নিজস্ব সংবাদদাতা :- শেষ পর্যন্ত কি সম্মুখ সমরে নামতে চলেছেন শোভন চ্যাটার্জি এবং তার একসময়ের ‘বান্ধবী’ দেবশ্রী রায়? প্রশ্নটা উঠে গেল, কারণ গত কয়েকদিনের বাক-বিতণ্ডার পর অবশেষে আজ কলকাতা হাইকোর্টে শোভন চ্যাটার্জি ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন দেবশ্রী। পাল্টা শোভন বলেন, “মান থাকলে তবে তো মানহানির মামলা করবে। যার মান নেই সে আবার কিসের মানহানির মামলা করে!”

শোভন চ্যাটার্জি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার দিনই প্রকাশ্যে এসেছিল তার সঙ্গে দেবশ্রী রায়ের দ্বন্দ। তৃণমূলের থাকাকালীন শোভনের সঙ্গে দেবশ্রী রায়ের সুসম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূল নেত্রী যখন রায়দিঘির প্রার্থী বদলের বিষয়ে এক রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, তখন জেতানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য দেবশ্রীকে প্রার্থী হতে সাহায্য করেছিলেন শোভন চ্যাটার্জি। তারপরের ঘটনা সবার জানা। রায়দিঘির নিজের মানুষ বলে পরিচিত সিপিআই(এম) নেতা কান্তি গাঙ্গুলিকে এক হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের জন্য বিধায়ক হন দেবশ্রী।

যদিও শোভন চ্যাটার্জি তৃণমূল ছাড়ার পর তার সঙ্গে দেবশ্রী রায়ের সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত হয়ে ওঠে। তবে ঠিক কি কারণে এই তিক্ততার শুরু সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। বিজেপিতে যোগ দিয়ে দীর্ঘদিন বসে থাকার পর হালে সক্রিয় হয়েছেন শোভন চ্যাটার্জি ও তার বন্ধু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। রায়দিঘিতে দলীয় সভা করতে গিয়ে শোভন চ্যাটার্জি অভিযোগ করেছিলেন টোটো কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত দেবশ্রী রায়। নিজের দায়িত্বে তৃণমূল নেত্রীর কাছ থেকে টিকিট আদায় করে দেবশ্রী রায়কে জিতিয়ে আনার জন্য লজ্জিত বলেও দাবি করেন শোভন। এমনকি এই অভিনেত্রী বিধায়ককে অপদার্থ এম‌এল‌এ বলে উল্লেখ করেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

শোভন-বৈশাখী জুটির সমালোচনার পর প্রকাশ্যেই দেবশ্রী রায় জানিয়েছিলেন ক্ষমা না চাইলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। ঘটনা হল এরপর‌ও নিজেদের অবস্থান বিন্দুমাত্র পাল্টাননি শোভন-বৈশাখী জুটি। পাল্টা এই দুজনে আবারও প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন দেবশ্রী রায়ের।

আজ কলকাতা হাইকোর্টে মানহানির মামলা দায়ের করার পর দেবশ্রী রায় দাবি করেন তার বিরুদ্ধে টোটো কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, “যে ছেলেটি মূল অভিযুক্ত ছিল তাকে আমিই বরং পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে হাজতবাস করিয়েছি। সমস্তটা জানা সত্ত্বেও আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে পরিকল্পিতভাবে মানহানির চেষ্টা করা হয়েছে। তার বিহিত চাইতেই আমি এই মামলা দায়ের করলাম।”

দেবশ্রী রায়ের মামলা দায়ের করা ঘটনা যখন জানাজানি হয় সেই সময় তার শ্বশুরের এলাকা বলে পরিচিত মহেশতলায় বিজেপির হয়ে দলীয় কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিলেন শোভন চ্যাটার্জি। সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়‌ও ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি বুঝিয়ে দেন এই মামলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। প্রসঙ্গত মহেশতলা পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং মহেশতলা বিধানসভার বিধায়ক দুলাল দাস হলেন শোভন চ্যাটার্জীর শ্বশুর তথা রত্না চ্যাটার্জীর বাবা।