জেনে নিন জো বাইডেন সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
যেকোনো সাফল্যের পেছনেই থাকে ফেলে আসা দীর্ঘ অমসৃণ পথ; যা হয়ত পরবর্তীকালে ফিরে দেখতে অবাক লাগে। থাকে হাজারো মজার গল্পও, যা ব্যক্তি মানুষটির একান্ত। সেসব গল্প খ্যাতির পরোয়া করেনা।
ইংল্যান্ডের যুবরাজ আলবার্টের তোতলামির সমস্যার মোকাবিলা নিয়ে অসাধারন একটি ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন টম হূপার, যেটির নাম ‘দ্য কিং’স স্পীচ’। সেখানে দেখা যায়, আলবার্টের অভিষেক হবে রাজা ষষ্ঠ জর্জের পদে। কিন্তু তাঁর বাক্শক্তি অত্যন্ত দুর্বল, কথা বলতে গেলেই কথা আটকে যায়। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংকট আসন্ন, তবু দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে অপারগ নতুন রাজা ।
অবশেষে ব্যবস্থা করেছিলেন স্ত্রী এলেজাবেথ। তিনি বুঝেছিলেন, তাঁর স্বামী যদি জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে না পারেন তবে ঘনিয়ে আসবে সমূহ বিপদ। অনেক খুঁজে একজন বিশিষ্ট বাক চিকিৎসককে জোগাড় করে আনলেন এলেজাবেথ। আলবার্ট শুরুতে তাঁকে অপছন্দ করলেও ক্রমশই অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বে আবদ্ধ হয়ে গেলেন লায়নেল লোগ নামের সেই চিকিৎসকের সঙ্গে। তাঁকে ভরসা করে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অভ্যাসের পর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে শিখলেন জর্জ। বাকিটা আমরা সকলেই জানি। অভিষেকের সময়ে ঐতিহাসিক সেই বক্তব্য রেখে সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন আলবার্ট। জনগণ তাঁকে সাদরে অভিষিক্ত করেছিল ষষ্ঠ জর্জের পদে।
খেয়াল করুন, এই কাহিনী কেবল মনোবল না হারিয়ে লক্ষ্যে পৌছনোর কথা বলেনা, এই কাহিনী সহযোগিতার এবং ভালবাসারও। সাফল্যের সাধনার মুখে যেমন বার বার প্রতিকূলতা আসে, তেমনি থাকে কোন না কোন ভরসার হাত যা ভেঙ্গে পড়ার মুহূর্তগুলোতেও কাউকে তলিয়ে যেতে দেয়না।
ট্রাম্পকে হারিয়ে সদ্য ক্ষমতায় আসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জীবনেও রয়েছে এমনই কিছু সুখ-দুঃখের উপাখ্যান। আসুন, সংক্ষেপে জেনে নিই, জো বাইডেনের জীবন সম্পর্কে কয়েকটি অজানা তথ্য।
১। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন। তিনি ১৯৪২ সালে পেন্সিল্ভেনিয়ায় জন্মগ্রহন করেন। আমেরিকার ইতিহাসে তিনিই সবথেকে বেশি বয়সে নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট । আবার অন্যদিকে, তিনি আমেরিকার ইতিহাসে দ্বিতীয় ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট। প্রথম ছিলেন জন এফ কেনেডি।
২। ছোটবেলা থেকেই কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল বাইডেনের। তোতলা ছিলেন বলে দশবছর বয়েসেও সহপাঠীদের কাছে অপদস্থ হয়েছেন।
৩। স্কুলজীবনে দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন বাইডেন। আরক্মেয়ার একাডেমীতে আমেরিকান ফুটবল অর্থাৎ রাগবি খেলে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
৪। ১৯৬৫ সালে আইন কলেজের স্নাতক হন । রাজনীতিতে আসার আগে উকিল হিসেবেই জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।
৫। সাইরাকুসে আইন পড়া শেষ করে তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে যোগদান করতে চেয়েছিলেন কিন্তু হাঁপানির কারণে মেডিকাল টেস্টে বাতিল হন।
৬। ১৯৭২ সালে, মাত্র ২৯ বছর বয়েসে জো পঞ্চম কনিষ্ঠতম মার্কিন সেনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে সেনেট পদে যুক্ত হয়ে তিনি ছবার পুনঃনির্বাচন জেতেন, যার ফলে তিনি ডেলয়ারের সর্বাধিক দীর্ঘসময়ের সেনেটর হিসেবে খ্যাত।
৭। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় তিনি প্রথম স্ত্রী নেলিয়া এবং এক বছর বয়েসের কন্যা ন্যাওমিকে হারান।
৮। পথ দুর্ঘটনার পর তিন ও চার বছরের দুই পুত্রকে বড় করে তোলার লড়াই শুরু হয় বাইডেনের। ১৯৭৭ সালে এসে জিল বাইডেনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় জো-এর। জিল নিজের সন্তানের মতো আগলে নেন জো এর দুই পুত্র, ব্যো আর হান্টারকে। একই বছরে জিল বাইডেন জো-র সঙ্গে আজীবন বিবাহবন্ধনের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হন। এরপর ১৯৮১ সালে জিল ও জো-র একটি কন্যা হয়, যার নাম অ্যাশ্লে ।
৯। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে আট বছর ( ২০০৯-২০১৭) ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। ওবামার সঙ্গে তাঁর এতই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল যে প্রতি সপ্তাহে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়ার দিন স্থির করে রাখতেন দুজনে।
১০। ২০১৫ সালে বাইডেনের প্রথম সন্তান ব্যো মস্তিষ্কের ক্যান্সারে মারা যায়। সেই ধাক্কা সামলে উঠলেও সন্তানের সমাধিতে মাঝে মাঝেই ছুটে যান বাইডেন।
১১। জো বাইডেন মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসেন। চকোচিপ আইসক্রিম তাঁর অসম্ভব প্রিয়। একবার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেনঃ “ My name is Joe Biden and I love ice cream.” আরও বলেছেন, ” I don’t drink. I don’t smoke. But I eat a lot of ice cream.”
নীচে রইল তাঁর আইসক্রিম প্রীতির কিছু মুহূর্ত-