নিজস্ব সংবাদদাতা- পথ বলে আমি দেব / রথ বলে আমি / মূর্তি ভাবে আমি দেব / হাসেন অন্তর্যামী…
অত্যন্ত জনপ্রিয় বাংলা কবিতার লাইন এবং প্রবাদ বাক্য। আয়ুষ্মান ভারত ও স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে ভোটের মুখে বাংলায় ঠিক এ রকমই অবস্থা তৈরি হয়েছে। একপক্ষ দাবি করছে স্বাস্থ্যসাথী ভালো, আর এক পক্ষের প্রশ্ন আয়ুষ্মান ভারতের সুযোগ থেকে কেন রাজ্যবাসীকে বঞ্চিত করা হল!

এই তরজার মহা ফ্যাসাদে পড়েছে রাজ্যের সাধারণ মানুষ। এদেশে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা নানা সময়ে নানা রকমভাবে ফ্রি হলেও বিনামূল্যে স্বাস্থ্য বীমার সুযোগ খুব একটা ছিল না। প্রায় একই সময়ে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প এবং আয়ুষ্মান ভারত পথ চলতে শুরু করে। আয়ুষ্মান ভারত কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের স্বাস্থ্য বীমা আর স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য রাজ্য সরকারের প্রদত্ত স্বাস্থ্য বীমা। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প সারা দেশের জন্য চালু করা হয়। সেই হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ বাসীর‌ও এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আরও বেশ কিছু বিষের মতো আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা নিতে চায়নি রাজ্যের তৃণমূল সরকার।

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অল্প কয়েকদিন আগে রাজ্যের চুক্তিভিত্তিক সরকারি কর্মচারী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প শুরু করে তৃণমূল সরকার। হালে এই প্রকল্পের অন্তর্গত করা হয়েছে রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে। যদিও আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প সমগ্র দেশবাসীর জন্য হলেও এর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু মানদণ্ড আছে, যেটা স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের ক্ষেত্রে নেই। কোটিপতি থেকে রাস্তার ভিখারি, রাজ্যের প্রতিটি মানুষ স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য।

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে সেই মানুষকে নিম্নআয়ের অন্তর্গত হতে হবে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে রাজ্যের ১০ কোটি মানুষের সবাই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অন্তর্গত হতে পারত না। বর্তমানে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সমালোচনা করতে গিয়ে তৃণমূলের নেতারা ঠিক এই যুক্তিটিকেই সামনে নিয়ে আসছেন। অন্যদিকে বিজেপি নেতা-কর্মীদের মুখে কেবল এক রা, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প রাজ্যে ঢুকতে না দিয়ে সাধারন মানুষকে বঞ্চিত করেছে রাজ্য সরকার।

এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অন্তর্গত যারা তারা তামিলনাড়ু হোক বা কাশ্মীর, যেখানে ইচ্ছা জরুরী প্রয়োজনে চিকিৎসা করাতে পারবে। এক্ষেত্রে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক বিশেষ সুবিধা পেত। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের ফলে নিম্নআয়ের মানুষ ছাড়াও নিম্ন মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সকলেই সরকারি স্বাস্থ্য বীমার সুযোগ পাচ্ছেন, যে সুবিধা আয়ুষ্মান ভারতে নেই।

সব দিক বিচার করে বলাই যায় রাজ্য সরকারের উচিত ছিল আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পকে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতে দেওয়া। এই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পের অন্তর্গত যারা হতো তাদের প্রসঙ্গ তো মিটেই গেল। কিন্তু যারা এই প্রকল্পের বাইরে থেকে যেতেন, তাদের জন্য রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধা দিতেই পারত। তাতে রাজ্য সরকারের ওপর আর্থিক বোঝা কিছুটা হলেও কম চাপত।