ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? কি করে এর ব্যবহার হয়? এর মুল্য কত? ভারতে কি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা যায়? অনেকেই এই প্রশ্ন গুলির উত্তর চান । আমি এখানে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রাথমিক জিনিষ গুলি বোঝাবার চেস্টা করব ।
এখন অনেক রকম ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু আছে । তার মধ্যে সবচেয়ে নাম করা হল বিটকয়েন ।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি?
১) ক্রিপ্টোকারেন্সি আর এক ধরনের টাকা যা দিয়ে আপনি কেনাবেচা বা বিনিময় বা লেনদেন করতে পারেন | কিন্তু এটি ডিজিটাল বা এর উপস্থিতি কেবল ইলেক্ট্রনিক বা কম্পিউটারের মধ্যে |
২) অন্য সব টাকার মত কোনো সরকারী বা ব্যাঙ্কিং কর্তৃপক্ষ একে নিয়ন্ত্রন করেন না |
৩) আপনি একে সারা বিশ্বে ব্যবহার করতে পারেন | পুরো ব্যাপারটাই একটি সারা পৃথিবী তে ছড়িয়ে থাকা নেটওয়ার্ক দ্বারা পরিচালিত | এই নেটওয়ার্ক এর প্রত্যেকটি কম্পিউটার ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের হিসেব রাখেন ও তার বৈধতা পরীক্ষা করেন | নেটওয়ার্ক decentralized অর্থাৎ বিকেন্দ্রীভূত, যা কোনো একটি লোক বা কর্তৃপক্ষর দ্বারা পরিচালিত নয় । ইচ্ছে করলে যে কেউ এই নেটওয়ার্ক এ অংশ নিতে পারে। আর একটি ব্যাপার হল নেটওয়ার্কের প্রত্যেকটি কম্পিউটারএর ক্ষমতা ও অধিকার সমান, যাকে peer to peer network বলা হয়|
৪) ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রত্যেকটি লেনদেন encrypted | অর্থাৎ এটিকে অত্যন্ত কঠিন একটি গাণিতিক ধাঁধার দ্বারা সুরক্ষিত । এই ধাঁধার উত্তর বের করতে পারে কেবল নেটওয়ার্কের বড় বড় কম্পিউটার গুলি । তার ফলে লেনদেন সুরক্ষিত থাকে এবং হ্যাকিং করা অসাধ্য হয়ে ওঠে। বিটকয়েন SHA-256 ব্যবহার করে যা United States National Security Agency দ্বারা উদ্ভাবিত |
৫) ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন এর জন্যে একটি অ্যাকাউন্ট রাখতে হয় । প্রত্যেকটি সঙ্গে থাকে একটি ওয়ালেট। ওয়ালেটে থাকে দুটি চাবি । একটি নিজের প্রাইভেট key ও অপরটি সকলের জন্য অর্থাৎ পাবলিক key । ধরুন আপনি ক কে ১০টি বিটকয়েন (এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি) পাঠাতে চান । আপনাকে আপনার নিজের অ্যাকাউন্ট নম্বর, যাকে পাঠাচ্ছেন তাঁর, অ্যাকাউন্ট নম্বর, ও কটি বিটকয়েন (এক্ষেত্রে ১০ ) পাঠাতে চান সেই সংখ্যা | এবার আপনি সেই তথ্য আপনার encrypted প্রাইভেট চাবি (key) দিয়ে সাইন করে নেটওয়ার্কে জানাবেন | আপনার পাবলিক key পরীক্ষা করে সবাই এই তথ্য গুলির একটি রেকর্ড রাখবে ও যাচাই করবে | মানে আপনার হাতে সত্যি ১০ টি বিটকয়েন আছে কিনা দেবার মত | সব ঠিক থাকলে লেনদেন ঘটে |
৬) পরীক্ষা করে তা সব ঠিক থাকলে তা একটি ব্লকে রেকর্ড করা হয় | এক্ষেত্রে ব্লক মানে হলো কয়েকটি লেন দেনের একটি সেট | প্রত্যকেটি ব্লকে প্রত্যকেটি লেনদেনের বিশদ লেজার এর মত করে লেখা | অনেকগুলি ব্লক কে পরপর একটানা ধারাবাহিক ভাবে জোড়া দিলে হয় ব্লকচেন (Blockchain) |
৭) লেনদেন টি ব্লকে ঢোকানোর আগে কম্পিউটার কে একটি encryption problem বা গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে হয় | নেটওয়ার্কের বহু কম্পিটারের মধ্যে যে কম্পিউটার সব চেয়ে আগে এই সমস্যা সমাধান করতে পারে সে ব্লকে রেকর্ড এন্ট্রি করে | এবং সেটা নেটওয়ার্কের অন্য সকলকে জানায় | অন্য কম্পিউটার গুলি তখন সে গুলি চেক করে | চেক করে সবাই ঠিক বললে তা তখন ব্লকে যায় | একে বলে প্রুফ অফ ওয়ার্ক |
৮) প্রুফ অফ ওয়ার্ক ঠিক হলে প্রথম যে জন গাণিতিক সমস্যাটি সমাধান করেছে পায় কয়েকটি নতুন বিটকয়েন | এই ভাবে করতে করতে তার বেশ কিছু বিটকয়েন | বড়সড় কম্পিটারে কঠিন এনক্রিপশন সমাধানের এই তার প্রাপ্তি | এদের বলা হয় মাইনার্স (miners) |
৯) বর্তমানে একটি বিটকয়েন এর দাম ১৭,৩৪৪.৩০ US$ বা ১২,৮০,৯৭১ টাকা | অথচ ২০০৯ সালে এর আরম্ভের এর মূল্য প্রায় কিছুই ছিল না | তাই বিটকয়েন জমানো যে লাভদায়ক তা বলাই বাহুল্য |

ক্রিপ্টোকারেন্সির সুবিধে :
১) কম খরচ: ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনে খরচা অনেক কম কারণ ব্যাঙ্ক জাতীয় কোনো মধ্যস্থ কারীকে লেনদেনের জন্যে টাকা দিতে হয় না |
২) দ্রুত ও নিরাপদ: ব্যাঙ্কের সাহায্যে অন্য দেশে টাকা লেনদেন করতে অনেক সময় লাগে | কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২- ৩ দিন | ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কয়েক মিনিটেই সেটা করা যায় | এনক্রিপশন থাকার জন্যে টাকা নিরাপদ থাকে | হ্যাকিন্গের ফলে টাকা চুরি হবার ভয় খুব কম | ব্যাঙ্কের কোনো টেকনিকাল ব্যাপার মানে সিস্টেম কাজ না করলে লেনদেন বন্ধ হবার সম্ভাবনা নেই | লেনদেনের কোনো উর্দ্ধ সীমা রেখাও নেই |
৩) গোপনীয়তা : এক জনের যত খুশি ওয়ালেট থাকতে পারে এবং তা শুধু আপনিই জানবেন | আপনি কাকে কত ক্রিপ্টোকারেন্সি দিচ্ছেন বা নিচ্ছেন তাও কেবল আপনি জানবেন | তাই আপনার কাছে কত টাকা আছে অন্য কেউ জানবে না |
৪) ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো সরকার বা ব্যাঙ্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় : যেহেতু কোনো ব্যাঙ্ক বা সরকারের অধীন নয় তাই এটা কে সরকার বা ব্যান্ক এই টাকাকে বাজেয়াপ্ত করতে পারে না এই টাকার লেনদেন নিয়ন্ত্রন করতে পারে না |
৫) সব জায়গায় চলে : এই টাকা প্রথিবীর যে কোনো প্রান্তে ব্যবহার করা যায় | এর মধ্যে কোনো exchange rate বা interest rate না থাকায় সব জায়গায় সমভাবে চলে ও অর্থ ও সময়ের অনেক সাশ্রয় হয় |
ক্রিপ্টোকারেন্সির অসুবিধে
১) দাম দ্রুত ওঠানামা : এর দাম খুব তাড়াতাড়ি ওঠানামা করে | ফলে অনেক সময় চট করে ক্ষতি হতে পারে|
২) অপরাধী রা ব্যবহার করে সুযোগ নিতে পারে : অপরাধীরা খুব সহজেই গা ঢাকা দিয়ে এর ব্যবহার পারে | আতঙ্ক বাদীরা এই টাকা ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারে |
৩) টাকা ফেরানো যায় না : ভুল করে লেনদেন করলে সেটা ঠিক করার কোনো উপায় নেই |
৪) নিরাপত্তা : ব্যাঙ্কের টাকা কোনো ভাবে হ্যাকিং হলে ব্যান্ক সেক্ষত্রে কিছুটা নিরাপত্তা দিতে পারে | কিন্তু এক্ষেত্রে টাকা গেলে পুরোটাই গেল | আর কারূর কোনো দায় নেই |
৫) ভালো জ্ঞাণ থাকা দরকার : ভালো করে সব না জেনে এতে টাকা ঢাললে প্রচুর ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে|
ভারত সরকার দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সিকেবন্ধ করার জন্যে আইন আনার চেষ্টা করছেন | সুতরাং এই দিকে ঝোঁক বার আগে ভালো করে ভেবে দেখা দরকার |
আরো পড়ুন : অনলাইন রোমান্স