অন্যান্য অভ্যাসের ন্যায় ধূমপান একটি অভ্যাস। এই অভ্যাসটি যখন মানুষ আসক্ত হয়ে পরে তখন শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। এ কারণে এই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। কিন্তু যারা ধুমপানে আসক্ত হয়ে পড়ে তারা খুব সহজে এই অভ্যাসটি ত্যাগ করতে পারে না। এর কারন হল তামাকের মধ্যে থাকা নিকোটিন নামক একটি কেমিক্যাল যা মূলত এই নেশা সৃষ্টি করে।

মানবদেহেকে সতেজ রাখতে দেহের ভিতর এক ধরণের হরমোন নিঃসৃত হয়। নিয়মিত ধূমপান করে ধীরে ধীরে সেই হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তামাকের ওই নিকোটিন হরমোনের কাজটি করে থাকে। ফলে হুট করে ধূমপান বন্ধ করলে আপনার অস্বস্তি লাগবে, দুর্বলতা বোধ হবে। কারন দেহ থেকে সেই হরমোন নিঃসরণ ধূমপানের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই ধূমপান বন্ধ করার কিছু দিনের মধ্যে এই হরমোন আবার আগের মত নিঃসরণ হওয়া শুরু করবে। তাহলে চলুন জেনে নি জেনে নেই ধূমপান ছাড়ার সহজ কিছু কৌশল।
1) উপযুক্ত কারণ খুঁজে বের করুন:
ধূমপান ছাড়তে গেলে প্রথমেই কেন ধূমপান ছাড়তে চান, সেই কারণটা নিজেকে বোঝান। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়াটা সহজ হয়। হার্টের সমস্যা, ফুসফুসের ক্যানসার এড়াতে ধূমপান ছেড়ে দিতে পারেন।

2) নিজেকে প্রস্তুত করুন:
দীর্ঘদিন ধরে যারা এই নেশয় আসক্ত তারা হঠাৎ ছেড়ে দিলে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। নিজেকে মানসিকভাবেও দুর্বল মনে হতে পারে। সুতরাং এটি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আগে নিজেকে প্রস্তুত করুন।

3) নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি:
এতদিন আপনার শরীরে বা মস্তিষ্কে যে পরিমাণ নিকোটিন যাচ্ছিল, তা হঠাৎই বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর কিছু সাইড এফেক্ট রয়েছে। ধূমপান হঠাৎই ছেড়ে দিলে আপনার মাথাব্যথা হতে পারে, মুড সুইং হতে পারে, এনার্জি কমে যেতে পারে। এই সময়ে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ভীষণ কাজ দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিকোটিন গামের মতো বস্তু যা ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়ায় বিশেষভাবে কার্যকরী।

4) কাছের মানুষদের কথা শুনুন:
একেবারে কাছের মানুষ যারা, তাদেরকে আপনার ধূমপান ছাড়ার ইচ্ছার কথা বলতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে তারা খুশি হবেন। আপনাকে ক্রমাগত উৎসাহ দেবেন। যখন আপনার ডিপ্রেশন হবে, তখন তাদের কথা শুনুন। হতে পারে তাদের অনবরত উৎসাহ আপনাকে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

5) বাড়ি পরিষ্কার করুন:
ধূমপানের সঙ্গে যুক্ত সব রকম জিনিস সরিয়ে ফেলে বাড়ি পরিষ্কার করে ফেলুন। লাইটার বা দেশলাই, অ্যাশ ট্রে ধূমপানের যাবতীয় সামগ্রী চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলুন। আপনার ব্যবহৃত কোনো জামা বা বিছানার চাদরে যদি সিগারেট, বিড়ি বা চুরুটের গন্ধ থাকে তা পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। আপনার গাড়িতে গন্ধ থাকলে গাড়িও ধুয়ে ফেলুন। ঘরে সুগন্ধি রুম ফ্রেশনার ব্যবহার করুন। আসলে কোনো গন্ধে যাতে ফের ধূমপানের ইচ্ছে জেগে না ওঠে, সেদিকে সম্পূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে।
6) ধূমপায়ীদের এড়িয়ে চলুন
ধূমপায়ীদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করুন। কারন তাদেরকে ধূমপান করতে দেখে আপনারও ইচ্ছে জাগতে পারে। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন। এর ফলে ধূমপানের প্রতি চাহিদা কমে যায়।

এসবকিছু করেও যদি আপনি ধূমপানের অভ্যেস না ছাড়তে পারেন তবে একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন তিনি কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকলে নিয়ম করে সেই ওষুধ খাওয়ার চেষ্টা করুন।