“এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই”

images 44 5
Eisamay

ছুটির দিনে ঘুম ভেঙে এক কাপ ধোঁওয়া ওঠা চায়ের সুঘ্রাণ নিতে নিতে নস্টালজিয়ায় হারাতে কার না ভালো লাগে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চা, বিকেলে অফিস থেকে ফিরে চা, সন্ধ্যেই আলসেমিতে চা, রাত্রি জাগার ক্লান্তিতে চা…

আন্তর্জাতিক চা দিবস:-

images 46 5
Quotes of life

আজ ১৫ ই ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক চা দিবস। চা উৎপাদনকারী দেশগুলি যেমন ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, ভিয়েতনাম, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, উগান্ডা, তাঞ্জেনিয়া ২০০৫ সাল থেকে দিনটি পালন করে৷ প্রথম আন্তর্জাতিক চা দিবস পালন করা হয়েছিল দিল্লিতে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:-

বিশ্বজুড়ে সরকার ও নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই আন্তর্জাতিক চা দিবসের মূল লক্ষ্য। বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রভাব সরকার ও জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং চা শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারীদের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন ও সংযুক্তিকরণ ঘটানোর জন্যই এই দিনটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালে ভারত সরকার প্রস্তাব দেয় ইউ এন ফুড অ্যান্ড এগরিকালচার অর্গানাইজেশন মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চা দিবস পালনটা আরও সম্প্রসারিত করার জন্য৷

এ হেন চা নিয়ে আমরা আজ চা দিবসে কিছু কথা জেনে নিই চলুন…

১. চা পানের সূচনা:-

চা
উইকিপিডিয়া

আনুমানিক ২০০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে চা পান শুরু হয় চিনেই। কথিত আছে, চীনা রাজা শেন নাং চা নামক পানীয়টি উদ্ভাবন করেন। তিনি ছিলেন খুব স্বাস্থ্যসচেতন। একবার তিনি ডিক্রী চালু করলেন যে, প্রজাদের সবাইকে জল ফুটিয়ে পান করতে হবে। একদিন বিকেলে রাজকার্যের ক্লান্তি দূর করার জন্য ক্যামেলিয়া গাছের নিচে বসে সম্রাট ফুটানো গরম জল পান করছিলেন, কোত্থেকে সেই গরম জলে এসে পড়লো কয়েকটি অচেনা পাতা! আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, সেই পাতার নির্যাসে জলের রং বদলাতে লাগল।


কৌতূহলী রাজা শেন নাং সেই নির্যাস সহ জল পান করলেন। এবং লক্ষ্য করলেন, সেই জল খেয়ে রাজার ঘুম ঘুম ভাব কেটে গেলো, ক্লান্তি দূর হলো। আর একই সাথে সে পাতার স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়… যার স্বাদ সম্রাটকে খুশি করল!
তিনি পাতার উৎস সন্ধানে লোক লাগালেন।
এরপর অনেক খুঁজে পাওয়া গেল পাতাটির উৎস- “Camellia Synesis”

চা
Pinterest

চা পাতা প্রক্রিয়াকরণ:-

Assam
উইকিপিডিয়া

প্রথমে চা বাগান থেকে চায়ের দুটি পাতা একটি কুঁড়ি সংগ্রহ করার প্রক্রিয়াকে প্লাকিং বলা হয়। প্লাকিং সাধারণত হাতে বা মেশিনের সাহায্যে করা যায়।
বাগান থেকে সংগ্রহ করা দুটি পাতা একটি কুঁড়ি ৮-১০ ঘণ্টা রেখে দেয়া হয়। যাতে করে আর্দ্রতা হ্রাস পায়। যখন পাতাগুলি মলিন হতে শুরু করে। তখন বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন হয়।
এরপর চায়ের পাতাগুলি খুব ছোট ছোট করে কাটা হয়। এই কাটা কাজটি করা হয় CTC মেশিনের সাহায্যে। রোলিং এর সময় পাতার কোষ প্রাচীরগুলি ভেঙ্গে যায়। ফলে পলিফেনল এবং পলিফেনল অক্সিডেজ এনজাইম একত্রিত হয়ে মিশ্রিত হয়।


এরপর চায়ের পাতাগুলিকে ১ থেকে ২ ঘণ্টার জন্য বাতাসের উপস্থিতিতে জারিত হবার জন্য রেখে দেওয়া হয়। এই জারণের জন্য চায়ের রঙ কালচে হয়ে থাকে। এই ধাপেই থিয়োরুবেজিন ও থিয়োফ্লাবিন তৈরি হয় যা চায়ের গুনগত মান প্রকাশ করে থাকে।
তারপর চা পাতাগুলিকে গুগি শিফটারের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। ফলেই চা পাতাগুলি দানাদার আকার ধারণ করে।
এরপর চা পাতাগুলিকে ড্রায়ারের সাহায্যে শুষ্ক করা হয়ে থাকে। শুকানোর পরে চা পাতার আদ্রর্তা হয় ৩-৪%।
সবশেষে চাকে বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করা হয়।

উইকিপিডিয়া:-

https://www.google.com/url?sa=t&source=web&rct=j&url=https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%25E0%25A6%259A%25E0%25A6%25BE_%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%2595%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25AF%25E0%25A6%25BC%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%259C%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25A3&ved=2ahUKEwiX_uT3n8_tAhWbSH0KHfBBBjMQFjAAegQIARAB&usg=AOvVaw3SO9ErUOFUGxn2-aErndwB&cshid=1608010854695

বোস্টন টি পার্টি:-

youtube

তবে এই চায়ের সাথে শুধুই কী অবসর যাপন জড়িয়ে আছে? না চায়ের সঙ্গে জড়িয়ে বিপ্লবও…চায়ের উপর আরোপ করা অতিরিক্ত করের জন্য ১৭৭৩ সালে আমেরিকার বোস্টন শহরের বাসিন্দারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল। রাতের অন্ধকারে ব্রিটিশ জাহাজে অভিযান চালিয়ে প্রচুর চা পাতা ফেলে দেওয়া হয়েছিল। বোস্টন টি পার্টির কথা আমরা সকলেই ইতিহাসে পড়েছি।
বোস্টন টি পার্টি ছিল বোস্টনে সন অব লিবার্টিদের একটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ, ১৬ ডিসেম্বর, ১৭৭২ সালে। অংশগ্রহণকারীরা, কেউ কেউ আদিবাসী মার্কিনীদের ছদ্মবেশে, ১০ই মে, ১৭৭৩ সালের চা আইনের বিরোধিতায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক প্রেরিত চায়ের একটি গোটা চালান ধ্বংস করে দেন। তারা জাহাজে উঠে পড়েন এবং চায়ের সিন্দুকগুলো বোস্টন পোতাশ্রয়ে ছুড়ে ফেলেন। 

অনেকেই চুকচুক শব্দ করে চা খেতে পছন্দ করেন। আপনি বলতেই পারেন, কোনো ম্যানার্স নেই… কিন্তু চা বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন শুনবেন…? তারা বলছেন, চায়ের স্বাদ এবং ঘ্রাণ মন খুলে নিতে চাইলে এই ভাবেই চা খাওয়া উচিত। তবেই আপনার মনের রন্ধ্রে ঢুকবে চায়ের প্রতি ভালোবাসা। তবে মাঝে মাঝে আপনিও ম্যানার্স মাঝে মাঝে ভুলে যান, আন্তর্জাতিক চা দিবসে একটু মন খুলে চা পান করুন।