যেন রূপকথার উত্থান। বনগাঁর এক গরীর পরিবার থেকে উঠে এসে বড় ব্যবসায়ী-সমাজসেবক। তিনি দীনেশ দাস। যাঁর ব্যবসা গোটা দেশজুড়ে, অফিস কলকাতা, দিল্লি, বেঙ্গালুরু সহ নানা জায়গায়। কিন্তু নিজেকে এখনও বনগাঁর ছেলে বলেই পরিচয় দেন। নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে উচ্চ শিক্ষিত হওয়া মানুষটা এখন বেকারদের চাকরির জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি পেয়েছেন প্রচুর স্কলারশিপ, তা দিয়ে চলেছে পড়াশোনা। শিক্ষার আলোকে তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারেনি কোনো অভাব। নিজের যোগ্যতায় উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চশিক্ষিত হয়েছেন। সেন্ট্রাল ও স্টেট গর্ভমেন্টে কাজ পাওয়ার পরও সেটা অগ্রাহ্য করে নিজের স্টার্ট আপ শুরু করেন। আই টি ও ফিনেন্স সংস্থায় নিজেকে পরিচিতি করে তোলেন।
শহরের জাঁকজমক থেকে বেরিয়ে কেন ফিরলেন জন্মস্থান বনগাঁয় !
প্রশ্ন জাগবে সবার মনেই। এক কম আয়ী সংসার থেকে শুরু করার স্পর্ধা তিনি দেখিয়েছেন। ঘুরে দাঁড়িয়েছেন নিজের পায়ে। তাই তিনি কষ্টটা উপলব্ধি করেছেন। আর তাই বেকার যুবক-যুবতীদের পাশে দাঁড়াতে চান। তিনি দেখেছেন অনেক ছেলেরাই অবসর সময়ে ক্লাবে পাড়ায় আড্ডা মেরে সময় কাটায়, মেয়েরা ঘরের কাজে পটু হতে ব্যস্ত। যদি তারা সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে উর্পাজন করে ? তবে তাদের নিজেদের কিছুটা খরচা তারা নিজেরাই বহন করতে পারবে। এই ভেবে তিনি বেকার ছেলে-মেয়েদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি বলেন, রোজগার করতে হলে সবার আগে লক্ষ্য স্থির করতে হয়। করতে হয় সঠিক পরিকল্পনা। যে পরিকল্পনা করে তিনি নিজের ব্যবসাকে ছোট থেকে বড় করে তুলেছেন। গরীব মানুষের কষ্ট দেখেছেন, তাই তাঁর সব সময় লক্ষ্য থাকে সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষদের এগিয়ে দেওয়ার সঠিক পরিকল্পনা ও রূপায়ন করতে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে দীনেশ দাস তাঁর জন্মস্থান নিয়ে বলেন, ”বেকারদের চাকরি নেই, আইনশৃঙ্খলার অবস্থা শোচনীয়। বনগাঁ যেন দিন দিন অন্ধকার গ্রামে পরিণত হচ্ছে। অনেকের থেকেই ফোন পেতাম দাদা আপনি তো এত বড় ব্যবসার মালিক, একটা চাকরি দিন না। কষ্ট হত। সমাজের তেষ্টার বিশাল মাপে আমি বড়জোড় এক ফোঁটা জলের জোগান দিতে পারি। আফশোস নিয়েই দিন কাটছিল। মাঝে বেশ কটা আত্মজীবনী, স্টার্ট আপ নিয়ে আরও পড়াশোনা, বিদেশে কয়েকজন বন্ধু শিল্পপতির সঙ্গে কথা বলে একটা মডেল তৈরি করলাম। করে বুঝলাম, সমাজের চাহিদা পূরণ করার ক্ষমতা আমার আছে। বিকল্প চিন্তা। দাদা-দিদি ছাড়া সমাজের জন্য করার চিন্তা। না কোনও এনজিও নয়, কাউকে আর্থিক সাহায্য নয়, আমার মডেল হল দুনিয়ায় নিজের প্রতিভাকে ঠিকভাবে বিক্রি করার উপায়। ডিজিটাল দুনিয়া এখন সুযোগের রাজধানী হয়ে গিয়েছে। প্যারাগুয়ের কোনও এক গ্রামে বসে এখন নিউ ইয়র্কের ব্যবসাকে টক্কর দেওয়া যায়। কেনিয়ায় কানাগলি থেকে এখন স্টার্টআপ শুরু করে কোটপতি হওয়া যায়। দেশে বিদেশে না ঘুরেও দুনিয়ার যে কোনও প্রান্তের ক্রেতার কাছে নিজের প্রতিভা-পণ্য বিক্রি করা যায়। তাহলে বেকার থাকবে কেন আমাদের বনগাঁয়। আসলে কথা বলে দেখেছি, বুঝেছি নেতারা বেকারদের কাজ দিতে ভাবেন না, বেকারদের কাজে লাগানোর কথা ভাবেন।”
তাঁর সংস্থায় কাজ করে এখন ২০০ জনের অধিক ছেলে-মেয়েরা। তারা সময়ের গুরুত্ব দিতে শিখেছে। নিজের যোগ্যতায় নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। এরকম সুন্দর সুযোগ-সুবিধার জন্য তাঁকে অনেকেই স্নেহের চোখে দেখেন। তিনি স্নেহের পাত্র বনগাঁ তথা কলকাতার অনেকাংশেই।
তার জীবনের শিক্ষাকে সবার মধ্যে ভাগ করে। এভাবেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন ঋণ। যোগ্য ছেলে-মেয়েরা এনার সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে উপার্জন করতে অবশ্যই যোগাযোগ করুন।