পশ্চিমবঙ্গের বাম শিবিরের অন্যতম প্রধান কান্ডারী তিনি। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। ৩৪ বছরের গৌরব থেকে শুরু করে ৭% -এর লজ্জা, সবটাই নিজের চোখে দেখেছেন ৮০ বছরের এই প্রবীণ নেতা। তাঁর চোখের সামনে দিয়েই এক সময়ের বামেদের অভেদ্য দুর্গ বাংলা থেকে মুছে গেছে লাল রং, আবার তাঁর চোখেই এখনও জ্বলজ্বল করছে আগামীতে ফিরে আসার স্বপ্নও।

রাজ্যের বামপন্থী রাজনীতির কারিগর বিমান বসুকে চেনেন সকলেই। কিন্তু কজন চেনেন রাজনীতির আড়ালে থাকা আসল মানুষটাকে? আসুন জেনে নেওয়া যাক বিমান বসু সম্পর্কে কিছু কথা।

চিরাচরিত সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি আর চৌকো ফ্রেমের চশমা নাকে যে সাদা চুলের বৃদ্ধকে আমরা লাল ঝান্ডা হাতে দেখতে পাই, জানেন কি আমাদের খুব পরিচিত সেই বিমান বসু বামপন্থার টানে নিজের সমস্ত কিছু ছাড়তে পেরেছিলেন, এমনকি ছেড়েছিলেন ঘরও। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি যোগ দিয়েছিলেন কাস্তে হাতুড়ি শিবিরে। আর ১৮ বছর বয়সেই বাড়ি ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে থাকতে শুরু করেন। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি লাল ঝান্ডার আশ্রয় ছাড়েননি, লাল ঝান্ডাও ছাড়েনি তাঁকে।

ব্রিটিশ ভারতে ১৯৪০ সালের জুলাইতে জন্মেছিলেন তিনি। অর্থাৎ স্বাধীন ভারতের চেয়েও বেশি বিমান বসুর বয়স। বামপন্থী রাজনীতিতে তাঁর আকর্ষণ ছিল ছোটো থেকেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সেই আকর্ষণও। কৈশোরেই সিপিআই এম দলে যোগ দিয়ে বিমান বসু শুরু করেন সক্রিয় রাজনীতি। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, বাংলার মানুষের জন্য কাজ করা।

বিমান বসুর রাজনৈতিক কেরিয়ার গ্রাফ:

১) সিপিএমে যোগ দেওয়ার ৭ বছরের মাথায় ১৯৬৪ সালে বিমান বসু বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশনের কলকাতা জেলার সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই রাজনীতিকে তাঁর কেরিয়ার গ্রাফ ক্রমেই হয়ে চলে উর্দ্ধমুখী।

২) ১৯৭০ সালে বিমান বসু ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের প্রথম সর্বভারতীয় সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

৩) পরের বছরই ১৯৭১ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী)-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য হন তিনি।

৪) এরপর ১৯৭৮ সালে ওই একই জায়গা থেকে সম্পাদকীয় সদস্য হন।

৫) ১৯৮৫ সালে বিমান বসু সিপিআই(এম)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত।

৬) অবশেষে ১৯৯৮ সালে নির্বাচিত হন পলিটব্যুরোর সদস্য।

বামপন্থী রাজনীতির পথে মানুষের সেবা করাই যে ছিল বিমান বসুর সারাজীবনের উদ্দেশ্য, তার প্রমাণ স্বরূপ তুলে আনা যায় একটি ছোট্ট তথ্য। সারা জীবনে বিমান বসু মোট ৭০ বারের বেশি রক্তদান করেছেন। এ ব্যাপারে বয়সের চোখ রাঙানি কিংবা দলীয় সহকর্মীদের নিষেধ, কোনোটাই মানেননি তিনি। অবশেষে এক সময় চিকিৎসক যখন আর রক্ত নিতে অস্বীকার করেন তখনই তাঁকে থামতে হয়।