পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে মূল চর্চার বিষয় হলো শুভেন্দু অধিকারী আগামী দিনে কোন পক্ষে থাকবে। প্রসঙ্গত তৃণমূলের এই গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইতিমধ্যেই রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যাবতীয় সরকারি পদ থেকেও তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে দলের উচ্চ নেতৃত্বের প্রতি তিনি মারাত্মক ক্ষুব্দ। তাকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছে না বলেও দাবি জানিয়েছে শুভেন্দু অনুগামীরা। এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে থাকবেন নাকি দল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেবেন, এই সম্ভাবনার ওপর একুশের বিধানসভা ভোটের ফলাফল নির্ভর করছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তিনি তৃণমূল ছাড়লে রাজ্যের শাসক দল যে বেশ ভালোমতোই বেকায়দায় পড়বে তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমরা বরং দেখেনিই শুভেন্দু অধিকারী দল ছাড়লে তৃণমূলের ঠিক কি কি ক্ষতি হতে পারে।

১) শুভেন্দু নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে তৃণমূলের শক্তিক্ষয়

শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছাড়লে সমগ্র পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় দুর্বল হয়ে পড়বে তৃণমূল কংগ্রেস। সেইসঙ্গে বাঁকুড়া জেলার একাংশ এবং মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের সংগঠনে ব্যাপক ধষ নামতে পারে। মনে করা হচ্ছে রাজ্যের কমপক্ষে ৮০ টি বিধানসভা আসনের ফলাফল শুভেন্দু অধিকারীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

শুভেন্দু
telegraph india
https://www.hindustantimes.com/india-news/after-suvendu-adhikari-another-disgruntled-tmc-mla-fans-speculation/story-QwA6UYK8O203LOkdK3WZvN.html



২) দক্ষ সংগঠককে হারাবে দল

অতীতের শুভেন্দু বাবুকে তৃণমূল যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে তখনই সেটা তিনি দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন। মুর্শিদাবাদ ও মালদা জেলার মত সাংগঠনিকভাবে দুর্বল জেলাতেও তিনি তৃণমূলের ব্যাপক শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার রাজনৈতিক কৌশলেই দুই জেলার জেলা পরিষদ দখল করতে সক্ষম হয়েছিল তৃণমূল। তার মতো এরকম একজন দক্ষ সংগঠককে কোনো দলই হারাতে চাইবে না।

৩) দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে

শুভেন্দু অধিকারীর মত একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে দলে ধরে রাখতে না পারলে তা তৃণমূলের ভাবমূর্তি সম্বন্ধে মানুষের কাছে নেতিবাচক বার্তা বহন করে নিয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠবে যে দল নিজেদের এরকম একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ত্যাগ করে তারা পরবর্তীতে সাধারণ মানুষকেও অবহেলা করতে পারে। সেই সঙ্গে এই ঘটনা তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে।

৪) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কালিমালিপ্ত হতে হবে

শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগের সম্ভাবনা সামনে আসার পর পরেই কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই মূলত তিনি তৃণমূল ছাড়তে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে যাবতীয় জল্পনাকে সত্যি প্রমাণ করে শুভেন্দু যদি দল ছাড়েন সেক্ষেত্রে অনেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ঘটনার জন্য দায়ী করতে পারে। এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে।

suvendu jpg
asianet newsable


৫) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে

যে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের গণ আন্দোলনের ওপর ভর করে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মূল কান্ডারী শুভেন্দু যদি তার দল ছেড়ে অন্য দলে যোগদান করে তাহলে কৃষক আন্দোলন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হযলে সেক্ষেত্রে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষে আবার পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ত্যাগ করলে এই ধাক্কা তাদের পক্ষে সামলে ওঠা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। সে ক্ষেত্র পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল হিসাবে তৃণমূলের দীর্ঘ দশ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটবে।

https://banglakhabor.in/2020/12/03/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%aa%e0%a6%bf-%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9c/