
বিশ্বের প্রায় সব দেশের-ই বেশিরভাগ মানুষের এক অতিপ্রিয় নেশা আসক্তি পানীয় মদ। ঠিক কত মাত্রায় মদ্যপান সুরক্ষিত সে নিয়ে নানা বিতর্ক বিদ্যমান। তবে সুরাসক্তির অর্থাৎ মদ্যপানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কি আপনি অবহিত! এই বিষয়ে অবলোকন করলে আশা করি এই বিপদজনক আসক্তি থেকে মুক্তির পথে হাঁটতে চাইবেন সে বিষয়ে আশাবাদী রইলাম।
মদ্যপান নিয়ে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি –
মদ্যপানের কোন নিরাপদ মাত্রা নেই, গবেষকরাও আজ একথা স্বীকার করেছেন তা বিভিন্ন তথ্যসূত্র ও পত্র-পত্রিকার নানান আলোচনা মারফৎ কম-বেশি সবাই জেনে থাকবেন। আমরা জানি যে অনেক গবেষনা থেকে উঠে এসেছে এমন আচম্বিত তথ্য যে বিশ্বে প্রায় প্রতি ০৩ জনে ০১ জন মদ্যপানের স্বীকার। এবং বৈশ্বিক সংস্থার এক গবেষনায় এও জানা যায় যে ১৪ থেকে ৪৯ বছ্র বয়সীদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে ০১টি মৃত্যুর কারন এই মদ্যপান। বিশ্বে কম ও বেশি মাদক সেবন দেশ গুলির সবই অনুরূপ ক্ষতির স্বীকার। তাই ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ নামের বৈশ্বয়িক সংস্থার’ গবেষনাও মেনে নিয়েছে মদ সেবনের নিরাপদ কোন মাত্রা নেই,এর সেবনে ক্ষতি হবেই।
ক্ষতির/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা সমূহ –
আমরা এখানে একটু নানাবিধ ক্ষতির উপর দৃষ্টিপাত করব—–
০১) লিভার ফেলিওর- লিভার এর মূল কাজ রক্ত থেকে শরীরের দূষিত বস্তু-কে ছেঁকে বের করা। মদ্যপান ধীরে ধীরে লিভারের সেই কর্ম ক্ষমতা-কে বিনষ্ট করে দেয়, এবং একসময় লিভার ফেলিওর এর মত ঘটনার স্বীকার হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে; যা অত্যন্ত মর্মান্তিক।

০২) স্মৃতিভ্রংশ- অনেকেই জানেন মদ্যপানের ফলে মাথার ভিতরে ঝিম-ঝিম করে, সুতরাং অনেক সহজেই আমরা বুঝি যে মস্তিস্কের কোষ গুলির উপর এর তীব্র প্রভাব পড়ে, এইভাবেই ধীরে ধীরে মস্তিস্কের কোষ গুলি শিথিল হয়ে স্মৃতিভ্রংশের মত দুঃখ জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়।

০৩) উচ্চ রক্তচাপ- মদ্যপান করার পর শরীরে রক্ত প্রবাহের মাত্রা এত পরিমাণে বেড়ে যায়; যার ফলস্বরূপ মদ্যপান কারীদের মধ্যে অধিকাংশ জনই উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভূগে থাকেন।
০৪) গর্ভবতী মহিলাদের মদ্যপানের ফল- গর্ভবতী মহিলাদের মদ্যপানের ফলে তাঁরা তাঁদের ভাবী সন্তানের স্বাস্থ্যের ও মানসিক ঝুঁকি তৈরি করে দিয়ে থাকেন। এর ফলে জন্ম নেওয়া অনেক শিশু অপুষ্টি, বয়স আনুপাতিক উচ্চতা না বাড়া, স্বল্প স্মৃতি এরম নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়।
০৫) ব্রেস্ট ক্যান্সার- মদ্যপান শরীরে ইস্ট্রোজেন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে যে মহিলারা মদ্যপান করেন তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

০৬) আচরণগত অসামঞ্জস্য- মদ্যপানকারীদের অনেকেই আচরণগত অসামঞ্জস্য অ উদ্বেগ জনিত নানা সমস্যায় ভূগে থাকেন।
০৭) মাইগ্রেন- মদ্যপান অনেক সময়েই মাইগ্রেনের সমস্যা-কে বাড়িয়ে দেয়। কারন মদ্যপানের ফলে শরীরের থেকে অনেক জল প্রস্রাব আকারে বেরিয়ে জায়,আর এই অত্যধিক জল নির্গত হওয়ার ফলে শরীর জলশূন্য হয়ে পড়ে যা ডিহাইড্রেসন ও মাইগ্রেন এধরনের সমস্যার তৈরি করে।

০৮) ওজন বৃদ্ধি- মদ নামক পানীয়ের মধ্যে ট্রাইগ্লিসারয়েড বিদ্যমান হওয়ায় এটি শরীরে ব্যাড কোলেষ্টরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যার ফলে অত্যধিক মাত্রায় ওজন বৃদ্ধি করে দেয়। এই ওজন বৃদ্ধি শরীরের সমূহ ক্ষতিসাধন করে।

এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর রেখে পাঠকদের কাছে অনুরোধ মদ্যপানের আগে একবার এইগুলি ভেবে নিজের সুস্থতা ও আপনাদের উপর নির্ভর মানুষদের ভালে রাখার কথা, পরিবার ও ভবিষ্যতের কথা স্মরণ করে এই সুরাসক্তির থেকে বিরত থাকবেন।