নিজস্ব সংবাদদাতা- দীর্ঘ কয়েক দশকের ঐতিহ্য শেষ হতে চলেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর নির্মলা সীতারামনের হাত ধরে। ব্রিটিশ আমল থেকেই ভারতের বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রীরা লাল কাপড়ে মোড়া একটি ব্রিফকেস নিয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশ করত। সেই ব্রিফকেসেই বাজেটের যাবতীয় নথিপত্র থাকত। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এবং প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযানে সামিল হতে অর্থমন্ত্রী এবার পেপারলেস বাজেট পেশ করবেন।

এতদিনের ঐতিহ্যমন্ডিত বাজেট ব্রিফকেসের জায়গা দখল করতে চলেছে ‘বাজেট ট্যাবলেট’। অর্থাৎ, পেপারলেস বাজেটের লক্ষ্যে এবারের বাজেটের যাবতীয় নথিপত্র ছাপার বদলে ডিজিটালি তৈরি করা হয়েছে। নির্মলা সীতারামন ট্যাবলেট দেখে বাজেট বক্তৃতা দেবেন। দেশের সমস্ত সাংসদ এবং জনগণের উদ্দেশ্যে ‘ইউনিয়ন বাজেট মোবাইল অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, এই অ্যাপের মধ্যেই তারা বাজেটের যাবতীয় বিস্তারিত নথিপত্র পেয়ে যাবেন।

আজ সকালে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে একটি লাল ভেলভেট কাপড়ে মোড়া ট্যাবলেট হাতে দেখা যায়। তাতে অশোক স্তম্ভ লাগানো আছে। সেই সঙ্গে তিনি ম্যাচিং করে মেরুন রঙের শাড়িও পড়েছিলেন।

২০২১ সালের বাজেটের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে দেশবাসী। করোনা মহামারীর পর এই প্রথম বাজেট পেশ হতে চলেছে। করোনা এবং তা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে দেশজুড়ে লকডাউনের ধাক্কায় ভারতের অর্থনীতি টালমাটাল। দীর্ঘদিন পর টানা ৯ মাস জুড়ে দেশের শিল্প উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান ক্রমশ নিচের দিকে। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বাজেটের মাধ্যমে দিশা দেখানোই আপাতত প্রধান চ্যালেঞ্জ নির্মলা সীতারামনের সামনে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন‌ও আছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে এই বাজেট কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির কাছেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নিজেই দাবি করেছেন তিনি এমন বাজেট পেশ করতে চলেছেন যা অতীতে কখনও দেশবাসী দেখেনি। তিনি বলেন, “এই বাজেটে সংস্কারের এমন দৃশ্য দেখানো হবে যা গত ১০০ বছরে এই দেশে হয়নি।” যদিও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে ব্যাপক সংস্কারের বদলে এই মুহূর্তে প্রয়োজন অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। মানুষকে সুরাহা দেওয়ার জন্য নাগরিকদের হাতে নগদ টাকার যোগান যেমন বাড়বে তেমনি ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধিই একমাত্র পারবে বাজারকে চাঙ্গা করতে। কেন্দ্রীয় সরকারের সেদিকেই মূল নজর দেওয়া উচিত বলে তাদের অভিমত।