জ্যোতিষশাস্ত্রকে বিজ্ঞান অর্থাৎ জ্যোতিষবিজ্ঞান বলা হবে কি না তা নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্বের ইতিহাস অনেক পুরনো। বিজ্ঞানীদের একাংশ এই শাস্ত্রকে বিশেষ জ্ঞান অর্থাৎ বিজ্ঞানের মর্যাদা দিতে নারাজ। আবার কেউ কেউ বলেছেন অর্থাৎ জ্যোতিষচর্চার মধ্যেই পৃথিবীর সবচাইতে পুরনো গবেষণার ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে। সুতরাং একে বিজ্ঞান হিসেবে ভাবতে আপত্তি থাকার কথা নয়। এই দ্বন্দ্ব বাদ দিয়েও বলা যায় মানুষের জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর রয়েছে অগাধ আস্থা। বহু খ্যাতনামা ডাক্তার, গবেষক, বিজ্ঞানী নিজের জীবনে জ্যোতিষের উপর ভরসা রেখেছেন। এঁদের অনেকেই নানানভাবে উপকৃতও হয়েছেন। তার নিশ্চিত কারণও রয়েছে কিছু। ভালোভাবে সন্ধান করা হলে সেই কারণগুলোও আমাদের সামনে স্পষ্ট হতে পারে।

জ্যোতিষবিজ্ঞান এর ইতিবৃত্ত ঃ

প্রথমত, জ্যোতিষশাস্ত্র মন্ত্রতন্ত্র, ঝাড়ফুঁক কিংবা তুকতাক নয়। ব্রহ্মাণ্ডের নক্ষত্রমণ্ডলের চলনের উপর ভিত্তি করে এই শাস্ত্রের আদি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে আজ জড়িয়ে গিয়েছে জ্যোতিষ। পৃথিবীর ইতিহাসের যতটা এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, তার একদম শুরুর থেকেই জ্যোতিষশাস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। ভারতবর্ষেও প্রাচীন কালে যেসব মুনি-ঋষিরা মানুষের ভাগ্য অলৌকিক উপায়ে জেনে যেতেন তাঁরা সম্ভবত সেই সময়েরই প্রতিভাবান জ্যোতিষী। গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথের উপর মানুষের ভাগ্য নির্ভর করে এই কথা তাই আজকের যুগের বহু মানুষ বিশ্বাস করেন।

c2cfd24b5846478fb86f108430bc4ce0
pinterest

দ্বিতীয়ত, গ্রহ-নক্ষত্র ছাড়াও হাতের রেখা এবং সংখ্যাতত্ত্ব জ্যোতিষবিজ্ঞানের বিশেষ দুটি ধারা। নিউমেরোলজি বা সংখ্যাতত্ত্ব বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনে প্রবলভাবে প্রভাব ফেলছে। বহু বিখ্যাত খেলোয়াড়, ফিল্মস্টার, রাজনীতিবিদ সংখ্যাতত্ত্বের উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন। এবং হাতের রেখাও যে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণে বিশেষ ভুমিকা নেয় তা অনেক বিজ্ঞানীও জনান্তিকে স্বীকার করেছেন। সেই জন্যেই বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের হাতের ছাপ এঁকে অন্যের থেকে আলাদা। জ্যোতিষবিদ্যার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিপ্লব, যুদ্ধ, খরা, বন্যা, অর্থনীতির ওঠাপড়া এই সব কিছুই জানবার চেষ্টা করে মানুষ।

জ্যোতিষবিজ্ঞান
pinterest

তৃতীয়ত, ভারতবর্ষ একটি এমন দেশ যেখানে হাজার হাজার বছর ধরে জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহে দেবতার আশীর্বাদ বিশেষ প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন শতকরা নিরানব্বই জন মানুষইস।ফলে বিবাহে দুজন মানুষের যোটক বিচার, জন্মের সময় অনুযায়ী লগ্ন আর রাশি নির্ধারণ, এই সমস্ত ক্রমশ লোকজন প্রবলভাবে মানতে শুরু করেছে। আর এও ভীষণভাবে সত্যি যে মহাকাশের নানান রহস্যময় জিনিসের সঙ্গে মানবজীবনের একটা যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র সেই রহস্যের কিছুটা কাছাকাছি যেতে পেরেছে বলে বিশ্বাস করেন এই শাস্ত্রের চর্চা যারা করেন তাঁরা। ফলে এই অদ্ভুত এক মহাজাগতিক সংযোগ মানুষকে প্রত্যয়ী করে তোলে।

চতুর্থত, জ্যোতিষে মানুষের বিশ্বাসের অন্যতম প্রধান কারণ হল ভরসা। এই অনিশ্চিত এক সময়ে যখন ব্যক্তিগত জীবনে ও পারিপার্শ্বিকতায় নানারকম দোলাচলতা নিয়মিত মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে তখন জ্যোতিষ গণনার মাধ্যমে বের হওয়া উপায় অবলম্বন করে আশ্বস্ত হতে চায় মানুষ। এই পর্যায়ে জ্যোতিষবিজ্ঞানের সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের যোগ দেখা যায় অবধারিতভাবে। ফলে যখন বিখ্যাত ফিল্মস্টার হাতে পাথরের আংটি পরেন, কিংবা জনপ্রিয় কোনও ব্যক্তি আরও সফলতা পাবার জন্য নিজের নামের বানানে অক্ষরের সংখ্যায় অদলবদল করেন তখন সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সেদিকে ঝুঁকে পড়েন।

পঞ্চমত, সারা পৃথিবীতে গত কয়েক হাজার বছরে এমন অনেক মানুষের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যাঁদের ভবিষ্যদ্বাণী আশ্চর্যভাবে মিলে গিয়েছে। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচাইতে বিখ্যাত জ্যোতিষী বা ভবিষ্যদ্বক্তা যিনি, তিনি নস্ট্রাডামুস। দুটি বিশ্বযুদ্ধ, মহামারি, অতিমারি এমনকি নরেন্দ্র মোদী আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের উল্লেখ অব্দি নাকি করে গিয়েছিলেন এই মানুষটি। এছাড়াও টলেমী, ব্বাভাঙ্গা,ইভাঞ্জেলিন অ্যাডাম, অ্যালান লিও প্রমুখেরা পৃথিবীর বিখ্যাত সব জ্যোতিষ হিসাবে নাম করেছেন।

gettyimages 587490996
biography.com