নিজস্ব সংবাদদাতা- বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে যখন তৃণমূল-বিজেপি দ্বন্দ্ব ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে ঠিক সেইসময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক এই দ্বন্দ্বের আবহে মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট জল্পনা তৈরি হয়েছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সমস্ত রাজ্যবাসীকে করোনার টিকা প্রদানের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী তার চিঠিতে দাবি জানিয়েছেন যেভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ের করোনা সংক্রমনের ঢেউ গোটা দেশে আছড়ে পড়েছে তাতে সুষ্ঠুভাবে বিধানসভা নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে ভোট কর্মীদের পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিটি বাসিন্দাকে করোনার টিকা প্রদান করার বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্ততপক্ষে ৫০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে ও যাদের কোমরবিডিটি আছে তাদের সবাইকে যাতে ভোটের আগে করোনার টিকা দেওয়া যায় সেই বিষয়টি দেখতে তিনি অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে।

মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে এও জানিয়েছেন জরুরী ভিত্তিতে রাজ্যবাসীকে করোনা টিকা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি টিকা উৎপাদক সংস্থার কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গকে ভ্যাকসিন কেনার অনুমতি প্রদান করুক। প্রসঙ্গত এখনও পর্যন্ত যে ব্যবস্থা প্রচলিত আছে তাতে কোনো রাজ্য প্রশাসন করোনার ভ্যাকসিন সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। গোটা বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক পরিচালনা করছে। তারাই ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির কাছ থেকে ভ্যাকসিন কিনে রাজ্যগুলির মধ্যে বন্টন করে দেয়।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি প্রয়োজনে রাজ্য প্রশাসন বাজারদরে ভ্যাকসিন কিনে রাজ্যবাসীকে ভোটের আগেই তা প্রদানের ব্যবস্থা করবে। ঘটনা হল নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো মুখ্যসচিব কয়েকদিন আগেই বৈঠক করে প্রতিটা জেলা শাসককে নির্দেশ দিয়েছেন ভোট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক নিরাপত্তা কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ ভোট কর্মীদের ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে। নিরাপত্তারক্ষী ও ভোট কর্মী মিলিয়ে বেশ কয়েক লক্ষ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও তা শতাংশের হিসেবে অতি সামান্য। কারণ এ রাজ্যের ভোট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবেন প্রায় সাত কোটির কাছাকাছি মানুষ। সে ক্ষেত্রে ভোট গ্রহণ কেন্দ্র এবং নির্বাচনী সমাবেশগুলি থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ যথেষ্ট প্রশংসনীয় হলেও এত অল্প সময়ে নির্বাচনের আগে সমস্ত রাজ্যবাসীকে ভ্যাকসিন প্রদান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠি আসলে ‘ভ্যাকসিন রাজনীতি’র অঙ্গ হতে পারে। নির্বাচনের আগে তিনি এই চিঠি লিখে রাজ্যের ভোটারদের বার্তা দিতে চাইলেন যে তিনি বিনামূল্যে এখনই ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য প্রস্তুত থাকলেও কেন্দ্রের বাধায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বলাই যায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভ্যাকসিন রাজনীতি শুরু হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গে।