কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পাঞ্জাব হরিয়ানা সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে অসংখ্য কৃষক নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য পারি দিয়েছেন দিল্লির উদ্দেশ্যে। অন্নদাতা কৃষকদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই।

কৃষি আন্দোলন নিয়ে যখন উত্তাল দেশের পরিস্থিতি, ক্যালেন্ডার বলছে তখনই আসতে চলেছে কৃষক দিবস বা Farmers’ Day. এ যেন এক কাকতালীয় সমাপতন। বছর শেষের লগ্নে তাই রইল কৃষক দিবস নিয়ে কিছু কথা।

কিষান বা কৃষক দিবস কী?

বাবা, মা, ভাই, বোন থেকে শুরু করে প্রেম, সব কিছুর মতোই কৃষকদের জন্যেও ধার্য করা হয়েছে একটি বিশেষ দিন। তবে পৃথিবীর সমস্ত দেশের জন্য কৃষক দিবসের তারিখটা এক নয়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে এই কৃষক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। উদ্দেশ্য অবশ্য একটাই- কৃষকদের কাজকে, তাঁদের পরিশ্রমকে যথাযথ সম্মান জানানো। তাঁরাই যে অন্নদাতা, এক অর্থে দেশের মূল চালিকাশক্তি সেই কথাই আরো একবার তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় কৃষক দিবসের বিশেষ দিনে। কৃষকদের সারা বছরের খাটনির প্রতি একটা দিন কৃতজ্ঞতা জানানোর সামান্য প্রয়াস হল কৃষক দিবস।

ভারতে কৃষক দিবস কবে?

বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও প্রতি বছর উদযাপন করা হয় কৃষক দিবস। প্রতি বছর ২৩ ডিসেম্বর দিনটিকে ভারতের কৃষক দিবস বা কিষান দিবস হিসেবে ধার্য করা হয়েছে। ভারত কৃষি নির্ভর দেশ। দেশের নানা প্রান্তে সময়ের সাথে সাথে শিল্প কলকারখানা প্রযুক্তি ডালপালা বিস্তার করলেও আজও কৃষিই ভারতের মূল ভিত্তি। তাই ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে কৃষক দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।

কেন ২৩ তারিখ পালিত হয় কৃষক দিবস?

বস্তুত, ভারতে কৃষক দিবস পালনের জন্য যে দিনটি ধার্য করা হয়েছে তার পিছনে কিন্তু আছে একটি বিশেষ কারণ। ২৩ ডিসেম্বর ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংয়ের জন্মদিন। ১৯৭৯ সালে তিনি স্বাধীন ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জনতা পার্টির সদস্য এই চৌধুরী চরণ সিংকে বলা হয় ভারতীয় কৃষকদের কান্ডারী। চরণ সিং নিজেও ছিলেন একজন কৃষক নেতা। ভারতীয় কৃষকদের উন্নয়নের জন্য একাধিক কর্মসূচি তিনি গ্রহণ করেছিলেন। কৃষকদের কল্যাণই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। এই কারণে চৌধুরী চরণ সিংয়ের জন্মদিনটিকেই ভারতে কৃষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর মাধ্যমে কৃষক নেতা চরণ সিংকেও জানানো হয় শ্রদ্ধার্ঘ্য।

কীভাবে পালিত হয় কৃষক দিবস?

প্রতি বছরের শেষে যখন বিভিন্ন প্রান্তে ক্রিসমাসের উৎসবের আবহে সেজে ওঠে গোটা দেশ, তখন দেশের কৃষকদের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কিছু সংস্থা। ক্রিসমাস নয়, কৃষক দিবসই তাঁদের কাছে বছর শেষের উৎসব। বিভিন্ন জায়গায় সেমিনার, বিতর্ক সভা, ক্যুইজ প্রতিযোগিতা , ওয়ার্কশপ প্রদর্শনী বা আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এমনকি কৃষক দিবস উপলক্ষ্যে বাদ যায় না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এভাবেই প্রতি বছর দেশের কৃষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান দেশের মানুষ।