নারীর অর্ধেক আকাশের জন্য লড়াই চিরকালীন। নারী পুরুষ কাঁধে কাঁধ লড়াইয়ের স্লোগান আকশে চমকে ওঠা বিদ্যুৎকেও চমকে দেয়। প্রতিটা বিষয়ে পুরুষদের টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গেছে নারী। এমনকি দেশের শাসন ব্যবস্থাতেও নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা আজ আলোচনা করব ভারতের সেরা দশটি দাপুটে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে। এখন ও পর্যন্ত ১৬ জন নারী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে, ভারতের মুখ্যমন্ত্রীদের মাঝে শুধু পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নারী। এখন অবধি ভারতে মোট তেরটি রাজ্যে নারীরা মুখ্যমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তামিলনাড়ু, দিল্লি , তন্মধ্যে ও উত্তরপ্রদেশে দুজন নারী মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নারী মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন চারজন ভারতীয় জনতা পার্টি, পাঁচজন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং দুইজন সর্বভারতীয় আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গমের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তাহলে চলুন জেনে নিই সেই ১০ জন মুখ্যমন্ত্রীর ।
দেখে নিন সেই মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর নাম –
১) সুচেতা কৃপালানী :
সুচেতা কৃপালানী একজন ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন। ভারতের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সুচেতা কৃপলানী ছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য নির্ভীক যোদ্ধা।১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।তার শাসনকালের বিশেষত্ব হ’ল একটি রাজ্য কর্মচারীদের ধর্মঘটের পরিচালনা করা। রাজ্যের কর্মীদের দ্বারা সেই প্রথম ধর্মঘট 62 দিন অব্যাহত ছিল।
১৯৬৯ সালে কংগ্রেস বিভক্ত হলে , তিনি মোরারজি দেশাই গোষ্ঠীর সাথে এনসিও গঠনের জন্য দল ত্যাগ করেন। তিনি ফয়েজাবাদ (লোকসভা কেন্দ্র) থেকে এনসিও প্রার্থী হিসাবে ১৯৭২ সালের নির্বাচনে হেরে গেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন ।
২)নন্দিনী সাতপাঠি :
নন্দিনী সাতপাঠি একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং লেখক ছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালের জুন থেকে ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময়, তিনি জগজীবন রামের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিবাদকারী দলের অংশ ছিলেন, যা কংগ্রেস ফর ডেমোক্রেসি (সিএফডি) দলের হয়ে ওঠে। সিএফডি ১৯৭৭ সালের মে মাসে জনতা পার্টির সাথে একীভূত হয়। নন্দিনী সাতপা ঠি ১৯৭৭ সালের জুনে ধেনকানাল থেকে উড়িষ্যা বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে তিনি এই আসনটি কংগ্রেসের (উরস) প্রার্থী হিসাবে এবং ১৯৮৫ সালে স্বতন্ত্র হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন।তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ধনকানল গন্ডিয়া থেকে রাজ্য বিধানসভার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০০০ সাল পর্যন্ত বিধানসভায় ছিলেন ।

৩) শশিকলা কাকোড়কার :
শশীকলা কাকোড়কার ১৯৭৩ সালের ১৩ আগস্ট গোয়া, দামান ও দিউয়ের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। তৎকালীন গোয়ার রাজ্যপাল ছিলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর, রাজভবনে দমন ও দিউ ছিলেন সিসিরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। কাকোড়কারের পাশাপাশি প্রতাপসিংহ রেন এবং এ কে এস এস উসগাঁওকার মন্ত্রিসভার মন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করেছিলেন। মেয়াদ শেষে তার নিজস্ব প্রতিমন্ত্রী পদ শূন্য ছিল। তিনি মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির সভাপতির পদে পদ লাভ করেছিলেন এবং ১৯৭৭ সালের গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত এই উভয় পদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

৪) সৈয়দা আনোয়ারা তৈমূর :

সৈয়দা আনোয়ারা তৈমূর অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৮০ সনের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৮১ সনের ৩০ জুন পর্যন্ত তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন। তিনিই অসমের প্রথম ও একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চারবার অসম বিধান সভায় সদস্যা রুপে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সনে তিনি রাজ্যসভায় আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।
যোগেন্দ্রনাথ হাজরিকার মন্ত্রীসভার পতনের পর ১৯৭৯ সনের ১২ ডিসেম্বর তারিখ থেকে অসমে রাষ্ট্রপতি শাসন চালু হয়। কয়েকমাস রাষ্ট্রপতি শাসনের পর প্রধানমন্ত্রীর আদেশক্রমে কংগ্রেস(ই) দলের নেত্রী সৈয়দা আনোয়ারা তৈমূরকে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার প্রদান করা হয়। ১৯৮০ সনের ৬ ডিসেম্বর তারিখে তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রীরূপে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কার্যভার গ্রহণ করার পর অসমে রাষ্ট্রপতি শাসনের অন্ত পরে। তার দায়িত্ব নেওয়ার সময় অসমে বিদেশী বহিস্কার আন্দোলন চালু ছিল। প্রায় সাত মাস শাসন চালানোর পর টাইমূর সরকারের পতন হয়। ১৯৮১ সনের ৩০ জুন তারিখে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তারপর অসমে পুনরায় রাষ্ট্রপতি শাসন চালু হয়।
৫) জয়ললিতা জয়রাম :

জয়ললিতা জয়রাম হলেন তামিল নাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।রাজনীতিতে নামার পর উপাধি পান ‘পুরাচ্চি থালাইভি’ অর্থাৎ, ‘বিপ্লবী নেতা’।১৯৯১ সালে প্রথমবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন তিনি। এরপরে আরও চারবার মুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলেছেন এই নেত্রী। শেষবার বিধানসভা ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন ২০১৬ সালের মে মাসে। তবে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। দীর্ঘ রোগভোগের পর অবশেষে এক ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটল দক্ষিণ ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে।
৬) মায়াবতী নায়না কুমারী :

মায়াবতী নায়না কুমারী ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।তিনি বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) জাতীয় সভাপতি, যিনি বহুজনদের জন্য সামাজিক পরিবর্তনের একটি প্ল্যাটফর্মের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। যাকে সাধারণত অন্যান্য পশ্চাৎপদ, তপশিলী জাতি এবং তপশিলী উপজাতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং পাশাপাশি এই বর্ণগুলি থেকে সংখ্যালঘুদের রূপান্তরিত করা হয় তাদের পাশে এসে তুমি দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৫ সালে সংক্ষেপে এবং আবার ১৯৯৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তারপরে ২০০২ থেকে ২০০৩ এবং ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত তিনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
৭)রাজিন্দর কাউর ভাট্টাল :

রাজিন্দর কাউর ভাট্টাল একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে যুক্ত। তিনি পাঞ্জাবের চতুর্দশ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি এখনপর্যন্ত পাঞ্জাবের প্রথম ও একমাত্র নারী, যিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।তিনি ভারতের অষ্টম নারী মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি পাঞ্জাবের লেহরা বিধানসভা আসন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছেন।২০১৬ সালের নভেম্বরে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট শতদ্রু-যমুনা সংযোগ নিয়ে পাঞ্জাবের পরিবর্তে হরিয়ানার পক্ষে রায় দিলে পাঞ্জাব বিধানসভার বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ৪২ জন সদস্য একসাথে বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করেন, যাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
৮)সুষমা স্বরাজ :

সুষমা স্বরাজ ( ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ – ৬ আগস্ট ২০১৯) একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক আইনজীবী। ভারতীয় জনতা পার্টির একজন সিনিয়র নেতা ও সাবেক সভাপতি, তিনি ২৬ মে ২০১৪ সাল থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন; ইন্দিরা গান্ধীর পর তিনি দ্বিতীয় নারী হিসাবে এই দফতরের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি সংসদ সদস্য (লোকসভা) হিসাবে সাতবার এবং আইন পরিষদের (বিধানসভা) সদস্য হিসাবে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৭৭ সালে ২৫ বছর বয়সে, তিনি উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যর মন্ত্রীসভার সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৩ অক্টোবর ১৯৯৮ সাল থেকে ৩ ডিসেম্বর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লীর ৫ম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
৯)শীলা দীক্ষিত :

শীলা দীক্ষিত (৩১ মার্চ ১৯৩৮ – ২০ জুলাই ২০১৯) একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ যিনি দীর্ঘতম মেয়াদের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি দিল্লিতে পরপর তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করেন কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বে। ডিসেম্বর ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে নতুন দিল্লি আসনে তিনি পরাজিত হন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়ালের কাছে এবং অরবিন্দ কেজরীওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন। তারপরে ১১ই মার্চ ২০১৪ সালে কেরালার গভর্নর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তবে ২৫শে আগস্ট ২০১৪ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জন্য প্রধান পদপ্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয় তবে পরে তিনি তা প্রত্যাহার করে নেন। তাকে ১০ জানুয়ারি ২০১৯ সালে দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।
১০)মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় :

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্ম ৫ জানুয়ারি, ১৯৫৫) পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা-সভানেত্রী। বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, ভূমি ও ভূমিসংস্কার, তথ্য ও সংস্কৃতি, পর্বতাঞ্চল বিষয়ক, কৃষি, বিদ্যুৎ, কর্মী ও প্রশাসনিক সংস্কার, সংখ্যালঘু কল্যাণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগেরও ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী।তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বাগ্মী রাজনীতিবিদ। তাকে প্রায়শই “দিদি” বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ২০১১ সালে তার নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল। এই সরকার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকার ছিল। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে তিনি দুই বার রেল, এক বার কয়লা মন্ত্রকের এবং এক বার মানবসম্পদ উন্নয়ন, যুব, ক্রীড়া, নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের জমি বলপূর্বক অধিগ্রহণ করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিরোধিতা করে আন্দোলন করেছিলেন।
আরও দেখুন : https://www.banglakhabor.in/10-টি-নামী-ফোর-হুইলা্র/amp/