‘রাজার ছেলে রাজা হয়’ এই প্রবাদ বাক্যটি দীর্ঘকাল থেকেই বর্তমান কালবিশেষে সমান ভাবেই প্রযোজ্য।  এই প্রবাদ মন্ত্র  রাজনৈতিক মহল হোক কিংবা চলচ্চিত্র জগৎ সর্বত্র বিরাজমান।  এই মন্ত্র দ্বারা বশীকরনের প্রভাব ভারতীয়  চলচ্চিত্র জগতের ওপর থাকলেও  এটি  ধৃঢ়ভাবে বশীভূত করেছে বলিউডকে।

‘বোম্বে টকিজ’ থেকে  যে বলিউডের উত্থান সেখানে  কালক্রমে বেশ  কিছু পরিবার তাঁদের পসরা জাঁকিয়ে বসেছে। এদের মধ্যে কাপুর পরিবারের রাজত্বটাই সর্বোচ্চ শিখরে। পৃথ্বীরাজ কাপুরের হাতেই এই বলিউড সিনেমা শিল্পের হাতেখড়ি।  ১৯২৭ সাল থেকে বর্তমান প্রায় নয় দশক ধরে এই পরিবারের হাতে  বলিউড রাজত্বের রসি। বর্তমানে বংশ পরাম্পরায় বাপ- ঠাকুরদাদের জায়গা দখল করেছে ঋষিপুত্র  রনবীর, রণধীর কন্যা করিস্মা ও করিনা, তাই বলা বাহুল্য, আগামীতেও যে তাঁদের প্রজন্মই  আসবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

পৃথ্বীরাজ কাপুর পরিবারের পাশাপাশি অন্য ত্রয়ী কাপুর পরিবার অর্থাৎ অনিল কাপুর পরিবার ও পঙ্কজ কাপুর পরিবার ও জিতেন্দ্র কাপুর পরিবারের দাপট  বেশী বৈকি কম নয়। এছাড়াও বচ্চন, ভাট, মু্‍খার্জি , রোশন, সিনহা , দেওল, আখতার, চোপড়া , জোহার, ধবন পরিবার সহ সেলিম খান ও তার তিন ছেলে সালমান  ওরফে ভাইজান, আরবাজ ও সোয়েল এখন বলিউডের প্রথম সারির পরিবারতন্ত্রের খাতায় নিজ পরিবারের নাম নথিভুক্ত করেছে।  প্রতিটি পরিবারের উত্তরসুরি কেউ  অভিনেতা , কেউ আবার পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে এই বলিউড জগতে পদার্পন করেছে।

বলিউডের পরিবারতন্ত্রের শিকড় বড়ই গভীর তাই যুগের পর যুগ এলো গেল কিন্তু  এই পরিবারতন্ত্রকে একেবারে গোঁড়া থেকে উপড়ে ফেলা কষ্টসাধ্য বিষয়। কিন্তু  এই পরিবারতন্ত্রকে পুরোপুরি ভেঙে গুড়িয়ে দিতে না পারলেও কিছুটা হলেও শিকড়ের টান আলগা করে দিয়েছে বহিরাগতদের লড়াই মন্ত্র।  পরিবারতন্ত্রের দরুন  নবগতদের অনেকেরই জীবনের চলার পথে এসেছে প্রবল বাধা-বিপত্তি। প্রতারনা ও হেনস্তার রাস্তাতেও হাঁটতে হয়েছে অনেক শিল্পীকে ,  কিন্তু নিজের দক্ষতা, শিল্পীসত্তাই যে আসল মন্ত্র সেটাই তারা  লড়াইমন্ত্রের মাধ্যমে  প্রমান করেছে ও বলিউডে নিজেদের  জমি পাকাপাকি করে নিয়েছে। তারা প্রমান করেছে ‘ইনসাইডার’ ‘আউটসাইডার বলে’ কোন শব্দ হয়না, শুধু সঠিক প্রতিভা ও শিল্পীসত্তাই আসল মার্গ তাদের অস্তিত্ব প্রমানার্থে। পরিবারতন্ত্রের কোন দাপট তাঁদের দমিয়ে রাখতে সফল হয়নি।  উধাহরণস্বরূপ শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমার, জুহি চাওয়লা, মাধুরি দীক্ষিত, বিদ্যা বালান, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া,  সুস্মিতা সেন, শিল্পা সেট্টি, এখনকার দিনে নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, আয়ুষ্মান খুরানা, রাজকুমার রাও, কার্তিক আরিয়ান, দীপিকা পাডুকন, আনুস্কা শর্মা মতো প্রভৃতি উজ্জ্বল তারকাবৃন্দ তারা কেউ এই বলিউড পরিবারতন্ত্রের তাবেদারি করে নি, অস্তিত্বের লড়াইয়ে তারা কেউই এক চুল মাটি ছাড়ে নি, তোয়াক্কা ও তোয়াচ করে চলা তাঁদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে না, পরিবারতন্ত্র ব্যাতীতই নিজের প্রতিভার দ্বারাই আজ তারা বিশ্ব চলচ্চিত্র দরবারে সাফল্যমন্ডিত । এই তালিকাভুক্ত আরও দুই ব‍্যক্তিত্ব সুশান্ত সিং রাজপুত ও ইরফান খান। যদিও তারা এই শিল্পজগত এবং পৃথিবীকে চিরবিদায় জানিয়েছেন তবুও নিজের চেষ্টায় তারা আজ দেশ থেকে বিদেশে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে গেছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম সর্বত্র অধিষ্ঠিত, এই পরিবারতন্ত্রের আস্ফালন পড়ছে কিছু বহিরাগতদের উপর, তাঁদের ভ্রূকুটিকে ভয় করে চলছে আজও অনেকে।  যার জেরে অনেকে মৃত্যুবরনের পথেও আগ্রসায়ী হচ্ছে, অনেক শিল্পীসত্তাকে মারা হচ্ছে গলা টিপে , তাঁদের মাথা চারা দিয়ে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে আজ  এই পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলিউড জগতের কিছু কলাকুশলী থেকে আম জনতা  একজোট হয়ে বলছে ‘ হাল্লা বোল’ । ফলে আজ বলিউডে  পরিবারতন্ত্র বনাম এককমন্ত্রের লড়াই  ক্রমশ প্রকাশ্যে উঠে আসছে।