কথিত আছে পুরোহিত ছাড়া নাকি পূজা হয়না। ভক্ত ও ভগবানের মাঝখানে এই পুরোহিত নামক ব্যক্তিটি সেতুর মতন এসে ঈশ্বরের আবাহন ও আরাধনার মাধ্যমে ভক্তের সঙ্গে মিলিয়ে দেন।এজন্য ভক্তের ঠাকুরঘরে পুরোহিতের ভুমিকা বিশাল ও অতি – আবশ্যিক।কিন্তু এমন অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে পুরোহিতের উপস্থিতি নিতান্তই অপরিহার্য নয়। সেগুলি হল কেবলমাত্র মহিলাদের দ্বারা পালিত ও পরিচালিত বিশেষ কিছু পুজা বা ব্রত ।এই ব্রতগুলি উদযাপন করতে মহিলারা পুরোহিতের অপেক্ষা রাখেন না ।এক বা একাধিক মহিলারা মিলে এই ব্রত পারস্পরিক সাহচর্যে উদযাপন করেন।
লক্ষীপুজা

এর মধ্যে প্রধান হল লক্ষ্মীপুজা বা ব্রত । প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে সন্ধ্যাবেলায় এই ব্রত পালিত হওয়া আবশ্যক ।এই ব্রতের জন্য তিনজন বা পাঁচজন ‘এয়ো’-র উপস্থিতি প্রয়োজন ।‘এয়ো’ হলেন সেইসব মহিলারা যাঁদের স্বামী বর্তমান। এঁরা লক্ষ্মী দেবীর ব্রত পালনের জন্য একত্রিত হন ও কিছু বিশেষ বিশেষ নিয়ম পালনের মাধ্যমে ও কিছু উপকরণের সাহায্যে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা করেন।লক্ষ্মীপূজার প্রধান উপকরণ হল ‘মঙ্গলঘট ‘ —- যা হল একটি পিতলের জলপূর্ণ ঘটের উপর সাজানো আমের পল্লব ও শীষ – যুক্ত ডাব। ঘটের উপর সিন্দূর দিয়ে স্বস্তিক – চিহ্নও আঁকা যেতে পারে।এছাড়া শঙ্খ , ধানদূর্বা ,ধূপ , প্রদীপ , ফুল , ফল , মিষ্টান্ন ও পান – সুপারী এই পুজার অন্যতম আবশ্যক উপচার।
করবা চৌথ

মহিলাদের অপর একটি প্রধান ব্রত হল ‘করবা চৌথ ‘ যা প্রধানত উত্তর ভারতের নারীরা পালন করে থাকেন।এই পুজা তেও পুরোহিতের কোনোরূপ আবশ্যকতা নেই। ভারতের উত্তরাংশের পুরুষ রা যোদ্ধৃ – জাত হিসাবে পরিজ্ঞাত এবং তারা যখন যুদ্ধ জয় করে ফিরতেন তখন তাঁদের স্ত্রী গণ মহাগৌরব ও সমারোহে নিরম্বু উপবাস করে তাঁদের স্বাগত জানাতেন । সেই থেকে আজকের অত্যাধুনিক যুগেও এই ব্রত সমধিক প্রচলিত ।এই পুজা প্রধানত কার্তিক মাসের চতুর্থী তে পালিত হয়ে থাকে এবং এই ব্রতেও নারীরা মিলিত ভাবে পাঁচালী পাঠ করেন ও শোনেন।
এই ব্রতেও শস্য ও জল অন্যতম প্রধান উপচার।করবা চৌথ – এর চাঁদ দেখা বহু ভাগ্যের বিষয় , তেমনি যুদ্ধ জয় করে ফেরা বীরে রাও তাঁদের স্ত্রীদের কাছে বহু সাধনার ধন । সন্ধ্যাবেলায় এই চাঁদ দেখে বীর রমণীরা তাঁদের স্বামীদের আরাধনা করেন এবং প্রার্থনা করেন “পৃষ্ঠে যেন নাহি থাকে অস্ত্রলেখা” ।
যাইহোক, পুজার আর সমস্ত উপকরণ ও উপচার –এর পাশাপাশি ভক্তের কাছ থেকে যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ টি প্রত্যাশিত সেটি হল ঈশ্বরের প্রতি অকপট ও নিশ্চল ভক্তি ও বিশ্বাস। পুরোহিতের উপস্থিতি না মেনেও এই একটি উপকরণের সাহায্যে প্রকৃত ভক্ত অতি সহজেই তার আরাধ্য দেবতার পদতলে পৌঁছে যেতে পারে ।
আরো পড়ুন : পশ্চিমবঙ্গে তেলের খোঁজ