বিদেশে গিয়ে পড়াশোনার পরও কতজন নিজের দেশের মাটিকে মনে রাখে? কতজনই বা শিকড়ের টানে ফিরে আসতে পারে নিজের মাতৃভূমিতে? তিনি পেরেছেন। দেশের গরিব, অসহায় কৃষকদের জন্য কাজ করতে চেয়ে হেলায় ছেড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার লক্ষাধিক টাকার ফেলোশিপ। এমনকী দেশে চলে আসার পরেও ফিরিয়ে দিয়েছেন মোটা মাইনের চাকরি। শুধুমাত্র দেশের দুঃস্থ কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন সময় ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রত্যন্ত এলাকায়।


গত প্রায় দু’মাস ধরে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লী সংলগ্ন সীমানাগুলিতে যে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন কৃষকরা, তাঁদের সেই দাবি আদায়ে আপাতত গোটা দেশজুড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন বছর ষাটের ডঃ সুনীলম। রাজধানীকে স্তব্ধ করে দিতে অন্যান্য সাধারণ কৃষকের পাশাপাশি তিনিও সমানতালে নিজের ভূমিকা পালন করে চলেছেন। ক্রমশ হয়ে উঠছেন কৃষক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ।
নিজের ছাত্রজীবনে বায়ো-মেডিক্যাল ইলেক্ট্রনিকসে পিএইচডি করা ডঃ সুনীলমের আসল নাম সুনীল মিশ্র। কিন্তু পদবির জেরে যাতে জাতিগত বৈষম্য প্রকট না হয়ে পড়ে, সেই উদ্দেশ্যে নিজের পদবি ব্যবহার করেন না। তার পরিবর্তে শুধু সুনীলম লেখেন। দিল্লী সীমান্তে কৃষক বিক্ষোভ স্থলগুলিতে এই নামেই পরিচিত তিনি। বললেন, “আমি রাম মনোহর লোহিয়া, বাবাসাহেব বি আর আম্বেদকরের অনুগামী। তাঁদের জীবন আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। আমার পদবি যাতে জাতপাতের সমস্যাকে উস্কে দিয়ে আর পাঁচজনকে বিড়ম্বনায় ফেলে না দেয়, সেই কারণেই আমার এমন সিদ্ধান্ত।”


কৃষক আন্দোলন চলাকালীন বিগত প্রায় দু’মাসে এই কৃষক নেতা ঘুরে বেড়িয়েছেন দিল্লী-হরিয়ানার সিঙ্ঘু, তিক্রি সীমানা, দিল্লী-উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর সীমানায়। কৃষকদের অবস্থান-বিক্ষোভেও সামিল হয়েছেন। কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে মূলত তাঁরই নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশের মুলতাইয়ে শুরু হয়েছে কৃষক আন্দোলন। এই মুহূর্তে কিষান সংঘর্ষ কমিটির নির্দেশে ডঃ সুনীলমের অবস্থান মুলতাইয়ে। তিনি জানালেন, “২৬ জানুয়ারি ট্রাক্টর প্যারেডের আগেই ফের দিল্লী সীমানায় কৃষকদের সঙ্গে যোগ দেব।”


চাইলে ঈর্ষণীয় কেরিয়ার তৈরি হতে পারত। পরিবর্তে রাজধানীর সীমানায় ঘুরে ঘুরে রাতদিন এক করে রাস্তায় কাটাতে হচ্ছে। কখনও কি পিছন ফিরতে ইচ্ছে হয়? একটু শান্তিতে জীবন কাটাতে মন চায়? ডঃ সুনীলমের সপাট জবাব, “কোনও আফশোস নেই। নিজের জীবনে আমি এখনও ভীষণভাবে সুখী। সমাজের জন্য এভাবেই কাজ করতে চেয়েছিলাম। দরিদ্রদের জন্য লড়াই করার মানুষ এখনও অনেক কম। যদি আমায় দেখে আরও কেউ এগিয়ে আসেন, সেটাই আমার সাম্মানিক।” পাশাপাশি তিনি জানালেন, কৃষক আন্দোলন ১০০ শতাংশ সফল হবে। কেন্দ্র এই দাবি মানতে বাধ্য হবেই।