নিজস্ব সংবাদদাতা: গত সোমবার গভীর রাতে মুম্বইয়ের মাড আইল্যান্ডের বাংলোয় মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করেছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলের অন্দরে জোর শোরগোল শুরু হয়েছে। এদিকে, সেই জল্পনার রেশ কাটার আগেই মঙ্গলবার সরস্বতী পুজোর শুভক্ষণে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে অমিত শাহর উপর লেখা বই নিয়ে হাজির বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘মহাগুরু’ মিঠুন ও টলিউডের ‘ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিতের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকে কিন্তু শুধুমাত্রই ‘সৌজন্যমূলক’ আখ্যা দিতে নারাজ রাজনৈতিক মহল। কারণ দু’জনের নামের সঙ্গেই বাঙালির আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। আর সেই আবেগকে হাতিহার করেই কি এই দুই সুপারস্টারকে সামনে রেখে বঙ্গ বিজেপি ‘নির্বাচনী কৌশলী’ সাজাচ্ছে? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলা ছায়াছবির অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। দু’জনের মধ্যে কিছুক্ষণ কথাবার্তা হয়। সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিয়ে নিজের লেখা বই ‘অমিত শাহ অ্যান্ড দ্য মার্চ অফ বিজেপি’ উপহার দেন। ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে পোজ দেন দু’জনে। 

সেই সাক্ষাতের বিষয়টি সামনে আসার পরই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। যদিও বিজেপির এক শীর্ষনেতার দাবি, নেহাতই সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ‘বুম্বাদা’র বাড়িতে গিয়েছিলেন অনির্বাণ। তাতে রাজনৈতিক রং খোঁজার দরকার নেই। তবে সেই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নিয়েই গুঞ্জন ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষত টলিউড মহলে তৃণমূল কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্যে থাবা বসাতে আগে থেকেই উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি। টলিউডের বড় বড় ‘মাথা’-রাও তালিকায় আছেন বলে খবর।

সম্প্রতি একাধিকবার বিজেপির ‘কাছাকাছি’ এসেছেন প্রসেনজিৎ। যদিও প্রকাশ্যে কখনও সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদানের ইচ্ছাপ্রকাশ করেননি। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আবহের মধ্যেই যখন দিল্লীগামী বিমানে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তখনও প্রসেনজিতের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। সেই সময় আবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রসেনজিৎকে ‘অপসারণ’ করা হয়েছিল। তার ফলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কে ‘চিড়’ ধরেছে বলেও কানাঘুষো চলতে থাকে।

এই দুই তারকাকে নিয়ে জল্পনা যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই ফেসবুকে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করলেন সদ্য পদ্ম শিবিরে যোগ দেওয়া আরেক অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। প্রসঙ্গত, বিজেপিতে যোগ দিয়েই রুদ্রনীল ঘোষ বার্তা দিয়েছিলেন যে, খুব শিগগিরিই ইন্ডাস্ট্রির আরও অনেকেই গেরুয়া মন্ত্রে দীক্ষিত হতে চলেছেন। পাশাপাশি সেসময়েই বলেছিলেন, “বাংলায় এবার বিজেপিকে দরকার।”

এবার মিঠুন ও প্রসেনজিতের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গেও মুখ খুললেন রুদ্র। ফেসবুকে দুই সুপারস্টারের সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্তের ছবি শেয়ার করে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিনেতার মন্তব্য, “এই দুই বাঙালির স্ট্রাগল, পরিশ্রম, বিচক্ষণতা, দায়িত্ববোধ ও সিদ্ধান্ত অনেক মানুষকে সাহস দেয়! নতুনভাবে ভাবতে শেখায়!” রুদ্রনীল ঘোষের এমন পোস্টকে কিন্তু যথেষ্ট ‘ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা’ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।