নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে একবার ভরাডুবি ঘটেছিল দলের। আর একুশের বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি নয়, একেবারে বিপর্যয় হয়েছে বামফ্রন্টের। আর এই বিপর্যয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে গতকাল বৈঠকে বসেছিল সিপিএম ও শরিক দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে শেষ অবধি সেই বৈঠকে কার্যত মাছ বাজারের পরিবেশ তৈরি হল। প্রতিটি শরিক দলই সিপিএমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাল। অভিযোগ, ছোট দলগুলিকে গুরুত্ব না দিয়ে একতরফাভাবে আইএসএফের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম। এর ফলেই এই বিপর্যয় বলে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের দিকে আঙুল তুলেছেন শরিক নেতারা।

ফরওয়ার্ড ব্লকের অভিযোগ, কার্যত তাদের অন্ধকারে রেখে এই জোট আইএসএফের সঙ্গে জোট করা হয়েছিল। এমনকি তাদের বরাদ্দ আসনগুলিও আব্বাস সিদ্দিকীর আইএসএফকে দেওয়া হয়েছিল। তেমনই অন্যান্য শরিকের আসনও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে একের পর এক তিরে বিদ্ধ হন আলিমুদ্দিনের কর্তারা। সকলেরই মত, আইএসএফের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের জোট মানুষ একদমই ভালভাবে নেয়নি। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল। তাই যেখানে আব্বাস সিদ্দিকির দলের প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, সেখানে অন্তত ধর্মনিরপেক্ষ জনতার ভোট পায়নি জোট। সেই ভোট শাসকদলের দিকে চলে গিয়েছে।

একই অভিযোগ আরেক শরিক আরএসপির। তাদের বক্তব্য, কলকাতা এবং আশপাশের এলাকায় তাদের কোনও আসন দেওয়া হয়নি। নিশ্চিত পরাজয় হবে বেছে বেছে এমন আসনই তাদের দেওয়া হয়েছে। আরএসপির অন্যতম শক্ত ঘাঁটি দক্ষিণ দিনাজপুর। সেখানে গত বিধানসভার তুলনায় অন্তত ২৭ শতাংশ ভোট কমেছে বামেদের। এর জন্য সংযুক্ত মোর্চার নীতিকেই দায়ী করলেন বাম নেতা তথা আরএসপির রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট, তপন এবং কুশমন্ডিতে বরাবরের মত এবারও প্রার্থী দিয়েছিল বামদল আরএসপি। গঙ্গারামপুর এবং হরিরামপুর থেকে প্রার্থী দেয় সিপিএম। কুমারগঞ্জ আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কংগ্রেসকে। এবার সেই জেলায় বামেরা (আরএসপি, সিপিএম) ভোট পেয়েছে মাত্র ৭.৪১ শতাংশ। অথচ গত ২০১৬ বিধানসভাতে এই জেলায় বামেদের ভোট ছিল ৩৪.৭ শতাংশ।

পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার শরিক দলগুলোর তরফে নাম করেই বলা হয়েছে, মহম্মদ সেলিম, তন্ময় ভট্টাচার্য ভোটের আগে বা ভোটের পরে যে ভূমিকা পালন করছেন, মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তা দলবিরোধীও। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে শরিক দলগুলি। এদিনের বৈঠকে রীতিমতো চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু হয়। কোনওরকমে পরিস্থিতি সামাল দেন বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু। পরে তিনি জানান, এই যে বিপর্যয় তার কারণ অনুসন্ধান করে প্রত্যেকটি দল আলাদা আলাদা করে পর্যালোচনা করুক এবং তারপর রিপোর্ট জমা দিক। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে এ নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।