দাদু, ঠাকুমার থেকে শোনা কথা অনুযায়ী, অন্ধকার বাঁশবন অর্থেই তাতে ভূত থাকা বাধ্যতামূলক। সেকালে নাকি গ্রাম, শহরের আনাচেকানাচে ছড়িয়েছিল ভূতেদের দল। কেউ ঘন সন্ধ্যায় বাইরে গেলেই তার পিছনে কেউ হাঁটে, কেউ যেন হঠাৎ ফিক করে হেসে ওঠে। সেকালে ভূতেদের সাদা কাপড় পড়তে হতো, চোখও হতো লাল। কচিকাঁচার দল পড়তে না বসলে, কারেন্ট চলে গেলে, কেউ রাতে মাছ নিয়ে গেলে তাকে অবশ্যই পড়তে হতো ভয়ঙ্কর বিপদে।গেছো, মেছো, শাকচুন্নিদের ভিড়ে বড় হয়ে ওঠা বাবা, দাদুদের কাছে রাত হলেই গল্প শুনতাম আমরা।
ধীরে ধীরে ভূতেদের বিবর্তন হলো অনেকটা। বিবর্তনের অধিকাংশটা সিনেমা থেকেই এসেছে বলা চলে। শোনা যায়, ১৯৭৩ সালে রিলিজ হওয়া ‘The Exorcist’ ছবিটির পরিচালক William Friedkin সিনেমার রিলিজের পর কেউ তা হলে একা দেখতে পারলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়াও ‘A nightmare on Elm street’, ‘The Shining’, ‘ The Conuring’ এর মতো সিনেমাগুলো এই বিবর্তনের মাঝে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কোনও জায়গায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা, মৃত্যুর পর অনেকের মতে সে জায়গায় গা ছমছম করে, রাত হলেই ভয় হয়।
মানুষ পরবর্তীতে ইন্টারনেটের সুবাদে অনেকটা জ্ঞান আহরণ করেছে। এ সময়ে ভারতে গঠন হয় ‘IPS'(Indian Paranormal Society)। এর মূল কর্ণধার গৌরব তিওয়ারির হাত ধরে ভারতে উঠে এসেছে বহু ghost hunter। গৌরব তিওয়ারির আকস্মিক মৃত্যু আজও রহস্যময়। আজ পৃথিবীর সকল প্রান্তে রয়েছে অসংখ্য paranormal investigator। বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে তাদের ব্লগ ও ভিডিও দেখা যায়। এ সময়ের ভূতেরা সাদা শাড়ি ছেড়েছে, বাঁশবন ছেড়েছে, আশ্রয় নিয়েছে কোনও পুরোনো বাড়ি, হাসপাতাল কিমবা কোনও চিলেকোঠায়।
সোশ্যাল সাইটগুলোতে আজও লড়াই চলে ভূত আছে কি নেই তা নিয়ে। একদলের কথায় মানুষের অন্ধবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ এটি, অথচ অপর দলের কথায়, সে কে, যে রোজ রাতে ছাদে হেঁটে বেড়ায়, জানলায় টোকা দেয়। এই লড়াই চলতেই থাকবে, কিছু লড়াই কোনওদিন শেষ হয় না। আসলে আমরা ভয় পেতে ভালবাসি, আর বাঙালি মাত্রই সে রোমাঞ্চ প্রিয়। ভূতেদের আরও হয়তো বিবর্তন হতে থাকবে, তবু হঠাৎ কোনওদিন রাত্রিবেলায় ঘাড়ে কারোর নিশ্বাস পড়লে আপনি ভয় পাবেন না তো?
Shundor ❤️ Egiye jao.