৩রা ডিসেম্বর, অর্থাৎ আজ সেই বিশেষ দিন। আমাদের বিপুল মানব পরিবারের কিয়দংশ, যারা একটু বিশেষভাবে সক্ষম, বিশ্ব জুড়ে আজ তাঁদের কাছ থেকে সকলের পাঠ নেবার দিন। সেই সঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট অবোধ শিশুদেরও বুকে জড়িয়ে থেকে, তাদের হাত ধরে রেখে আশ্বস্ত করতে শেখার নতুন সংকল্প গ্রহণ আমাদের আরও একবার নিজেদের সক্ষমতা প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে রইল কিছু সক্ষমতার পাঠ।
সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ মাত্রেই সক্ষম আর প্রতিবন্ধীরা অক্ষম এই ধারনা আজও আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। রাস্তাঘাটে প্রতিবন্ধী মানুষ দেখলে ভয়ে কিংবা ঘৃণায় দূরে সরে যাওয়া ‘স্বাভাবিক’ মানুষের সংখ্যা আজও তেমন কমেনি। কিন্তু করোনা বিধ্বস্ত এই ২০২০ সাল হয়তো আমাদের মনে করাবে, যে অক্ষমতায় কারও হাত নেই। আমরা যারা প্রতিবন্ধী নই বলে নিজেদের উন্নত মনে করি তারাও পরিস্থিতির কবলে পরে কার্যত একটি পঙ্গু সময় অতিবাহিত করলাম গোটা বছর।
তাই বছরের শেষের এই বিশেষ দিনটিতে আসুন, আমরা সকলে সহমর্মিতার ঐক্য গড়ে তুলি। প্রতিবন্ধীরাও গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ আর নয়। সক্ষমতা নানা রকমের হয়, আমরা সকলেই সব পারিনা, কেউ কেউ একেকটা বিষয় ভাল পারি।বিভিন্ন ক্ষেত্র পরিচালনার জন্য সকলকেই তাই প্রয়োজন।সকলে মিলেই এই মানবসংসার, কাউকে ছোট ভাবার অর্থ নিজেরই অক্ষমতা প্রকাশ, তা ভুললে চলবে না।
আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আমাদের ধারনা আরেকটু স্পষ্ট হোক। আসুন, জেনে নিই দু-চার কথা।
ব্যাতিক্রমী শিশু ( Special children) বা প্রতিবন্ধী শিশু কারা?
সেইসব শিশু, যারা স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় শারীরিক, মানসিক, আবেগমূলক অথবা সামাজিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আলাদা, তাদেরই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা ব্যাতিক্রমী বা প্রতিবন্ধী বলা যেতে পারে। প্রতিবন্ধকতার মাত্রা অনুযায়ী তাদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য বিশেষ সামাজিক এবং শিক্ষাগত সুযোগ বা পরিসেবার প্রয়োজন হয়।
কি কি ধরনের প্রতিবন্ধকতা হতে পারে?
প্রতিবন্ধকতা বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হতে পারে। এর ধরনও অনেকরকম হতে পারে। যেমন- বৌদ্ধিক ব্যাতিক্রম, শিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা, ইন্দ্রিয় প্রতিবন্ধকতা, আবেগ সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক অনগ্রসরতা, বহুবিধ অক্ষমতা এবং অটিসম। এর মধ্যে ইন্দ্রিয় প্রতিবন্ধকতার আবার চারটি ভাগ আছে- দৃষ্টিগত , শ্রবণগত, অস্থিগত এবং স্নায়বিক । মানসিক প্রতিবন্ধকতা পড়ে বৌদ্ধিক ব্যাতিক্রমের মধ্যেই।
বিশেষ শিক্ষা বা Special Education কি?
বিশেষ শিশুদের বিশেষ বিশেষ চাহিদার কথা মাথায় রেখে যে শিক্ষাদান করা হয় তাকে এক কথায় বিশেষ শিক্ষা বলা যায়। বিশেষ শিক্ষার অর্থ কেবল এই নয় যে, প্রতিবন্ধী বা বিশেষ শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ে পঠন পাঠন চালান এবং তাদের মূল স্রোতের বাইরে রাখা। বরং, এই শিক্ষাপ্রণালীর আধুনিক ধারায় ব্যাতিক্রমী শিশুদের সমবয়স্ক অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে যুক্ত করে সমন্বিত শিক্ষা ( Intigrated Learning) দান করা হয়। এছাড়াও, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে সবধরনের শিশুর চাহিদার কথা মাথায় রেখে উপযুক্ত পাঠক্রমের প্রবর্তন করা হয় , একে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বা Inclusive school education বলা হয়।
প্রতিবন্ধকতা নিয়ে মানুষ কি কি করতে পারে?
জুতো সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ, সবকিছুই। তাঁরা পারেন না এমন কোন কাজ যে নেই সেটা করেও দেখিয়েছেন। বিশ্বের সফলতম মানুষদের তালিকায় শারীরিক প্রতিবন্ধী বা অটিসম আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কম নয়। মনে রাখবেন, সকল মানবশিশুই অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মায়। তার কোন আংশিক ব্যাতিক্রমতা বা প্রতিবন্ধকতা অন্যান্য গুণাবলী খাটো করেনা, বিশেষিত করে মাত্র। সেইসব মানুষদের অনুভূতি ও প্রকাশভঙ্গী পৃথক । তাঁরা অক্ষম নন, বিশেষভাবে সক্ষম। বিশেষ শিক্ষার সুযোগ পেলে প্রতিটি বিশেষ শিশুই আর পাঁচটা স্বাভাবিক শিশুদের মতো বেড়ে ওঠে। ভবিষ্যতে কর্মক্ষম হয়ে একজন মানবসম্পদে পরিণত হন তাঁরাও। তাই সুস্থ মানুষ হয়ে সহযোগিতার হাতটা অক্ষমের মতো গুটিয়ে নেবেন না।
[…] […]