কথায় আছে ‘ঢেঁকি নাকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে।’ তেমনি ভারতীয় রাজনীতিকরা বোধহয় সর্বক্ষেত্রে বিরোধিতা করার জন্যই পা বাড়িয়ে থাকেন! স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যখন প্রতিমুহূর্তে সতর্ক করে বলছেন করোনা থেকে রেহাই পেতে গেলে ভ্যাকসিন নেওয়া অতি প্রয়োজনীয়। তাই দেশের মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে কোনোরকম গুজব, অন্ধবিশ্বাস যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেইদিকে কড়া নজর রাখা জরুরি। অথচ এই যাবতীয় প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে এদেশের রাজনৈতিক নেতারা যে একাই ‘কাফি’ তা প্রমাণ করে দিলেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।
সবাইকে হতচকিত করে দিয়ে অখিলেশ আজ করোনা ভ্যাকসিনকে ‘বিজেপি ভ্যাকসিন’ বলে দাবি করেন। তার দাবি বিজেপির আমলে তৈরি হওয়া করোনা ভ্যাকসিনকে বিশ্বাস করা উচিত হবে না! কারণ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিজেপি নাকি যা কিছু করতে পারে। এরপরই জানিয়ে দেন ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই ভ্যাকসিন নেবেন না, ‘বয়কট’ করছেন!
এত কথার মধ্যে অখিলেশ যাদব অবশ্য রাজনীতির হিসাব-নিকাশ ঠিক মাথায় রেখেছিলে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন ২০২২ এর বিধানসভা নির্বাচনে তার দল জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসলে উত্তর প্রদেশের প্রতিটি মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে! এই সমাজবাদী নেতার দাবি অনুযায়ী তাহলে কি উত্তরপ্রদেশের প্রতিটা মানুষ ২০২২ সাল পর্যন্ত ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য প্রতীক্ষা করবে? এই প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
সবচেয়ে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন উত্তরপ্রদেশের মতো জাতপাত বিদীর্ণ একটি রাজ্যের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা যদি এরকম মন্তব্য করেন সে ক্ষেত্রে বেশকিছু মানুষ ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করতে পারেন। তারা মনে করতেই পারেন তাদের নেতা যেহেতু ভ্যাকসিন নিচ্ছেন না তাই তাদের ভ্যাকসিন না নেওয়াটাই সঠিক কাজ হবে! আর এই ঘটনা যদি বাস্তবে ঘটে তবে এই দেশ থেকে করোনা সংক্রমণ দূর করা কঠিন নয়, অসম্ভব হয়ে যাবে।
অখিলেশ যাদবের সমালোচনা করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য্যও অবশ্য রাজনীতি করতে ছাড়েননি। তিনি দাবি করেন উত্তরপ্রদেশের মানুষ অখিলেশ যাদবকে ভরসা করে না, তাই এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কি মন্তব্য করলেন তাতে তাদের কিছু যায় আসে না!
দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে বলা যায় রাজনীতিতে বিবাদ-বিসম্বাদ সবকিছুই থাকবে, কিন্তু ভ্যাকসিনের মতো অতি প্রয়োজনীয় এবং জরুরি একটি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লাভের চেষ্টা করাটা কি এতই প্রয়োজনীয়? দেশের রাজনৈতিক নেতারা আর কবে মানুষের কথা ভাববেন? এই কথাটা একটু ভেবে দেখবেন অখিলেশ যাদব কেশব প্রসাদ মৌর্য্যরা।