শেষ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টা লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপি সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৮ টি আসনে জয়লাভ করে। তারপর থেকেই বিজেপি নেতৃত্ব এই রাজ্যের ক্ষমতা দখলের কথা ভাবতে শুরু করেছে। ২০২১ সালের এপ্রিল-মে মাস করে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতা দখল করতে গেলে কোনো দল বা জোটকে রাজ্যের ২৯৪ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৪৮ টি আসনে নিজেদের দখলে আনতে হবে।
অঙ্কের হিসাবের বাইরে বেরিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে চোখ বোলানোর চেষ্টা করলে দেখা যাবে উত্তরবঙ্গে বিজেপির একচেটিয়া প্রভাব থাকলেও সেখান থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনার দিকে ক্রমশ অগ্রসর হতে থাকলে বিজেপির প্রভাব ক্রমশ ফিকে হতে শুরু করে দেবে। জঙ্গলমহল অঞ্চলে বিজেপি তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু দক্ষিণ বঙ্গের জেলা গুলির মধ্যে কিছু কিছু জেলায় তাদের সংগঠন সেভাবে গড়ে না ওঠায় বেশ কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মানুষের সমর্থনকে ভোটে পরিণত করতে হলে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলাটা খুবই জরুরী। এই পরিস্থিতিতে আসুন আমরা দেখি দক্ষিণবঙ্গের কোন পাঁচটা জেলা বিজেপিকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রাখবে।
১) কলকাতা
রাজধানী শহর কলকাতায় এখনো পর্যন্ত শক্ত ভিতের ওপর নিজেদের দাঁড় করাতে পারেনি বিজেপি। এখানে একমাত্র জোড়াসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার মতো শক্তি আছে তাদের। যদিও দলের ওপর অভিমান করে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার ঘটনা বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
২) দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
তৃণমূলের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি বলে পরিচিত দক্ষিণবঙ্গের এই জেলাটি। সেইসঙ্গে বামেদেরও বেশ খানিকটা শক্তি আছে এই জেলায়। বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করতে গেলে এই জেলা থেকেও বেশ কিছু আসন বিজেপিকে অবশ্যই জিততে হবে, নাহলে তাদের ক্ষমতা দখলের পথ কঠিন হয়ে যেতে পারে। তবে শোভন চ্যাটার্জি যদি শেষ পর্যন্ত বিজেপির হয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন সে ক্ষেত্রে এই জেলার অনেক হিসেব শেষ মুহূর্তে বদলে যেতে পারে।
![দক্ষিণবঙ্গের এই 5 জেলা চিন্তায় রাখবে বিজেপিকে 1 images 6 3](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2020/12/images-6-3.jpeg)
৩) হাওড়া
এই জেলায় একাধিক দাপটে তৃণমূল নেতার উপস্থিতি এবং উলুবেড়িয়া মহকুমায় সংখ্যালঘু ভোটের সংখ্যা বেশি থাকায় এখানে বিজেপির পক্ষে ভালো ফল করার বেশ কঠিন। তবে জল্পনা অনুযায়ী যদি তৃণমূল শিবিরে ভাঙ্গন ধরে তবে অনেক হিসেব উল্টে পাল্টে যেতেই পারে।
৪) পূর্ব মেদিনীপুর
দক্ষিণবঙ্গের এই জেলায় এই মুহূর্ত পর্যন্ত বিজেপির হাল অত্যন্ত খারাপ। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী যদি শেষ পর্যন্ত তৃণমূলেই থেকে যান তাহলে এই জেলায় বিজেপি কিছুই করতে পারবেনা বলে ধরে নেওয়াই যায়। তবে শুভেন্দু বাবু যদি বিজেপিতে যোগদান করেন, সেক্ষেত্রে গোটা হিসেবটাই সম্পূর্ণ উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
![দক্ষিণবঙ্গের এই 5 জেলা চিন্তায় রাখবে বিজেপিকে 2 images 23 1](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2020/12/images-23-1.jpeg)
![দক্ষিণবঙ্গের এই 5 জেলা চিন্তায় রাখবে বিজেপিকে 2 images 23 1](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2020/12/images-23-1.jpeg)
৫) মুর্শিদাবাদ
সংখ্যালঘু প্রধান এই জেলায় বিজেপির ভালো ফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। এর অন্যতম কারণ হলো এই জেলায় তৃণমূলের পাশাপাশি কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট যথেষ্ট শক্তিশালী। তাছাড়া বিজেপির সংখ্যালঘু বিরোধী ভাবমূর্তি তাদের যথেষ্ট বেকায়দায় ফেলবে এই জেলায়।
লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গবাসীর একাংশ নরেন্দ্র মোদিকে দেখে ভোট দিলেও, বিধানসভা নির্বাচন হবে সাংগঠনিক শক্তির ভিত্তিতে। এই পরিস্থিতিতে যে জেলাগুলোয় বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে সেগুলো তাদের যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।