বর্তমানে ডাইবেটিস যেন মহামারির আকার ধারণ করেছে। ডায়াবেটিসের সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয়টি হলো এই রোগ একবার ঝাঁকিয়ে বসলে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ভোগায়। তবে এমন কিছু মোক্ষম উপায় রয়েছে যেগুলো নিয়মিতভাবে মেনে চললে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাহলে চলুন জেনে নি সেই উপায়গুলি কি কি।

১. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
দেহের ওজন স্বাস্থ্যকর মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত রাখার মধ্য দিয়ে শুধু ডায়াবেটিসই নয় বরং আরো নানা ধরনের রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৭০% কমে আসবে।

2) ডাইবেটিস রুখতে বেশি করে স্যালাড খান
প্রতিদিন দুপুরে বা রাতে খাওয়ার আগে গাজর, শসা, লেটুস, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি দিয়ে অন্তত একবাটি স্যালাড তৈরী করে খান। স্যালাডে এক চা চামচ ভিনেগারও দিতে পারেন। ভিনেগার রক্তকে সুগার শোষণে সহায়তা করে। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিসের আশংকা কমে থাকে।

3)রোজ হাঁটাহাঁটি করুন
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে হাঁটাহাঁটি অত্যন্ত উপকারী একটি ব্যায়াম। প্রতিদিন অন্তত ৪০মিনিট হাঁটাহাঁটি করলেই আপনার বিপাকীয় হার দেহে ইনসুলিনের মাত্রাকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রাখবে। ফলে ডায়াবেটিসেরও ঝুঁকিও কমে আসবে।

4)পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার খান
ওটমিল, বার্লি, ব্রাউন রাইস, ভুট্টা, বাজরা ইত্যাদি পূর্ণ শস্য জাতীয় খাদ্য দিয়ে সকালের ব্রেকফার্স্ট করুন। পূর্ণ শস্য জাতীয় খাদ্যে আছে আঁশ, যা রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া পূর্ণ শস্যজাতীয় খাদ্য কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগ কমাতেও সহায়ক।

5)পর্যাপ্ত পরিমাণে কফি পান করুন
গবেষণায় প্রমাণিত, প্রতিদিন অন্তত দুই কাপ কফি পান করলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের আশংকা অনেকটাই কমে যায়। কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এই কাজ করে। তবে চিনি ছাড়া কফি পান করতে হবে।

6) ব্রাউন রাইস খান
হোয়াইট রাইস বা সাদা ভাত বাঙালীর প্রধান খাদ্য। কিন্তু মাথায় রাখবেন এটি একটি উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সম্পন্ন খাবার। এটি আপনার ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই সাদা ভাতের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস বা অন্যান্য খাদ্যশস্য খান, এতে আপনার সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

7)ফাস্টফুড থেকে বিরত থাকুন
আমাদের কাছে এখন ফাস্টফুড খুব সাধারণ খাবারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু ফ্রাইস, পিজ্জা, বার্গার এর মতো ফাস্ট এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে স্থুলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল, হজমে সমস্যা এবং হৃদরোগের মতো রোগ দেখা দিতে পারে। এসব খাবার দেহে ইনসুলিনের মাত্রায়ও কমবেশি করে দিতে পারে। এর ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

8) দারুচিনি খান
দারুচিনি তেল বা পাউডার আকারে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৪৮% কমে আসে। গবেষণায় জানা গিয়েছে অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা কমিয়ে আনার প্রাকৃতিক রয়েছে দারুচিনির। আর এই দুটি উপাদান প্রাকৃতিক ভাবে কমিয়ে আনতে পারলে রক্তে সুগারের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

9) নিজেকে মানসিক চাপমুক্ত রাখুন
মানসিক চাপ থেকে মাথাব্যথা, ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগ জন্ম নিতে পারে। এজন্য তীব্র মানসিক চাপে থাকলে রিল্যাক্স করার নানা কৌশল বা মেডিটেশন করে সেটা কমান। এতে আপনার দেহে কর্টিসোল হরমোনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাবে।

10)ধূমপানের অভ্যেস ছাড়ুন
মানসিক চাপের মতোই ধূমপানও নানা ধরনের মারাত্মক রোগের আরেকটি কারণ। ফুসফুস ক্যানসার এর মতো ভয়ঙ্কর রোগের পাশাপাশি ডাইবেটিসেরও একটি বড় কারণ ধূমপান। তাই ডাইবেটিসের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন।

উপরিউক্ত নিয়মগুলি মেনে চললে ডাইবেটিসের মত কঠিন রোগের হাত থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।