বিরাট কোহলি না শচীন তেন্ডুলকর, বাইশ গজের দৌরাত্ম্যে এগিয়ে কে? শুধুমাত্র ভারত নয়, গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যেই এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে লেগে থাকে চিরন্তন দ্বন্দ্ব। ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লির তরুণ বিরাট কোহলির উত্থান সর্বকালের সেরা মাস্টার ব্লাস্টার্সের সঙ্গে তাঁর তুলনাকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে। নিজের প্রতিভা ও পারদর্শিতায় বিরাটের রথের চাকা এখনও বহমান। কিন্তু শচীন তেন্ডুলকর ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় ৭ বছর আগে।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি এখন কার্যত নিজের কেরিয়ারের শীর্ষে অবস্থান করছেন। দিনের পর দিন পুরোনো রেকর্ড ধূলিস্যাৎ করে গড়ে তুলছেন নতুন রেকর্ড। বাইশ গজের মাঠে যেন নতুন ইতিহাস তৈরি করে চলেছেন বিরাট, ঠিক যেমন ৯০-এর দশকে ব্যাট হাতে করতেন শচীন। বর্তমান ক্রিকেট প্রেমীরা অবশ্য শচীন বিরাট দ্বন্দ্বে এগিয়ে রাখেন বিরাটকেই, তাঁদের কথায় আরো অনেক দিন বাইশ গজে রাজত্ব করবেন বিরাট কোহলি। ফলে শচীন তেন্ডুলকরের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দেওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু কেউ কেউ একথা মানতে নারাজ। শচীন তেন্ডুলকরের জায়গা যে কখনোই নিতে পারবেন না বিরাট কোহলি, সে কথাই জোর দিয়ে বলেন তাঁরা।
বস্তুত, শচীন তেন্ডুলকর এবং বিরাট কোহলি, ভারতীয় ক্রিকেটের এই দুই উজ্জ্বল তারকার মধ্যে রয়েছে এক প্রজন্মের ব্যবধান। বিরাট কোহলির নিজস্ব স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, “শচীন তেন্ডুলকর হলেন সেই মানুষ যিনি এই দেশে ক্রিকেটের নতুন সংজ্ঞা লিখেছেন। উনি আমার আইডল। টিভিতে ওঁর খেলা দেখেই বড় হয়েছি আমি।” বিরাটের বক্তব্য যে দুই প্রজন্মের এই তারকার দ্বন্দ্বে শচীনকেই এগিয়ে রাখে, তা বলাই বাহুল্য। শচীন তেন্ডুলকর কী কী কারণে বিরাট কোহলির থেকে এগিয়ে তা জানার আগে চোখ রাখা যাক দুজনের ক্রিকেটীয় পরিসংখ্যানে।
বিরাট কোহলি ও শচীন তেন্ডুলকরের পরিসংখ্যান:
ভারতের হয়ে ২০০টি টেস্ট, ৪৬৩টি ওয়ান ডে খেলা সচিন তেন্ডুলকর দুই ফর্ম্যাটে যথাক্রমে ১৫৯২১ ও ১৮৪২৬ রান করেছেন। ১০০টি আন্তর্জাতিক শতরান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ওয়ান ডে-তে একটি দ্বিশতরানও রয়েছে তাঁর। অন্যদিকে ভারতীয় দলের হয়ে ৮৬টি টেস্ট, ২৪৮টি ওয়ান ডে ও ৮২টি টি-টোয়েন্টি খেলা বিরাট কোহলি তিন ফর্ম্যাটে যথাক্রমে ৭২৪০, ১১৮৬৭ ও ২৭৯৪ রান করেছেন। ৭০টি আন্তর্জাতিক শতরানের মালিক টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক।
বিরাট কোহলির থেকে কেন এগিয়ে শচীন তেন্ডুলকর?
১) প্রতিপক্ষ বোলার:
নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বা অস্ট্রেলিয়ার যে সমস্ত বোলারদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল শচীন তেন্ডুলকরকে, বিরাট কোহলির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয় নি, এমনটাই দাবি করেন শচীন ভক্তরা। তাঁদের মতে বাইশ গজে শচীনের চেয়ে বিরাটের লড়াই অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে বোলারের মান।
২) প্রযুক্তি:
বর্তমান সময়ে বোলিং মেশিন সহ নানা প্রযুক্তি মাধ্যমে ব্যাটসম্যানরা নেটে ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার বেগের ডেলিভারি খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। নেটে বোলাররাও একই গতিতে বল ফেলে যাচ্ছেন। ফলে বলের ভয়ঙ্কর গতি সম্পর্কে ধারণা তৈরি হচ্ছে বিরাট কোহলিদের। কিন্তু সচিন তেন্ডুলকরের সময় এত প্রযুক্তি না থাকায় অভ্যাসের সুযোগ কম ছিল শচীনদের।
৩) ক্রিকেটের নিয়ম:
বর্তমানে ক্রিকেটের নিয়ম আগের চেয়ে বদলে গেছে অনেকটাই। তার ফলেই এক দিনের ক্রিকেটে আজকাল ৪০০-র কাছাকাছি রান তোলাও কঠিন নয়। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে একদিনের ক্রিকেটে ২৫০ রানই ছিল যথেষ্ট। রানের ফুলঝুরির কারণে বিরাটের কীর্তির কাছে ম্লান দেখায় শচীনকে।
৪) পাকিস্তানের অনুপস্থিতি:
বিশ্ব ক্রিকেটে পাকিস্তান নিয়মিত খেললেও ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের খেলার সুযোগ এখন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। দু দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতিই এর কারণ। ফলে পাকিস্তানের যে প্রতিভারা শচীনের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন, তার সমতুল্য খেলোয়াড়ের মুখোমুখি হতে হয় নি বিরাট কোহলিকে।
৫) আগ্রাসন:
বাইশ গজের মাঠে আগ্রাসন বরাবরই বিপক্ষে যায় বিরাট কোহলির। পূর্বতন অধিনায়কের মতো ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড় নন বিরাট কোহলি। মাঠের মাঝে উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে শচীন তেন্ডুলকরের মিল পাওয়া যায় মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে। বাইশ গজে মাথা ঠান্ডা রেখে জয় পরাজয়কে সমান ভাবে গ্রহণ করার মানসিকতায় বিরাট কোহলির থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছেন শচীন তেন্ডুলকর।