নিজস্ব সংবাদদাতা: আজ, সোমবার রাজ্যে সপ্তম দফার নির্বাচন। সপ্তাহের প্রথম দিনেই বাংলার ৫টি জেলার মোট ৩৪ আসনে চলছে ভোটগ্রহণ। তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহের ৬টি, পশ্চিম বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের ৯টি এবং কলকাতার ৪টি আসন। এক দিকে এই দফায় যেমন রয়েছেন রুপোলি পর্দা থেকে রাজনীতিতে পা দেওয়া তারকা প্রার্থীরা, তেমনই রয়েছেন রাজ্যের বহু পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ থেকে একাধিক মন্ত্রী।

আজ, সপ্তম দফার নির্বাচনে ৪ জন মন্ত্রীর ভাগ্য পরীক্ষা। তার মধ্যে অন্যতম রাজ্যের পুরমন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ২০০৯ সালে আলিপুর কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে জিতে প্রথম বার বিধায়ক হয়েছিলেন ফিরহাদ। তার পর ২০১১ ও ২০১৬ সালে কলকাতা বন্দর কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। এ বারেও সেখান থেকেই প্রার্থী তিনি। এদিকে, চলতি ভোটে নির্বাচনী লড়াইয়ের ৫০ বছর পূর্ণ করছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ১৯৭১ সালে কলকাতার বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। ৫০ বছর পরে ফের সেই কেন্দ্রেই প্রার্থী সুব্রত। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র সুব্রত বালিগঞ্জ ছাড়াও জোড়াবাগান এবং চৌরঙ্গি থেকেও বিধায়ক হয়েছেন।

রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও ৬ বারের বিধায়ক। ১৯৯১ সালে বারুইপুর থেকে প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন শোভনদেব। এরপর ১৯৯৮ সালে উপনির্বাচনে রাসবিহারী থেকে জয়লাভ করেন। তার পর থেকে সেখানকারই বিধায়ক তিনি। কিন্তু এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কেন্দ্র ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামের প্রার্থী হওয়ায় সেখানে তাঁকে দাঁড় করিয়েছে দল। উল্লেখ্য, এ বার শোভনদেবের প্রতিপক্ষ বিজেপি-র রুদ্রনীল ঘোষ। ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতি করেছেন তিনি। পরবর্তী কালে ছোটপর্দা ও বড়পর্দার পরিচিত মুখ রুদ্র তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তবে নির্বাচনের আগে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার পরে তাঁকে বিধানসভার লড়াইয়ে নামিয়েছে বিজেপি।

তেমনই আরেকজন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ আসানসোল উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী, রাজ্যের আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। ২০১১ থেকে আসানসোল উত্তরেরই বিধায়ক মলয়। এ বার তৃতীয় বারের জন্য লড়ছেন মলয়। কলকাতার ৮৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৪ বারের কাউন্সিলর তথা মেয়র পরিষদ দেবাশিস কুমারকে এ বার শোভনদেবের বদলে রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এ বারই প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী তিনি। অন্যদিকে, রাসবিহারীতে বিজেপি প্রার্থী করেছে প্রাক্তন সেনা আধিকারিক সুব্রত সাহাকে। ৪০ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন সুব্রত। আদতে আসানসোলের বাসিন্দা হলেও তাঁকে রাসবিহারীতে দেবাশিসের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে দল।

দক্ষিণ কলকাতার আরেকটি কেন্দ্র বালিগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী রাজ্য বিধানসভার দীর্ঘদিনের স্পিকার হাসিম আবদুল হালিমের ছেলে ফুয়াদ হালিম। পেশায় চিকিৎসক ফুয়াদ এর আগে দু’বার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। এ বারেও কঠিন লড়াই তাঁর। অন্যদিকে, দিল্লীর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ বাম প্রার্থী হয়েছেন বর্ধমানের জামুড়িয়াতে। লড়াকু নেত্রী ঐশীর বাড়ি দুর্গাপুরে। এই প্রথমবার নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে পা রাখলেন তিনি।

এছাড়া, পাণ্ডবেশ্বর থেকে এবারও প্রার্থী হয়েছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তবে এবছর আর তৃণমূল নয়, বিজেপি-র টিকিটে। নির্বাচনের আগেই শিবির বদল করেছেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক তথা আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন মেয়র জিতেন। আসানসোল কেন্দ্রে এবছর তৃণমূলের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে টলিউডের অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে। নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে টুইট যুদ্ধে শিরোনামে এসেছিলেন সায়নী। তার পরেই তাঁকে প্রার্থী করে তৃণমূল। আর সায়নীর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে অগ্নিমিত্রা পালকে। পোশাক পরিকল্পক অগ্নিমিত্রা বিজেপি-র মহিলা মোর্চার সভানেত্রীও।

সবমিলিয়ে নতুন-পুরোনোর মিশেলে এই কয়েকজন হেভিওয়েট তারকা প্রার্থীর দিকে আলাদা নজর থাকবেই আজকের বিধানসভা নির্বাচনে।