নিজস্ব সংবাদদাতা: নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর – ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটানোর যুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম প্রধান দুই কাণ্ডারী। এই দুই জায়গা শুধুমাত্র নিছক কোনো জনপদ নয়। এগুলো একেকটি আন্দোলনের নাম। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের নাম। এই দুই জায়গা আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থানের ইতিহাসের কাহিনী। আর এই সিঙ্গুর হল সেই জায়গা, যেখান থেকে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আর নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালনার ঘটনায় যা এক ভিন্ন পরিণতি লাভ করেছিল। সেই আন্দোলনে সিপিএম-র দীর্ঘ রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে, সগৌরবে মহাকরণে প্রবেশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেই সিঙ্গুরে আগামী শনিবার আবার একটি নির্বাচন। নন্দীগ্রামে ইতিমধ্যেই ভোটপর্ব মিটে গিয়েছে। আর এবার ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে আগামী ১০ এপ্রিল শনিবার, সিঙ্গুরে ভোট হতে চলেছে। কিন্তু সিঙ্গুরের মানুষ এখনও কী একইভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করছেন? সিপিএম সেখানে সক্রিয়ভাবে নতুন উদ্যমে তরুণ প্রার্থী দিয়ে জানাতে চাইছে, তোমরা মারাত্মক ভুল করেছিলে, শিল্প হলে আজ সিঙ্গুরের মানুষেরা চাকরি পেত। সেই প্রচার কী তৃণমূল কংগ্রেসকে আঘাত হানবে?

এদিকে, বিজেপিও বলছে, আমরা শিল্প চাই। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুর নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী বলছেন, সিঙ্গুর থেকে টাটা-কে তাড়িয়ে দেওয়াটা ঠিক হয়নি। দিদি, বাংলায় শিল্প প্রয়োজন। ঠিক যেইভাবে একদিন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও বলেছিলেন, কৃষি থেকে আমাদের শিল্পে যেতে হবে। কেননা, কৃষকদের মাধ্যমে অর্থনীতিটা একটা স্যাচ্যুরেশন পয়েন্টে পৌঁছে গেছে। এইবারে কৃষির জায়গায় শিল্প গঠন প্রয়োজন। কারণ, “কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ”। সেই ইতিহাসেরই কি পুনরাবৃত্তি হচ্ছে?

মমতা মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় বারবার এটা বোঝাবার চেষ্টা করেছেন যে, তিনি শিল্পায়নের বিরূদ্ধে নন, তিনি জোরপূর্বক কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। প্রথমে ঠিক হয়েছিল খড়গপুরে এই কারখানা হবে। কিন্তু টাটারা রাজি হননি। সেই সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্প মন্ত্রী প্রয়াত নিরুপম সেন বলেছিলেন, শিল্পকে ছাড় না দিলে তারা আসবে কেন? সিঙ্গুরটা কলকাতা থেকে কাছে, হুগলি নদীর কাছে। সেই কারণে জায়গাটাই পছন্দ হয়েছিল টাটাদের। জায়গাটা তাদেরকে দিতে চেয়েছিলেন বুদ্ধদেব, নিরুপম। কিন্তু সেটা ব্যুমেরাং হয়েছিল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে।

আজ এত বছর পরে আবার একটা বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে সেই সিঙ্গুর। বেচারাম মান্না এবং তাঁর স্ত্রী, যাঁরা সিঙ্গুর আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন, তাহলে তো তাঁদের দু’জনকেই মমতা টিকিট দিয়ে সেই সিঙ্গুর আন্দোলনের একটা রিভাইভাল স্মৃতির একটা পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে, এলাকার সৎ মাস্টারমশাই বলে পরিচিত শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মমতাকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর অনেক বয়স হয়ে গেছে। তিনি নিজেই বলেছেন, মমতা তাঁকে টিকিট না দেওয়ায় তিনি বিজেপিতে চলে গেছেন। তিনি অভিমান করেছেন। বেচারাম মান্নার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সমস্যা। সেই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যই বিজেপির প্রার্থী হয়ে ওখানে কী আঘাত হানতে পারবে? এই প্রশ্নটাও আছে। এখন দেখার, ভোটের সময় এর পরিণতি কী হবে!