অমিত শাহ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পর দেশের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে তোলার দিকে নজর দিয়েছিলেন। তার সেই নীতির সুফল বর্তমানে পাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী হাওয়ায় ভর করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ফল করে বিজেপি। রাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে ১৮ টি তারা নিজেদের দখলে নিতে সক্ষম হয়। এরপরই ২০২১ এর বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে দ্রুত সংগঠনকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে শুরু করে বিজেপি নেতৃত্ব। এই অল্প সময়ের মধ্যেই উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলের অনেক জেলাতেই শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে এই জায়গা গুলোতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন তাদের মনোবল বৃদ্ধি করেছে বহু গুণ। আমরা বরং দেখি রাজ্যের কোন পাঁচটি জেলায় বিজেপির শক্তি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি।
১) কোচবিহার
উত্তরবঙ্গের এই জেলায় তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে আগে থেকেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সংগঠনে ক্ষয় ধরেছিল। তার ফলে নিজেদের সংগঠন গড়ে তোলার সময় বিজেপিকে বিশেষ বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। সেইসঙ্গে এক সময় গোটা জেলা জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো বাম নেতাকর্মীরা ক্রমশ বিজেপির দিকে ভিড়তে শুরু করে। একের পর এক তৃণমূল ও বাম নেতাকর্মীদের যোগদানের ফলে এই জেলার প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে বিজেপি। তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী সদ্য দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় এই জেলায় বিজেপির শক্তি এক লাফে আরো অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।
২) আলিপুরদুয়ার
জনজাতি অধ্যুষিত এই জেলায় লোকসভা ভোটের সময়ই দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের জনভিত্তিতে ব্যাপক ধস নেমেছে। এরই পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের আদিবাসী মোর্চার সাহায্যে নিজেদের সংগঠনকে গুছিয়ে নিতে পেরেছে জেলার বিজেপি নেতৃত্ব।
৩) ঝাড়গ্রাম
জঙ্গলমহলের এই জেলায় তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে ইতিমধ্যেই ব্যাপক ধস নেমেছে। অতি সন্তর্পনে বিজেপি নেতৃত্ব প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসী মানুষদের মধ্যে কাজ করে নিজেদের ভিত্তি সুদৃঢ় করে তোলার সুফল গত লোকসভা ভোটেই পেয়েছিল। তারপর যত সময় এগিয়েছে বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা ততো মজবুত হয়ে উঠেছে এই জেলায়। সেই সঙ্গে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বিজেপির কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে তা বলাই যায়।
৪) নদিয়া
সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় নদীয়াতে বরাবরই বিজেপির সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী। এর আগে যখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অস্তিত্ব ছিলনা বলা চলে, সেই পরিস্থিতিতেও লোকসভা নির্বাচনে জেলার কৃষ্ণনগর আসনটিতে বিজেপি জয়লাভ করেছিল। পরবর্তীতে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটে ভাঙ্গন ধরিয়ে তার বেশির ভাগটাই নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে সফল হওয়ায় এই জেলায় বিজেপি এই মুহূর্তে বেশ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সেইসঙ্গে জেলায় তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠীর উপস্থিতি বিজেপির কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে।
https://thewire.in/politics/west-bengal-trinamool-congress-bjp-mamata-dilip-ghosh
৫) উত্তর চব্বিশ পরগনা
কলকাতা লাগোয়া এই জেলায় রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৩ টি বিধানসভা আসন আছে। সেই দিকেই লক্ষ্য রেখে গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই বিজেপি উত্তর চব্বিশ পরগনায় তাদের সংগঠন ধীরে ধীরে বিস্তার করতে শুরু করে। জেলার ব্যারাকপুর ও বসিরহাট মহকুমায় বিজেপির বর্তমান সাংগঠনিক শক্তি রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিতে পারে। সেইসঙ্গে সল্টলেক, রাজারহাট, বারাসাত অঞ্চলগুলিতে দাপট ক্রমশই বাড়ছে গেরুয়া শিবিরের। অন্যদিকে বনগাঁ মহকুমার গাইঘাটা-ঠাকুরনগর অঞ্চল হল মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রধান কেন্দ্র। নয়া নাগরিকত্ব আইনকে হাতিয়ার করে মতুয়াদের মধ্যে বিজেপি নিজেদের জনপ্রিয়তা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। সেই সঙ্গে এই জেলার তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক ও শীর্ষস্তরের নেতা দল ছেড়ে ইতিমধ্যেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। সব মিলিয়ে উত্তর চব্বিশ পরগনায় এই মুহূর্তে অ্যাডভান্টেজ বিজেপি।
রাজনীতিতে আজ যে শক্তিশালী পরমুহূর্তে কোনো একটা ভুল চালে সে ধুলোয় গড়াগড়ি খেতে পারে। এই আপ্তবাক্য মাথায় রেখেই বর্তমান পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শক্তি ও দুর্বলতার এই হিসেব কষা হয়েছে।