নিজস্ব সংবাদদাতা: সতর্কতা প্রথম থেকেই ছিল। তবে তাতে গ্রাহ্য করেনি কেন্দ্র। মার্চের মাঝামাঝি থেকে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ যে গোটা দেশেই এমন ভয়ানক আকার নিতে পারে, তা হয়তো ভাবতেই পারেননি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য কর্তারাও। যার ফলে প্রস্তুতিতে খামতি থেকে গিয়েছে। আর এই গাফিলতিতে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে করোনা। তাই আন্তর্জাতিক গণস্বাস্থ্য সংস্থাগুলিও বলছে, প্রথম দফার সংক্রমণ কমে আসার পর মোদী সরকার যে ভাবে আনন্দে লাফালাফি শুরু করেছিল, তাতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সতর্কতা তারা কানেই তোলেনি। আর এখন তারই ফল ভুগতে হচ্ছে মানুষকে। বর্তমানে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে আজ সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে- আগামী দিনে মূলত গ্রামীণ ভারত ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যার ফলে একেবারে শেষ হয়ে যেতে পারে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা।

গত জানুয়ারি মাসেই গোটা দেশে রক্ত বা সেরো সমীক্ষা করেছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ। তখনই দেখা গিয়েছিল, করোনা সংক্রমণের প্রথম ধাক্কায় দেশের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ পলের কথায়, “তখনই বোঝা গিয়েছিল, ভবিষ্যতে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ এই মারণ ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হতেই পারেন।” ভারতের মতো জনবহুল দেশে ৮০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষের আক্রান্ত হলে, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা নির্ণয় করা যে কতটা দুঃসাধ্য ব্যাপার, তা একপ্রকার স্বীকার করেই নিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। বিনোদ পলের কথায়, সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধাক্কায় কত লোক এ দেশে আক্রান্ত হতে পারে, কোনও মডেলের পক্ষেই তার কোনওরকম প্রকৃত পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি।

বিনোদ পলের কথায়, “করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় এভাবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য সরকারের পাশাপাশি একইভাবে দায়ী সাধারণ মানুষজনের ভূমিকাও। মাস্ক না পরা, সামাজিক দূরত্ব না মানা, কোভিড প্রটোকল মেনে না চলার ফলেও করোনা এভাবে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। আমজনতা সঠিকভাবে নিয়ম মেনে চললে এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। করোনা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হত। সরকার মানুষকে কোভিড সতর্কবিধি মেনে চলার কথা বললেও জনতার বড় অংশ তাতে কর্ণপাত করেননি।” তবে করোনা চলে গিয়েছে, করোনার বিরুদ্ধে জয় পাওয়া গিয়েছে- মোদী সরকারের এই মনোভাবও অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক গণস্বাস্থ্য সংস্থাগুলি।

গত ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশে করোনা সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছিল। যা মার্চের শেষে এসে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মে মাসে গোটা দেশে সংক্রমণের চিত্র কতটা খারাপ হতে পারে, সেই সময়ে তা কেউই আঁচ করতে পারেননি। এপ্রিল মাসে পৌঁছে কোনও কোনও মডেল পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেওয়া শুরু করে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী এক-দেড় মাস গ্রামীণ ভারত মূলত বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় দেখা যাচ্ছে, মাঝারি ও ছোট শহর পেরিয়ে সংক্রমণের ঢেউ ছোট শহর বা গ্রামীণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। বিনোদ পল বলেন, “অতিমারির সময়ে যে কোনো সংক্রমণ এ ভাবেই ছড়ায়। শহরে ছড়ানোর নতুন জায়গা না পেলে সংক্রমণ তখন গ্রামীণ এলাকায় এগোতে থাকে। আর এর পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকদের শহর থেকে গ্রামে ফিরে যাওয়াও এই প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে।”