নিজস্ব সংবাদদাতা: জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রবিবাসরীয় শাহী সভায় গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন কাঁথির তৃণমূল সাংসদ তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারী। মাস তিনেক আগে ছেলের দেখানো পথেই হেঁটেছেন তিনি। যদিও শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে না বেরিয়ে সময় নিয়েছেন প্রবীণ নেতা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে বাংলা, তার কাণ্ডারি হয়তো মেদিনীপুরের এই অধিকারী পরিবারই। দলত্যাগী এই পরিবারের উপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু দলের মুখপাত্র তথা তরুণ সমর্থক দেবাংশু ভট্টাচার্যের মুখে হঠাৎ উল্টো সুর কেন?

ঘাসফুল থেকে শিশির ঝরে পড়ার দিনই রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। আর সেখানে প্রথমেই তাঁর ব্যাকুল প্রশ্ন, “অধিকারী পরিবারের কি এতটা অপমান সত্যিই পাওনা ছিল?” লাইনটায় চোখ বোলালে প্রথমে হয়তো মনে হয় তিনিও বুঝি দলবদলের হাওয়ায় গা ভাসানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন। বিশেষত, যখন সম্প্রতি তাঁকে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় স্থান না দেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সকলে রং বদলালেও দেবাংশু আছেন দেবাংশুতেই। এদিনের ফেসবুক পোস্টেও পাওয়া গেল সেই বার্তা। আদ্যপান্ত শ্লেষাত্মক লেখনি জুড়ে সহানুভূতির ছলে তিনি তীব্র কটাক্ষে বিঁধলেন দলবদলকারী মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারকে।

গতকালের এই পোস্টে “বুক ফাটা বেদনায় জর্জরিত” হয়ে দেবাংশু ভট্টাচার্য “স্বীকার” করেছেন কিছু “সত্যি কথা”। তিনি বলেছেন, শিশির বাবুর যোগ্যতা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্তরের এবং শুভেন্দু অধিকারীর রাজ্য স্তরের মন্ত্রীত্ব পাওয়া উচিত ছিল। এরপরই শিশির অধিকারীকে আক্রমণ করে তাঁর তীব্র শ্লেষ, “নেতাজির ফরওয়ার্ড ব্লক গঠনের সময় যে শিশির অধিকারী স্বয়ং নেতাজির বুটের ফিতা বেঁধে দিতেন, যে শিশির অধিকারী নিজের একটি কিডনি বিক্রি করে আজাদ হিন্দ ফৌজের তহবিলে মোটা টাকা অনুদান দিয়েছিলেন, যে শিশির অধিকারী মাস্টারদা সূর্য সেন কে চা বানিয়ে খাওয়াতেন, যার দয়ায় গোটা পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষ জাপানের টোকিওতে থাকার স্বাদ পেয়েছে, তিনি সামান্য গ্রাম সভার সদস্য হয়ে থাকবেন?”

এখানেই শেষ নয়, “যোগ্য পিতার যোগ্য পুত্র” শুভেন্দু অধিকারীর জন্যেও দেবাংশু সাজিয়েছেন একাধিক বাক্য বাণ। তাঁর কথায়, “যিনি কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ একার হাতে সিপিএমকে সরিয়েছেন, যিনি সিঙ্গুরে ২৬ দিন অনসণ করেছেন, যার নেতৃত্বে চলা মিছিলের ওপর গুলি চলে তৈরি হয়েছে ঐতিহাসিক একুশে জুলাই, প্লুটোর রাজনৈতিক মানচিত্রে যিনি অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পরিচিত হয়েছেন, যার নেতৃত্বে চায়না থেকে সিপিএমকে সরানো গেছে, যার নেতৃত্বে রাশিয়ার ইতিহাস, সেই শুভেন্দু অধিকারীকে ভুলে যাবেন?”

বস্তুত, দেবাংশু ভট্টাচার্যের পোস্টের পরতে পরতে মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারের প্রতি যে শ্লেষাত্মক বিদ্রূপ মিশে রয়েছে, তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয়না যে কোনো রাজনীতি সচেতন মানুষের। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পোস্ট রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে।