নিজস্ব সংবাদদাতা: সাংগঠনিক ভাবে দক্ষিণ কলকাতার বেহালা পূর্ব ও বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায় বিজেপি অনেকটাই দুর্বল। আর এই দুই কেন্দ্রেই কিনা বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছেন টলিউডের দুই নায়িকা শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় ও পায়েল সরকার। কিন্তু শুধু তারকা প্রার্থী দিয়ে কি এমন তৃণমূল দুর্গে ভাঙন ধরানো সম্ভব? সেটা যে জেগে স্বপ্ন দেখার মত, তা বিলক্ষণ টের পেয়েছে বিজেপি। আর সেইজন্যই ঘাসফুল শিবিরের এই গড়ে জয় ছিনিয়ে আনতে দুই বেহালার চিত্রনাট্যে নায়িকাদ্বয় সিপিএমের ভোটব্যাঙ্ককেই ‘ভাই’য়ের ভূমিকায় চাইছেন।

লোকসভায় পূর্ব ও পশ্চিম বেহালায় সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন যথাক্রমে ৩২,৭৯২ ও ৩৯,৮৩৬ ভোট পেয়েছিলেন। ভোট রাজনীতির অঙ্কে বিজেপি প্রার্থীরা বামফ্রন্টের এই ভোট নিজেদের দিকে টানতে পারলেই জয় সম্ভব হবে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। তাই ভোটের ঘুঁটি সাজাতে বসে শ্রাবন্তী ও পায়েলকে নজর দিতে হচ্ছে সিপিএমের ভোটবাক্সে। বেহালা পশ্চিমে শ্রাবন্তীর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

উল্লেখ্য, ২০০১ সাল অর্থাৎ সেই বাম আমল থেকে ধারাবাহিক ভাবে চারবার এই আসন থেকে বিধায়ক হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আবার পূর্ব বেহালায় তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। সদ্য বিজেপি ত্যাগী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী নিজের ও পার্থবাবুর জয় প্রসঙ্গে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রচারেই তো বিজেপি এখানে কোনও লোক খুঁজে পাচ্ছে না। ওরা নামজাদা নায়িকাদের প্রার্থী করেছে ঠিকই। কিন্তু প্রচারে তো ওদের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তা হলে ভোট করাবে কারা?’’

রত্নাদেবীর এমন বক্তব্যের পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বেহালার বিজেপি-র দুই খ্যাতনামী প্রার্থী প্রচারের ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের চেয়েও পিছিয়ে। দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে প্রচারের ফ্লেক্স, ব্যানার, হোডিংয়ের ক্ষেত্রে তৃণমূল ও সিপিএমের তুলনায় বেহালার দু’টি আসনে বিজেপি অনেকটাই ম্লান। তাই সেই দুর্বলতা ঢাকতে ভোটের রণকৌশল সাজাতে বসে কোথায় কোথায় সিপিএম তথা বামেদের ভোটব্যাঙ্ক অবশিষ্ট রয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ করছেন নায়িকাদ্বয় ও বিজেপি নেতারা।

সমীক্ষা বলছে, বেহালা পূর্বের ১২২, ১২৩, ১২৪, ১৪২, ১৪৩ ও ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও সিপিএমের ভোট রয়েছে। আবার বেহালা পশ্চিমের ১২৭ ও ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও সিপিএমের কাউন্সিলরাই এলাকার দায়িত্বে। ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান সিপিএম কাউন্সিলর তথা কো-অর্ডিনেটর নীহার ভক্তই এবার বেহালা পশ্চিমে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হয়েছেন। তাই শ্রাবন্তীর কাছে সিপিএমের ভোট নিজের দিকে টানা যে বেশ কঠিন হবে, তা মেনে নিচ্ছেন বেহালা পশ্চিমের বিজেপি-র নেতা-কর্মীরাই। কিন্তু বামভোটের অভিমুখ পদ্ম শিবিরের দিকে না ঘোরাতে পারলে শ্রাবন্তী ও পায়েলের জয় অধরাই থেকে যাবে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।