নিজস্ব সংবাদদাতা: গত রবিবারই ফলপ্রকাশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের। যেখানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে তৃতীয়বার রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। প্রবল বিজেপি হাওয়া থাকা সত্ত্বেও সফল হয়নি তারা। তবে সত্তরের বেশি আসন সংখ্যা নিয়ে বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দল তারাই। এদিকে, এরমধ্যেই বিধানসভার ইতিহাসে অনন্য নজির গড়লেন নাটাবাড়ির দলবদলু বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী। গতকাল বিধানসভায় এসে শপথপাঠ করার সাথে সাথেই এই রেকর্ডটি অর্জন করেন তিনি। এই নিয়ে ৩ বার ৩টি দলের হয়ে বিধানসভার সদস্য হলেন মিহির বাবু।
৩ বার দলবদল করেও বিধানসভার সদস্য হওয়ার নজির গড়ার প্রশ্নে স্মিত হেসেছেন নাটাবাড়ির নবনির্বাচিত বিধায়ক। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী। তিনি যখন যে পথে নিয়ে গিয়েছেন, সেই পথেই চলেছি। আমার এমন পথচলার কথা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন।’’ উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকে যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী বলেই উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে পরিচিতি ছিল মিহিরের। সর্বপ্রথম ১৯৯৬ সালে কোচবিহার উত্তর আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হন তিনি। প্রথম বার দাঁড়িয়েই জয়লাভ করেন। সে বার কংগ্রেসের টিকিটে তাঁর বিধানসভায় অভিষেক হয়। কিন্তু ২০০১ এবং ২০০৬-এ ওই কেন্দ্রেই তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা দীপক সরকারের কাছে পরাজিত হন।
এরপর ২০১৬ সালে কোচবিহার দক্ষিণ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হন মিহির। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দেবাশিস বণিককে হারিয়ে ১৫ বছর পর বিধানসভায় প্রত্যাবর্তন হয় তাঁর। কিন্তু ধীরে ধীরে দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। ফলে ২০২০ সালের শেষের দিকে তৃণমূল ছেড়ে যোগ দেন বিজেপি-তে। রাজ্যে ক্ষমতা অর্জনের লড়াইয়ে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় দেখা যায়, কোচবিহার দক্ষিণের বদলে নাটাবাড়ি কেন্দ্রে রাজ্যের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিরুদ্ধে তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। নতুন কেন্দ্রে কেমন ফলাফল হবে, সেই নিয়ে খানিক চিন্তায় ছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, ফল প্রকাশ হতেই দেখা যায়, বিধানসভা ভোটে চাহিদা অনুযায়ী একদমই আশানুরূপ ফল হয়নি বিজেপির। হাতে গোনা দু’-চার জন ছাড়া তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া দলবদলু প্রায় সব নেতাই হেরে গিয়েছেন। কিন্তু উত্তরবঙ্গে নতুন আসনে দাঁড়িয়েও জয়লাভ করেন মিহির বাবু। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থীকে ২৩ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে বিজেপির বিধায়ক হয়েছেন। আর শুক্রবার তিনি শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি হল নতুন নজির।