নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজন বলিউড
কেউ যোগ দিচ্ছেন সরাসরি, কেউ সমর্থন করছেন আস্তিন বাঁচিয়ে
ভারতবর্ষ এমন একটা দেশ যেখানে রাজনৈতিক পালাবদলের ইতিহাস হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে । যুগে যুগে, কালে কালে একাধিক কুশলী নেতা, বুদ্ধিমান কয়েকজন, ক্ষমতার শীর্ষে থাকা কিছু মানুষ এই বিশাল ভূখণ্ডের ভালো মন্দ নির্ধারণের ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছেন একেক রকম করে। এঁরা পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী দেশ ও দশের জন্য নানান কৌশল প্রয়োগ করেছেন। তাতে ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত, এই দুই ক্ষেত্রেই এসেছে নানান পরিবর্তন।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল সমাজে যারা জনপ্রিয়তার নিরিখে অনেকখানি এগিয়ে, লোকে যাঁদের নিজেদের আইডল মনে করে এমন কিছু মানুষকে নিজেদের কর্মপদ্ধতির সঙ্গে মিশিয়ে নেবার চেষ্টা করা। একুশ শতকের আজকের ভারতবর্ষ আর আজকের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও মনেপ্রাণে এই পদ্ধতি ফলো করার চেষ্টাই করে থাকেন।
এই পর্যায়ে যাঁর কথা সবার আগে আমাদের মনে পড়তে বাধ্য তিনি হলেন নরেন্দ্র মোদী। ভারতবর্ষের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই মুহূর্তে বিশ্বের তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে একই সারিতে স্থান পেয়েছেন। এর জন্য তাঁকে বহু নীতি, নানান কৌশল অ্যাপ্লাই করতে হয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি- তাঁর এই দলের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে সারা দেশেই রয়েছে বিভিন্ন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এই গোষ্ঠীর তীব্র হিন্দুত্ববাদ, দলীয় দুর্নীতি, জনতার স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন আইন পাশের চেষ্টা ইত্যাদি বিবিধ কর্মকাণ্ড নিয়ে বহু সমালোচনার মুখে নিয়মিত পড়তে হয় দেশের প্রধানমন্ত্রীকে।
জনতার সমর্থন নিজের দলের প্রতি অটুট রাখবার জন্য মোদীও তাই এমন কয়েকজনকে নিজের পাশে চান, মানুষ যাঁদের ক্যারিশ্মায় আচ্ছন্ন। বলিউড ইন্ডাস্ট্রির অধিকাংশ কিংবদন্তী যদি বিজেপির পাশে এসে দাঁড়ান, তবে জনপ্রিয়তার নিরিখে তাঁরা যে ধরাছোঁয়ার বাইরে উঠে যেতে পারেন, এই তথ্য সম্পর্কে কুশলী নেতা নরেন্দ্র মোদী যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাই গত বেশ কয়েকবছর ধরেই এ দেশের বিনোদন জগতকে যে তিনি তাঁর করায়ত্ব করতে বিন্দুমাত্র কসুর করছেন না তা কারোরই আর বুঝতে বাকি নেই। মূলত তাঁর একার চেষ্টাতেই ধীরে ধীরে তাই বলিউডে গড়ে উঠছে মোদী ব্রিগেড।
তারকারা সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন বা বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থনে সর্বসমক্ষে কথা বলছেন, এমন ঘটনা মাত্র কয়েক দশক হল এদেশে শুরু হয়েছে। তাবড় সুপারস্টারেরা অবশ্য সবসময়ই নিজেদের বিশেষ কোনও দলের সমর্থক হিসেবে তকমা দিতে চান না। মানুষের সমর্থন তো তাঁদেরও প্রয়োজন স্টারডম ধরে রাখার জন্য।
তবুও যেসব মানুষ নরেন্দ্র মোদীর সমর্থনে গলা মেলাচ্ছেন সম্প্রতি, তাঁদের মধ্যে এই মুহূর্তে নাম করতেই হবে কঙ্গনা রানাওয়াতের। দক্ষ এই অভিনেত্রী নানান বিতর্কের মধ্যে দিয়েও ইদানিং বারবার উঠে এসেছেন খবরের শিরোনামে। রাজনীতিতে যোগ না দিলেও নিজেকে তিনি রামভক্ত হিসেবে সরাসরি উল্লেখ করেছেন। মোদীর শাসনের উপর তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে জোর গলায় তা ঘোষণাও করেছেন এই নায়িকা। তাঁর পরিবারের দুয়েকজন সদস্য অবশ্য ইতিমধ্যেই বিজেপিতে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। এই দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এমন তারকার সংখ্যাও তো নেহাত কম নয়। এই তালিকায় রয়েছেন সানি দেওল, হেমা মালিনী, জয়াপ্রদা, ভোজপুরি সুপারস্টার রবিকিষন, ঊর্মিলা মার্তণ্ডকর, ইশা কোপিকর– এমন অনেক হেভিওয়েট বলিউড সুপারস্টার। https://www.youtube.com/watch?v=6ut7XIDc5Lc
কিছুদিন আগে ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। অনুপম খের, বিবেক ওবেরয়, জ্যাকি স্রফ, মিনিশা লাম্বা এরাও মোদীর সপক্ষে কথা বলবার সুযোগ ছাড়েন না তেমন। তালিকায় রয়েছেন বাঙালি অভিনেত্রী মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়ও। আবার কিছু সেলিব্রিটি এমনও রয়েছেন যারা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সরাসরি যুক্ত নন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ আস্থাভাজন। অক্ষয়কুমারের নাম এই পর্বে সবার আগে করা চলে। সম্প্রতি তিনি নিজের গোমূত্র পান করার অভ্যাসের উল্লেখ করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কিছুদিন আগে পরিচালক মধুর ভাণ্ডারকর নরেন্দ্র মোদীকে visionary leader বলে প্রশংসা করেছেন। বিখ্যাত হেয়ার স্পেশালিষ্ট জাভেদ হাবিব যোগ দিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। এছাড়াও ছোট-বড়ো অনেক সেলিব্রিটি বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজন হিসেবে সামনে আসছেন নিয়মিতই।
আর বলিউডের বিভিন্ন হেভিওয়েট ব্যক্তিত্বকে বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানে আর গ্রুপ ফটোতে চোখে পড়ছে সবারই। করণ জোহর, শাহরুখ খান, মাধুরি দীক্ষিত, রনবীর কাপুর, আমির খান, সিদ্ধার্থ মলহত্রা, আলিয়া ভট্ট, রণভীর সিং, করিনা কপুর খান, কে নেই সেসব তারকাখচিত ছবিতে! সুতরাং নরেন্দ্র মোদী তাঁর নিজস্ব ক্যারিশ্মায় ক্রমশ এ দেশের বিনোদনের কেন্দ্রস্থলে তৈরি করছেন এক মোদী ব্রিগেড, তাতে আর সন্দেহ কি!
[…] […]