দীপান্বিতা অমাবস্যারর আগের দিন,চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয় ভূত-চতুর্দশী। হিন্দু শাস্ত্র মতে এই দিনটিতে সন্ধ্যাবেলায় বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং দুপুরবেলায় ১৪ রকম শাক খাওয়া হয়।
কেন পালিত হয় ভূত চতুর্দশী?

অনেকের মতে চতুর্দশী তিথিতে এই দুটি নিয়ম পালন করার পেছনে প্রচলিত বিশ্বাস হলো, এই দিনটি চোদ্দপুরুষ কে উৎসর্গ করা হয়। এই বিশেষ দিনে পূর্বপুরুষরা মর্তে আসেন।প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এই চৌদ্দ পুরুষ জল, মাটি, বাতাস,অগ্নির সাথে মিশে রয়েছেন আর এই জন্যই মূলত মাঠের মধ্যে জন্মানো শাক খেয়ে পূর্বপুরুষ কে উৎসর্গ করা হয় ভূতচতুর্দশীর দিনটি।
আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী কথিত আছে দানবরাজ বলি _যার অত্যাচারে একসময় স্বর্গ-মর্ত-পাতাল এর অধিবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এবং স্বয়ং বিষ্ণু বামনের অবতারে তাকে পরাজিত করে, সেই রাক্ষসরাজ বলি বিষ্ণুর কৃপায় বছরের একটি দিন পাতাল লোক থেকে তাঁর প্রেত সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে মর্তে আগমন করেন, সেই তিথিতে পালিত হয় ভূত চতুর্দশী। এই প্রেতদের হাত থেকে বাঁচতে প্রদীপ জ্বালানো এবং চোদ্দ শাক খাওয়ার রেওয়াজ প্রচলিত রয়েছে।
কোন শাকগুলি ভূত চতুর্দশী তে খাওয়া হয়?

১। ওল ২। কেঁও ৩। বেতো ৪। সর্ষে ৫। কালকাসুন্দে
৬। জয়ন্তী ৭। নিম ৮। হেলঞ্চা ৯। শাঞ্চে ১০। গুলঞ্চ
১১। পলতা ১২। ভাঁটপাতা ১৩। শুলফা ১৪। শুষণী
চোদ্দ শাক খাওয়া পেছনে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। বৈজ্ঞানিকদের মতে ঋতু পরিবর্তনের কারণে এই সময় নানা ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। চোদ্দ শাক খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
দেখে নেওয়া যাক এই চৌদ্দ শাকের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গুলি কি কিঃ

ওল শাক চর্মরোগ, রক্ত আমাশা ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে।
কেঁও শাক কৃমিনাশক এবং হজমকারক। বেতো শাক কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্বল প্রতিরোধক।
কালকাসুন্দা শাক অ্যান্টি অ্যালার্জিক, হুপিং কাশি ইত্যাদি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
নিম কুষ্ঠ সহ যেকোনো চর্মরোগ, জন্ডিস, বহুমূত্র ইত্যাদি রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সরিষা শাক মানবদেহের চামড়া এবং চোখের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।
শাঞ্চে শাক ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে পরিচিত।
জয়ন্তী শাক উদারাময়, বহুমূত্র,শ্বেতী,জ্বর ইত্যাদির বিরুদ্ধে কার্যকরী।
গুলঞ্চ শাক বাত,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ভাট পাতা ক্যান্সার দমনে সহায়ক এছাড়াও কৃমি, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
হিঞ্চে শাক ভক্ষণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে এছাড়াও রক্তশোধক হিসেবে এর ব্যবহার অপরিসীম।
শুষনি শাক স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এটি নিদ্রাকারক, মেধা এবং স্মৃতিবর্ধক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
শুলফা শাক সেবনে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।
গ্রাম বাংলার প্রায় সব বাড়িতেই এখনও চতুর্দশীর দিন এই চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি বজায় রয়েছে। কিন্তু শহরে হয়তো সবসময় ইচ্ছা থাকলেও চোদ্দ শাকের যোগান পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা।তবুও আমাদের সকলেরই উচিত যথাসাধ্য চেষ্টা করে বাংলার এই ঐতিহ্যকে বজায় রাখা।
আরও পড়ুনঃ
https://banglakhabor.in/wp-admin/post.php?post=3813&action=edit
https://banglakhabor.in/wp-admin/post.php?post=3946&action=edit