ির পাড়ে বিভিন্নধর্মী নক্সার সৃষ্টি করে যেমন- ফুল, জ্যামিতিক আকৃতি। এছাড়াও বিভিন্ন পৌরানিক ঘটনাবলী, মন্দির এর নক্সা শাড়ির আঁচলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। শাড়ির জমি অনেক সময় নক্সা ছাড়া আবার অনেক সময় বুটি যুক্ত দেখা যায়। শাড়ির পাড়ে সাধারনতঃ যে সকল নক্সা দেখা যায় তা হল-

Off White Handloom Saree with embroidered blouse from Laksyah  www.yarnstyles.com | Set saree, Indian fashion saree, Kerala saree blouse  designs
pinterest

গঙ্গা যমুনা – এই ধরনের পাড়ের দু’দিকে দুটি ভিন্ন রঙ এর পাড় দেখা যায়।

বেংকিপা – এই ধরনের পাড়ে জরি এবং মুগা সুতোর কাজ দেখা যায়।

ভোমরা – এই ধরনের পাড়ে নামকরণ মৌমাছি থেকে আগত। এই পাড়ে তুঁতে, কালো, লাল এবং চকোলেট রঙ এর আধিক্য দেখা যায়।

রাজমহল – এই ধরনের পাড়ে রুইতন এর নক্সা দেখা যায়।

Shantipuri — Biswa Bangla
biswa bangla

আঁশ পাড় – এই ধরনের পাড়ে মাছের আঁশের মতো নক্সা দেখা যায়। যাতে সোনালি এবং রুপোলী রঙ এর জরির কাজ করা থাকে।

চান্দমালা – এই ধরনের পাড়ে গোলাকার সোনালী বর্নের নক্সা দেখা যায়। চাঁদ এর অনুসারে এই চান্দমালা নামকরণ হয়েছে।

বৃন্দাবনি ময়ূর পাড় – এই পাড়ে এক জোড়া ময়ূর দেখা যায়।

এই শান্তিপুরী শাড়িকে যে ভাবে ভাঁজ করে বাইরে বিক্রয় করা হয়, তাকে গুটি ভাঁজ বলে।

Buy Santipur Saree Renowned Bengal Handloom
shoppingkart24

৩) ধনেখালি

ধনেখালি বা ধনিয়াখালি শাড়ি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত শাড়ি। হুগলি জেলার ধনেখালি অঞ্চলে এই শাড়ি প্রথম তৈরি হয়। সম্প্রতি এই শাড়ি জি আই ট্যাগ পেয়েছে । ১০০ বাই ১০০ সুতোর কাউন্টের জমিন করা হয় এই শাড়িতে।  সাধারণত দেড় থেকে দুই ইঞ্চি চওড়া পাড় হয়। ঐতিহ্য মেনে  এই শাড়ির জমিনের বর্ণ ধূসর। পাড়ের অংশটি সরু হয় এবং পাড়ের রং হয় লাল বা কালো।

Buy Dhaniakhali Fish Motif Cotton Matsya Saree
mayasha

৪) মসলিন

মসলিন বিশেষ এক প্রকার তুলার আঁশ থেকে প্রস্তুতকৃত সূত দিয়ে বয়ন করা এক প্রকারের অতি সূক্ষ্ম কাপড়বিশেষ। এটি ঢাকাই মসলিন নামেও সুপরিচিত। মসলিন প্রস্তুত করা হত পূর্ব বাংলার সোনারগাঁও অঞ্চলে। কথিত আছে যে মসলিনে তৈরি করা পোশাকসমূহ এতই সুক্ষ্ম ছিল যে ৫০ মিটার দীর্ঘ মসলিনের কাপড়কে একটি দিয়াশলাই বাক্সে ভরে রাখা যেত। বর্তমানে বাজারে যে ধরণের মসলিন দেখতে পাওয়া যায় তা সিল্কের মত রেশমি সুত দিয়ে বিশেষ উপায়ে অত্যন্ত সুক্ষভাবে তৈরি করা হয়। ফ্যাশনের জগতে এই মসলিনের অবদান অনেক। মসলিন খুব পাতলা ও ফুরফুরে হওয়ায় গরমে উৎসবের পোশাক হিসাবে মসলিনের জুরি নেই। এতে নেই সিল্কের চাকচিক্য যা গরমে অস্বস্তি আনবে আবার সুতির কাপড়ের মত সাদামাটা ভাবটাও নেই। তাই অনুষ্ঠান হোক বা উৎসব সবেতেই অনায়াসে পড়তে পারেন মসলিন।

Pure Muslin Sarees - Shop Latest Muslin Silk Sarees New Patterns 2018 –  Dailybuyys
Dailybuyss

৫) জামদানি

জামদানি শাড়ি কেনার আগে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে – শাড়ির দাম, সূতার মান এবং কাজের সূক্ষ্মতা।

আসল জামদানি শাড়ি তাঁতিরা হাতে বুনন করেন বলে এগুলো তৈরি করা অনেক কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। তাই এগুলোর দামও অন্যান্য শাড়ির তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

পিওর ঢাকাই জামদানী শাড়ি কালেকশন।।Pure Dhakai Jamdani saree collection.. -  YouTube
Youtube

একটি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে দুইজন কারিগর যদি প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা শ্রম দেন, তাহলে ডিজাইন ভেদে পুরো শাড়ি তৈরি হতে সাত দিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

সাধারণত শাড়ি তৈরির সময়, সূতার মান ও কাজের সূক্ষ্মতা বিবেচনায় একটি জামদানির দাম ৩,০০০ টাকা থেকে এক লাখ ২০,০০০ টাকা কিংবা তারচেয়েও বেশি হতে পারে।

কিন্তু মেশিনে বোনা শাড়িতে তেমন সময় বা শ্রম দিতে হয় না। এজন্য দামও তুলনামূলক অনেক কম।

জামদানি শাড়ি হাতে বোনা হওয়ায়, শাড়ির ডিজাইন হয় খুব সূক্ষ্ম এবং নিখুঁত। ডিজাইনগুলো হয় মসৃণ।

জামদানি শাড়ি চেনার উপায়, যেভাবে চিনবেন জামদানি শাড়ি | Feeglee
freeglee

কারিগর প্রতিটি সুতো হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বুনন করেন। সূতার কোন অংশ বের হয়ে থাকে না। এ কারণে জামদানি শাড়ির কোনটা সামনের অংশ আর কোনটা ভেতরের অংশ, তা পার্থক্য করা বেশ কঠিন।

তাহলে জেনে নিলেন বাংলার বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী শাড়ির সম্পর্কে না জানা কিছু তথ্য যা হয়ত ভবিষ্যতে আপনার পছন্দের শাড়ি কিনতে অনেকটাই সাহায্য করবে।