নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে লজ্জাজনকভাবে ভরাডুবির পরে একেবারে বিপর্যস্ত রাজ্য বিজেপি শিবির। পরাজিত প্রার্থীদের একাংশ ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব রাখতে শুরু করেছেন। এর মধ্যেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া সংখ্যালঘু নেতাদের একাংশ তৃণমূলে ফেরার তোরজোড় শুরু করে দিয়েছেন। আর সেই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজেপি-র সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি কাশেম আলি।

২০১৭ সালে মুকুল রায়ের সঙ্গেই বিজেপি-তে আসেন কাশেম। রাজ্য স্তরের দায়িত্বও পান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এই প্রাক্তন নেতা। এখন তিনি ফিরে যেতে চান পুরনো দলে। বিজেপি-র করোনা আক্রান্ত এই মুসলিম নেতা রবিবার বলেন, “বড় ভুল করেছি। শরীরটা ঠিক হলেই নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে আসব। আমি তৃণমূলেই ফিরে যেতে চাই।” এর পাশাপাশি কাশেমের বক্তব্য, “বুঝতে পারছি বিজেপি দলটা মুসলিমদের জন্য নয়। আমি একা নই, আমার সঙ্গে অনেকে যোগাযোগ করছে। সবাই ফিরতে চাইছে। সবারই বক্তব্য, বিজেপি ভোটের প্রচারে যে ভাবে সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করেছে, সেটা বাংলার মানুষ ভাল ভাবে নেয়নি।”

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে গত বছর ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় বিজেপি-তে যোগ দেন হুগলির পুরশুড়া আসনের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শেখ পারভেজ রহমান। ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরের বর্তমান অবস্থান নিয়ে তিনি বীতশ্রদ্ধ। ওই আসনে এ বার বিজেপি জিতেছে। তবু বিজেপি-তে না থেকে পুরনো দলে গিয়েই কাজ করতে চান পারভেজ। তবে দল তাঁকে ফিরিয়ে নেবে কি না, তা নিয়ে একেবারেই নিশ্চিত নন তিনি। পারভেজ বলেন, “আমাদের মতো পুরনোরা না থাকাতেই আরামবাগ লোকসভা এলাকায় ৪টি আসনে তৃণমূল হেরে গিয়েছে। অভিমানে দল ছেড়েছিলাম। আশা করি এখন দল আমাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাববে।”

ঠিক একই দিনে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া হুগলির আর এক প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আলমগির মোল্লাও পুরোনো দলে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট ভাবে তা স্বীকার করছেন না। আপাতত তিনি রাজনীতি থেকে দূরত্ব রেখে চলছেন তা মেনে নিয়ে চণ্ডীতলা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন খাদ্য সরবরাহ কর্মাধ্যক্ষ বলেন, “এখনই কিছু মনস্থ করিনি। কারণ, এখন চারদিকে অস্থিরতা চলছে। আপাতত চুপচাপ থাকছি। পরিস্থিতি ঠিক হলে সিদ্ধান্ত নেব।”

ভোটের আগে মেদিনীপুরে অমিত শাহর ‘মেগা যোগদান মেলা’-য় বিজেপি-তে যাওয়া তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কবিরুল ইসলামও এখন ঘরওয়াপসি করতে চাইছেন। সে কথা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, “বিজেপি-তে এসে ভুল করেছি। মোহভঙ্গ হয়েছে। যে দলের রাজ্য সভাপতি বলেন, মুসলিমদের দরকার নেই, সেখানে আমরা থাকতে যাব কেন?” এর পাশাপাশি কবিরুলের আরও দাবি, “বিজেপি দলটার দুটো রূপ। দলে নেওয়ার আগে এক, পরে আর এক। এই দল বাংলায় কোনও দিন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। সচেতন বাঙালি ভ্রাতৃত্ববোধের বন্ধনে থাকতে চায়।”