“যে তোরে পাগল বলে তারে তুই বলিস নে কিছু॥
আজকে তোরে কেমন ভেবে অঙ্গে যে তোর ধুলো দেবে
কাল সে প্রাতে মালা হাতে আসবে রে তোর পিছু-পিছু॥”
-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
একবিংশ শতাব্দীতে আজ আমরা সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে আমাদের ধারণা এখনো অনেকাংশেই পশ্চাত্পদ। মানসিক অসুস্থতা মানেই “পাগলামি” আর মানসিক রোগের চিকিৎসক মানেই “পাগলের ডাক্তার”, এই স্টিরিওটাইপ এখনো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে আছে। লোকলজ্জার ভয়ে, সমাজে এক ঘরে হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমাদের নিজেদের চারপাশের কত মানুষ নিজেদের মানসিক অসুস্থতা এখনও গোপন করে রয়েছে আমরা জানি না । কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে পৃথিবী বিখ্যাত এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সময় শিকার হয়েছেন মানসিক অসুস্থতার ।সমাজের চোখে সেই দিনের সেই ” পাগল” মানুষ গুলোর নাম-ই আজ রয়েছে ইতিহাসের পাতায়, তথাকথিত “সুস্থ” মানুষ গুলোর নামের বদলে।
এখানে রইলো পৃথিবী বিখ্যাত সেইসব মানুষের নাম যারা কোনো না কোনো সময় মানসিক অসুস্থতার শিকার হয়েছেন।
আব্রাহাম লিংকন

আব্রাহাম লিংকন_ এরকম খুব কম মানুষ আছে যে তাকে চেনে না,কিন্তু অনেকেই হয়তো এটা অজানা যে আমেরিকার এই ষোলতম প্রেসিডেন্ট বহুদিন পর্যন্ত ভুগেছিলেন ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের সাথে। দীর্ঘ বিষন্নতা আর বারবার আত্মহত্যার চিন্তা_এগুলোকে সঙ্গী করেই তার জীবনের অনেকগুলো বছর কেটে গেছিল।
ভিনসেন্ট ভ্যান গগ

ভিনসেন্ট ভ্যান গগ-এর ‘স্টারি নাইট’ পৃথিবী বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে একটি। এমন কোনো মানুষ নেই যে ভ্যানগগের ‘স্টারি নাইট’ ছবিটা দেখে মুগ্ধ হয়নি। কিন্তু এই মহান ডাচ শিল্পী একটি নয় একাধিক মানসিক অসুস্থতা আক্রান্ত ছিলেন। ডিপ্রেশন,বাইপোলার ডিসঅর্ডার,সিজোফ্রিনিয়াকে সঙ্গী করে তিনি দুনিয়া কে উপহার দিয়েছেন একের পর এক বিস্ময়কর চিত্রকলা।
চার্লস ডারউইন

চার্লস ডারউইন আর তার ‘যোগ্যতমের উদবর্তন তত্ত্ব’ সমগ্র বিশ্ববন্দিত। কিন্তু খুব কম মানুষই জানেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ছিলেন। যে যাত্রায় গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন বিবর্তনবাদের তত্ত্ব সেই যাত্রা থেকে ফিরেই তিনি সামাজিক জীবন থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল থেকে জানা যায় ডারউইন আগোরাফোবিয়া এবং প্যানিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিলেন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট

ছোটবেলার ইতিহাস বই থেকে যেই নামটার সাথে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত ‘নেপোলিয়ন বোনাপার্ট’, জানলে অবাক হতে হয় সে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার ছিল এটি এমন একটি ব্যাপক ও দীর্ঘকালস্থায়ী প্রবনতা যা মানুষে আচরণে বা চিন্তায় অপরের প্রশংসা পাওয়ার অত্যন্ত প্রবল চাহিদা এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতির তীব্র অভাব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
আইজ্যাক নিউটন

মহান বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন ,তিনি নাকি মারাত্মকভাবে মানসিক অসুস্থতায় ভুগে ছিলেন জীবনের বেশ কিছু বছর। তৎকালীন লেখকদের বৃত্তান্ত এবং মেডিকেল জার্নাল থেকে জানা যায় ইংরেজ বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের বাইপোলার ডিসঅর্ডার ছিল। শুধুমাত্র তাই নয় নিজের জীবনের বেশ কিছু বছর ধরে ক্রনিক ডিপ্রেশনের কারণে তিনি বারবার ডিলিউশন এবং হ্যালুসিনেশনের শিকার হয়েছিলেন।
লিও টলস্টয়

সমগ্র পৃথিবীর সাহিত্যপ্রিয় মানুষের জীবনের সাথে যেই লেখক একান্তভাবে জড়িত, তিনি লিও টলস্টয়। শুনতে অবাক লাগলেও লিও টলস্টয় বহুদিন ধরে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের সাথে লড়াই করেছেন। অন্যতম সেরা রচনা ‘War and Peace” শেষ করার পর থেকে তিনি মারাত্মকভাবে ডিপ্রেশনের ঘেরাটোপে জড়িয়ে পড়েন এবং পরিস্থিতি আরো জটিল হয় তাঁর অন্যতম বিশ্ব বিখ্যাত লেখা Anna Karenina শেষ হওয়ার পরে।ভাবা যায় আমরা নিজেদের বিষণ্নতা কাটাতে যে লেখক এর রচনার সাহায্য নিয়েছি বারবার তিনি কোন চরম বিষন্নতার মুহূর্তে সৃষ্টি করেছিলেন সেই রচনা।
এরিস্টটলের কথাটা মানতে দ্বিধা নেই আর “No great genius has existed without the strain of madness “