নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলায় নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে, রাজ্যের ক্ষমতায় আসতে গত কয়েকমাস ধরে একাধিকবার প্রচারে এসেছেন মোদী-শাহরা। এদিকে, নন্দীগ্রামে বাঁ পায়ে গুরুতর চোট পাওয়ার পর থেকে সেই ব্যান্ডেজ বাঁধা পা নিয়েই জেলা সফর করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাপমাত্রার থেকেও অনেক বেশি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রাজ্যে নির্বাচনী উষ্ণতা। আর এই ভোটে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে বিরোধী শিবির অন্যতম অস্ত্র করেছে আমফান দুর্নীতিকে।

ভোট প্রচারে এসে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও তৃণমূলকে নিশানা করেছেন এই নিয়ে। আর এই আবহেই আগামী পয়লা এপ্রিল ভোট হতে চলেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ ও সাগরে। এই চার বিধানসভার মানুষই সবচেয়ে বেশি দেখেছিল ঘূর্ণিঝড় আমফানের রুদ্রমূর্তী। তারপর কেটে গিয়েছে দশমাস। এবার জনমত পাবেন রাজনৈতিক দলগুলি। আমফান বিধ্বস্ত চার বিধানসভার ভোটাররা এবার কী উত্তর দেবে, সেটাই শাসক শিবিরের কাছে কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার অনেক জায়গাতেই জীবনযাত্রা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ২০২০ সালের ১৬ মে চোখের সামনে ধ্বংসলীলা দেখেছে রাজ্যের উপকূলবর্তী এই এলাকা। আমফান নাড়িয়ে দিয়ে গেছিল শহর কলকাতাকেও। মেট্রো সিটি হওয়ার পরেও বিদ্যুৎ-জলহীন ভাবে দিন কাটাতে হয়েছে শহরবাসীকে। কলকাতার নানা প্রান্তে ভেঙে পড়েছিল বিশাল বিশাল গাছ। এই অবস্থায় সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা ও গোসাবার মত উপকূলীয় জায়গাগুলির পরিস্থিতি কী হতে পারে সহজেই অনুমেয়। ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল গোটা অঞ্চল। যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে ছিল প্রাণহানিও।

সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, সাগর, পাথরপ্রতিমা, গোসাবা জুড়ে ছিল শুধু ধ্বংসের ছবি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সাগর ও পাথরপ্রতিমায়। এই দুই অঞ্চলে ঝড়ের গতিবেগ ছিল রাজ্যে সর্বোচ্চ। লক্ষাধিক বাড়ির টিন, অ্যাসবেস্টস ও খড়ের চাল উড়ে গিয়েছিল। প্রচুর গাছ ভেঙেছিল বা উপড়ে পড়েছিল। নদী ও সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছিল একাধিক গ্রাম। বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে জলবন্দী হয়ে পড়েছিলেন বহু মানুষ। কয়েক হাজার বিদ্যুতের খুঁটি উপড়েছিল। ভেঙেছিল ট্রান্সফর্মারও, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎহীন ছিল চার বিধানসভা এলাকাই। মোবাইল নেটওয়ার্কও ছিল না। সাগরের কচুবেড়িয়া, নামখানার হাতানিয়া–দোয়ানিয়া নদীর জেটি–সহ একাধিক জেটি ভেঙে গিয়েছিল।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আমফানে যাদের ঘর ভেঙেছে তাদের ২০,০০০ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। নবান্নে দাঁড়িয়ে এই ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টাকা যেন নিরপেক্ষভাবে বণ্টন হয় সেজন্য একটি টাস্ক ফোর্সও গঠন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, এরপরেও অভিযোগ ওঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়ে একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি তৈরির টাকা পাননি। কিন্তু সেই টাকা গেল কোথায়? তারপরই ত্রাণ বন্টনে রাজ্যের সর্বত্রই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির ভূরি ভুরি অভিযোগ ওঠে।

যার ফলে জেলায় জেলায় শুরু হয় বিক্ষোভ। পরিস্থিতির চাপে পড়ে পদক্ষেপ করতে কার্যত বাধ্য হয় সরকার। শোকজ কিংবা বহিষ্কার করা হয় শ’খানেক তৃণমূল নেতা-পঞ্চায়েত প্রধানকে। আর আমফানের ত্রাণে দুর্নীতিকেই এবার শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র করেছে বিরোধীরা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভোট প্রচারে এসে বারবার আমফান দুর্নীতি নিয়ে বিঁধছেন তৃণমূলকে। শাসক শিবিরের দুর্নীতিকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের নাম দিয়েছেন, ট্রান্সফার মাই কমিশন। মোদীর কথায়, আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা থেকেও কমিশন নিয়েছে তৃণমূল। দুর্যোগের সময়ও দুর্নীতি বন্ধ করেনি ওরা। তৃণমূল পার্টি অফিসে টাকা জমা দিলে তবে ক্ষতিপূরণ মিলেছে। ক্ষয়ক্ষতি না হলেও এভাবেই টাকা পেয়েছেন অনেকে।