মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সন্তান এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভগ্নী_ এই পরিচিতির বাইরেও স্বর্ণকুমারী দেবীর যে পরিচয়, তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম খ্যাতিপ্রাপ্ত মহিলা সাহিত্যিক। ছোটবেলা থেকেই জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠার কারণে অল্প বয়স থেকেই স্বর্ণকুমারী দেবী সাহিত্যজগতে পদার্পণ করেন সফল ভাবে। আসুন জেনে নিই স্বর্ণকুমারী দেবীর সাহিত্য জীবনের অধ্যায় গুলি সম্পর্কে কিছু কথা-
স্বর্ণকুমারী দেবী-র শ্রেষ্ঠত্ব

স্বর্ণকুমারী দেবী যে বাংলার প্রথম মহিলা লেখিকা, প্রথম মহিলা ঔপন্যাসিক তা কিন্তু নয়। স্বর্ণকুমারী দেবী কর্তৃক ১৮৭৬ সালে দীপনির্বাণ প্রকাশের আগেই মার্থা সৌদামিনী সিংহ রচনা করেছেন নারীচরিত আবার ১৮৫৬ সালে কৃষ্ণকামিনী দাসী লিখেছেন চিত্তবিলাসিনী। ১৮৫৬ সালে কামিনীসুন্দরী দেবী_প্রথম মহিলা নাট্যকার হিসেবে লেখেন তাঁর প্রথম নাটক,উর্বশী। এছাড়াও পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ির মহিলারাও কম বেশি সাহিত্যচর্চা করতেন। এতদসত্ত্বেও, বাংলা সাহিত্যে মহিলা হিসেবে প্রথমবার অনুকম্পার বদলে প্রার্থিত সম্মান আদায় করে নেয় স্বর্ণকুমারী দেবী,এখানেই ওনার শ্রেষ্ঠত্ব।
স্বর্ণকুমারী দেবীর রচনা

স্বর্ণকুমারী দেবীর আদর্শ ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। পিতার আর্শীবাদ, দাদাদের স্নেহ, স্বামী জানকীনাথ ঘোষালের ভালোবাসায় স্বর্ণকুমারী দেবীর সাহিত্য জীবনের পথ পরিপূর্ণতা পায়। স্বর্ণকুমারী দেবী সাহিত্য জগতে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছান ভারতী পত্রিকায় লেখিকা ও সম্পাদিকা হিসেবে।গীতনাটিকা রচনার ক্ষেত্রেও স্বর্ণকুমারী দেবী স্বীকৃতির দাবী রাখে। রবীন্দ্রনাথের বাল্মিকী-প্রতিভা রচনার আগেও তিনি রচনা করেন গীতিনাটিকা বসন্ত- উৎসব। এরপরেই আত্মপ্রকাশ করে স্বর্ণকুমারী দেবীর অপর এক কালজয়ী রচনা, ছিন্নমুকুল। স্বর্ণকুমারী দেবী তাঁর সাহিত্য জীবনে পাঠক কুলকে একাধিক ঐতিহাসিক উপন্যাসের সওগাত প্রদান করেনমিবাররাজ,বিদ্রোহ,ফুলের মালা,হুগলীর ইমামবাড়া প্রমুখ। স্বর্ণকুমারী দেবীর বিখ্যাত সামাজিক উপন্যাস ‘স্নেহলতা’ সমালোচকদের ভাষায় এটি “বাঙালি সমাজে আধুনিকতার সমস্যা নিয়ে লেখা প্রথম উপন্যাস”।স্বর্ণকুমারীর অপর জনপ্রিয় উপন্যাস ‘কাহাকে’ যা বাঙালিদের পাশাপাশি বিদেশিদেরও মন ছুঁয়েছিল। স্বর্ণকুমারী দেবীর ২টি উপন্যাস,১৪টা গল্প ও ১টা নাটক অনুদিত হয়েছিল। স্বর্ণকুমারী দেবী বাঙালি মেয়েদের নিয়ে বেশ কয়েকটি ছোটোগল্প লিখেছিলেন মালতী,লজ্জাবতী, যমুনা ইত্যাদি। স্বর্ণকুমারী দেবীর বিখ্যাত দুটি প্রহসন হল- পাকচক্র ও কনে বদল। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে তাঁর ” গল্পে স্বল্পে” একটি অমূল্য অবদান।
কলকাতা বিশ্বিবদ্যালয় থেকে প্রথম নারী হিসেবে তিনি লাভ করেন সর্বোচ্চ সম্মান -জগত্তারিণী স্বর্ণপদক।
শৈশবে স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রতি তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ-এর আশীর্বাদ বাণী বাস্তবিক ভাবেই পরিণতি পায়- “স্বর্ণ তোমার লেখনীতে পুষ্পবৃষ্টি হউক।”