সাবানের স্থান স্নানঘরে। আমাকে সবার থেকে আলাদা করা যাবে, আমার রূপের প্রসংশা করবে এই বিষয়গুলি মুখে না বললেও সকলেরই সুপ্ত বাসনা যা তাঁদের চোঁখে স্পষ্ট ফুটে ওঠে, কারন চোখ কথা বলে।   ত্বক হবে  সুন্দর,  মূলায়ম, ঝকঝকে তাহলেই তো সকলের নজরে আসা যাবে। কিন্তু যদি দেখা যায় তাহলে, যেমন ভাবছেন তার প্রতিচ্ছবি সম্পুর্ন আলাদা হচ্ছে তাহলে তো চিন্তার বিষয়।  আমরা যেমন নিয়মিত শরীরের   আভ্যন্তরীণ যত্ন নিয়ে থাকিএ ঠিক তেমনি আমাদের    বাইরের  অংশের যত্ন নেওয়াও সমানভাবে প্রয়োজন। নিজেকে সুন্দর, আর পরিপাটি করে তোলার প্রয়াস মানুষের আদিকাল থেকেই। প্রাচীনকালের মানুষ মুলতানি মাটি, চন্দনের মতো প্রাকৃতিক সব উপাদান ব্যবহার করেই নিজের ত্বকের যত্ন নিত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যেমন মানুষের গতিবিধি, জীবনযাত্রা পাল্টেছে সেখানে মুলতানি মাটি, চন্দনের কাঁচা ব্যবহারও পাল্টাবে তা নিতান্ত্য সহজ গননা। যদিও কাঁচা উপাদানের  বিবর্তন ঘটেছে  সাবানের রূপে।

সাবান
Bustle

সকল বিষয়েরই যে যেমন ব্যাতিক্রম থাকে সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তা রয়েছে। আমরা আমাদের ত্বকের জৌলুস, মাধুর্য্য বজায় রাখার জন্য যে সাবানের ব্যবহার করে থাকি তা সম্বন্ধে আমরা বিন্দু বিসর্গ খোঁজ নি না। চাকচিক্য বিজ্ঞাপনের লোভে পড়ে আমরা তা কিনে ফেলি কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় আমরা যে কোন সাবান নিজেদের ত্বকের মাপকাঠি না জেনেই ব্যবহার করে থাকি এর ফলে আমাদের ত্বকের অনেক  ক্ষতি হয় । কারন যে কোন সাবান  যে কোন ত্বকের জন্য নয় তার মধ্যে সীমাবদ্ধতা আছে। সমীক্ষা করলে এমন অনেকের সন্ধান পাওয়া যাবে যারা  নিজেরাই  ত্বকের ধরন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল  নয়।  তো আজ দেখে নেব কোন সাবান কোন ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

  আমাদের  ত্বক কত ধরনের ?

সচরাচর চার ধরনের হয়ে থাকে :

কোন স্কিন টাইপে কোন সাবান উপযোগী  ?  

সাধারণ ত্বক ( Normal skin)

 এই ধরনের  ত্বকে   তেমন কোনো  গুরুতর সমস্যা দেখা  যায় না। বলা যায় ফ্রেন্ডলি ত্বক, যে কোন উপাদান যুক্ত সাবানের সাথে নিজেদের মানিয়ে তোলে।    যারা এই ত্বক অধিকারী  তারা সবথেকে চিন্তা মুক্ত।  সচারাচর  এই ধরনের স্কিন টাইপে ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়া এই ধরনের রোগ বিশেষের দেখা মেলে না।  তাই যেকোনো ধরনের সাবান ত্বকের জন্য উপযোগী।

তৈলাক্ত ত্বক ( oily skin )

 যেসব  মানুষ এই ত্বকের অধিকারী হয়  প্রায়ই তাদের কপাল চিন্তা ভাঁজ থাকে। সর্বক্ষন তাদের ত্বক অত্যন্ত তৈলাক্ত হয়।  আর  এই  তৈলাক্ততার কারনে  ব্রণের উৎপত্তি ঘটে যখন তখন । শুধু তাই নয় সারাক্ষণ মুখের তৈলাক্ত ভাব থাকার ফলে সৌন্দর্যের দিক থেকেও  ভাঁটা পড়ে । চিপচিপে ভাব,জামা কাপড় থেকে দুর্গন্ধ হয় আর জন্য মনে  হয় তেলের ডিপো থেকে বার হয়েছে। তাই যাদের অত্যন্ত তেলতেলে ত্বক  অবশ্যই প্রতিদিন সাবান  দিয়ে স্নান জরুরি কিন্তু ধ্যান রাখতে হবে তাই বলে যে কোন সাবান নয় । অল্প   ক্ষারযুক্ত ,অ্যালোভেরা, চন্দন,  হলুদ, দুধ , কমলালেবু নির্যাস, শসার রস যুক্ত,  লেবুর নির্যাস, গোলাপের পাপড়ি যুক্ত সাবান অত্যন্ত উপকারী এই ধরনের ত্বকের জন্য।  এছাড়াও    মেডিকেটেড সাবান ও  ব্যাকটেরিয়া নাশক সাবানও ব্যবহারযোগ্য।

শুষ্ক ত্বক ( Dry skin )

   শীত গ্রীষ্ম বর্ষা কোন   কালই   বাদ  পড়ে না শুষ্ক  ত্বকের ফাটাজনিত সমস্যার হাত থেকে। আদ্রতা হালকা নিম্নমুখী হলেই ত্বকে টানের অনুভব শুরু। এছাড়াও  যেকোনো আদ্রতাতেই এদের ত্বক বরাবর রুক্ষ থাকে। তার জন্য যতই  রূপ ও শরীরচর্চার পিছনে টাকা ঢালা হোক না কেন সব পয়সাই জলে।  আর তার  ওপর যদি কোনো ভুল উপাদানের সাবান  ব্যবহার করা  তাহলে আর রক্ষে নেই। তাই রুক্ষ ত্বকের জন্য উপযুক্ত গ্লিসারিন, চন্দন,  নিম, ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম যুক্ত ,  চারকোল যুক্ত, নারকেল তেল,  আমন্ড অয়েল অলিভ অয়েল যুক্ত সাবানের ব্যবহার  যুক্তিযুক্ত।  এই জাতীয় ত্বকের কোষ শুষ্ক হয় যার ফলে মৃতকোষ জন্ম নেয় কিন্তু এইসকল উপাদানমিশ্রিত সাবানের ব্যবহার মৃতকোষকে মেরামত করে নতুন কোষের জন্ম দেয় এবং ত্বকের আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।  

সংবেদনশীল ত্বক ( Sensetive skin )

একপ্রকার বলাই যায় এদের শরীর অনেকটা ননীর মত।  উনিশ থেকে বিষ  হলেই এলার্জি, র‍্যাশ, লালছে ছোপ, অ্যালার্জি লেগেই থাকে।  আমারদের ত্বকের অনেকগুলো স্তর থাকে, সবচেয়ে বাইরে যে স্তরটি থাকে তাকে ‘এপিডারমিস’ বলা হয় যা স্কিনকে প্রটেক্ট করে রাখে। যখন এই এপিডারমিস ড্যামেজ হয় তখন স্কিন সেনসিটিভ হতে আরম্ভ করে, কারন ধুলো, ময়লা, ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি, দূষণ ইত্যাদি থেকে ত্বককে রক্ষা করা সম্ভব হয়না। এই ব্যতীত আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়ে, বেশিক্ষন রোদে থাকলে কিম্বা বেশি মেকআপ ব্যাবহার করলেও ত্বকের সেন্সিটিভিটি বেড়ে যায় আর তখন স্কিনে র‍্যাশ, ফুসকুড়ি আর ইচিং-এর মতো নানাবিধ সমস্যা শুরু হয়ে যায়। তাই এই সকল ত্বকের জন্য বাছাই করা সাবান যুক্তিযুক্ত।  মধু , দুধ,  ল্যাভেন্ডার অয়েল, শিয়া বাটার ভিটামিন ই,  জোজোবা অয়েল উপাদানের দ্বারা তৈরি সাবান এই জাতীয় স্কিনের জন্য উপকারী।

তো আপনার স্কিন টাইপ কেমন? কি ধরনের সাবান আপনি ব্যবহার করেন। সর্বদা নিজের স্কিন টাইপ পরীক্ষা করে সেই স্কিনের জন্য উপাকারী সাবান ব্যবহার করবেন। দরকার হলে স্কিন স্পেশালিষ্টের সাথে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন আপনার স্কিন আপনার অহংকার তার সঠিক যত্ন নেওয়া আপনার দ্বায়িত্ব।