নিজস্ব সংবাদদাতা: গত রবিবারই ফলপ্রকাশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের। যেখানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে তৃতীয়বার রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। প্রবল বিজেপি হাওয়া থাকা সত্ত্বেও সফল হয়নি তারা। তবে সত্তরের বেশি আসন সংখ্যা নিয়ে বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দল তারাই। কিন্তু এই প্রধান বিরোধী দলের বিরোধী দলনেতা কে হবে? গতকাল থেকে সেই প্রশ্নেই রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। শুভেন্দু অধিকারী না মুকুল রায়? নাকি তৃতীয় কেউ বসবেন এই পদে?

দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই বিরোধী দলনেতার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীই। কারণ, প্রাথমিক ভাবে তিনিই ‘জায়ান্ট কিলার’। নন্দীগ্রামের ভোটযুদ্ধে তিনি হারিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এমনকি শুভেন্দুকে ‘জননেতা’ বলে মেনেও নিয়েছেন বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব। দলের অন্দরে কিছু লোকজন বলছেন, শুভেন্দুর ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাও বিবেচনায় রয়েছে। বিধানসভার অন্দরে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে তিনি জোর লড়াই দিতে পারবেন বলেই মনে করছে দলের ওই অংশ।

তবে শুভেন্দুর পাশাপাশি উঠে আসছে মুকুলের নামও। কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছেন মুকুল। যিনি একদা তৃণমূলের অঘোষিত দু’নম্বর ছিলেন। জীবনে এই প্রথম ভোট জিতলেও সংগঠক হিসেবে মুকুলের অভিজ্ঞতা নেহাত কম নয়। বরং অন্যান্যদের তুলনায় খানিক বেশিই। কিন্তু আইনসভার সদস্য হিসেবে তিনি কতটা কার্যকরী হবেন, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরেও জোর আলোচনা চলছে। কারণ, দু’টি পর্যায়ে রাজ্যসভার সদস্য থাকলেও মুকুল যে সেখানে বক্তা হিসেবে খুব একটা দাগ কেটেছেন, তা নয়। আবার মুকুলের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, মেঠো রাজনীতিতে শুভেন্দু অবশ্যই এগিয়ে। কিন্তু পরিষদীয় রাজনীতি করতে গেলে অভিজ্ঞতা, ধৈর্য ও রাজনৈতিক জ্ঞান থাকা জরুরি। পাঁচ বছর ধরে বিধানসভার অন্দরে মমতার সঙ্গে লড়াই করার মতো ধৈর্য বর্ষীয়ান মুকুলেরই আছে।

আবার রাজ্য বিজেপি-র একটি সূত্রের দাবি— তৃণমূল থেকে আসা মুকুল-শুভেন্দু কাউকেই বিরোধী দলনেতার পদে চাইছেন না রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি চান সঙ্ঘ পরিবার-ঘনিষ্ঠ কাউকে বিরোধী দলনেতা করা হোক। কিন্তু এক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিজ্ঞতা। যে ৭৭ জন বিধায়ক হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্রই হাতে-গোনা কয়েকজনের পরিষদীয় রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা।

২০১৬ সালে বিজেপির যে তিনজন বিধায়ক জিতেছিলেন, তাঁদের একজন এই মনোজ। দিলীপ ঘোষ সংসদে চলে যাওয়ার পর বিধানসভায় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিই। তবে প্রধান দুটো নাম যাঁদের, তাঁরা আদৌ শেষ অবধি বিরোধী দলনেতার পদ পাবেন কিনা ঠিক নেই। কারণ, যাঁদের নাম নিয়ে আলোচনা, তাঁদের দু’জনের সঙ্গেই দিলীপের সম্পর্ক যথেষ্টই অম্ল-মধুর। ফলে তাঁদের বিরোধী দলনেতা হিসেবে মনোনয়নে দিলীপের শংসাপত্র এলে তা কৌতূহলের বিষয় হবে বৈকি! এখন দেখার, দিলীপ তাঁর ঝুলি থেকে তৃতীয় কাউকে বার করেন কি না।