এ বছরে শীতকালে জমিয়ে শীত পড়েছে কলকাতায় । আলমারি থেকে বেরিয়ে পরেছে লেপ, কাথা ও কম্বল। সকাল বেলা এই ঘুম থেকে ওঠা যুদ্ধ করার থেকে কিছু কম নয়। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সময় একটু বেশিই ঘুম পায়। এমনকি এই সময় অনেকেই আবার শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভীষণ ক্লান্তি অনুভব করে থাকেন। ফলে আলসেমি বেড়ে যায়।গবেষকদের মতে ঋতুভেদে স্বাভাবিকভাবে শারীরিক এবং মানসিক দিক দিয়ে পরিবর্তন আসে। ভীষণ অলস হয়ে পরে অনেকে। আপনি কি জানেন এই শীতের সময় ঘুম অথবা আলসেমি বেড়ে যাওয়ার কারণ কি ? তাহলে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ঠিক কেমন তা জেনে নেওয়া যাক।

শীত

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋতুভেদের পাশাপাশি শরীর ও মনের বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। তবে শীতের সময় যে কারণে ঘুম বাড়ে সেগুলো হল –

শীতকালে সূর্যের আলোর অভাব:

শীত কালে দিন খুব ছোট হয়ে যায় ফলে কাজের মধ্যে বেশ একটু পরিবর্তন আসে। গবেষকরা বলছেন দিন ছোট হওয়ার বিষয়টি বা সূর্যের আলোর ঘাটতি মস্তিষ্ক থেকে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়ায়। যে কারণে প্রায়ই একটা ঝিমুনি ভাব লেগেই থাকে । আলো ও আঁধারের সঙ্গে এই হরমোন তৈরির যোগ রয়েছে। শীতে দিন ছোট, সূর্যের আলো কম পাওয়া যায় এবং রাত বড় হয়। তাই শরীর বেশি ঘুমাতে চায়।

ভিটামিন ডি’র অভাব :

সূর্যের আলো ভিটামিন ডি’র অন্যতম উৎস। এটি পেতে সকালের আলোতে যেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। শীতে ঘর থেকে কম বের হওয়া হয় বলে ভিটামিন D এর অভাব হতে পারে। এতে শরীর ক্লান্ত লাগে। তেলযুক্ত মাছ, স্যামন, সারডিন, ম্যাকরেল ইত্যাদি খেতে পারেন। ডিমও ভিটামিন ডি’র আরেকটি উৎস। পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে কীভাবে ডিম খাবেন, জেনে নিন। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব :

ভালোভাবে না ঘুমালেও বেশি ঘুম পায়। অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম শরীর চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী ঘুমান। ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার সময় ঠিক রাখুন।

কিন্তু শীতকাল বলে কি আর কাজ কর্ম না করলে চলবে ? তাহলে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় তো খুঁজতে হবে। সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে ঘরে আলো প্রবেশের জন্য জানালা খুলে দিন। বেশিরভাগ সময় সূর্যের আলোর কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে কাজের সময় পরিবর্তন করুন। কাজের জায়গায় আলো বেশি রাখার চেষ্টা করুন। ঘুম থেকে ওঠার পর সূর্যের তরঙ্গের সঙ্গে মানবদেহের ওপর পরলে তা শরীরের জন্য খুবই ভালো। এজন্য সারদিনই শরীর স্বাস্থ্য সতেজ ও চনমনে থাকে।

শীত

রাতে হালকা খাবার খেয়ে ঘুমানরাতের খাবার হালকা হলে তা হজম হতে সুবিধা হয়। বেশি খেলে শরীর ভারী হয়ে যায়। ফলত সকালে ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না। অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার বা মিষ্টি খাওয়া বর্জন করুন। রাতের খাবার যত হালকা হবে শরীর তত ইজি বোধ হবে এবং বিছানা ছেড়ে উঠতে সুবিধা হবে।

অনেকেই অ্যালার্ম সেট করে শুলেও হাতের কাছে থাকা ফোন বা ঘড়ির অ্যালার্ম বাজলেই তা বন্ধ করে আবার পাড়ি দেন ঘুমের দেশে। অ্যালার্ম দেয়া ঘড়ি বা ফোন যেখানে ঘুমাচ্ছেন সেখান থেকে দূরে রাখলে অ্যালার্ম বন্ধ করতে বিছানা ছেড়ে উঠতেই হবে! আর কিছু উপায় থাকবে না তখন। বিছানা থেকে একবার উঠে অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার বিছানায় ফিরে ঘুমানো সম্ভব হয় না। ফলে ঘুমঘোর কেটে যাবে।

ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস জল খানরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অন্তত এক গ্লাস জল খেলে মূত্রাশয়ে চাপ পড়বে। সকাল সকাল তাই বাথরুমে যাওয়ার দরকার হবে। সঙ্গে ঘুমও বিদায় হবে। তাই বলে ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত জল খাওয়া উচিত নয়। ঘুম ভাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গেই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ুন ভেঙে গেলেও আলস্যের জন্য আমরা বিছানায় শুয়ে থাকি। ঘুমের ঘোর ঘুম ভাঙার পরও থাকে বলে বিছানায় থাকলে আবারও ঘুমিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ঘুম ভাঙলে সঙ্গে সঙ্গেই বিছানার মায়া ছেড়ে উঠে পড়তে হবে। নইলে আরও ঘুম পাবে এবং সারাদিন একটা ঝিমুনি ভাব থেকে হবে শরীরে।