নিজস্ব সংবাদদাতা- তৃণমূল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর দেখা গেল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার জন্য পাহাড়ের তিনটি আসন ছাড়া আর কোনো কেন্দ্র শরিক দলের জন্য ছাড়া হয়নি। বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পর মনে করা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় জনতা দলের জন্য দুটি থেকে তিনটি কেন্দ্র ছাড়বেন তৃণমূল নেত্রী। মনে করা হয়েছিল সমাজবাদী পার্টি ও শারদ পাওয়ারের এনসিপির জন্য‌ও একটি করে আসন ছেড়ে দেবে তৃণমূল। কিন্তু প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই দেখা গেল সমস্ত জল্পনা মিথ্যে।

বাম-কংগ্রেস জোটে সামিল হলে তেজস্বী যাদবের আরজেডি দুটি থেকে তিনটি আসন পেত বলে খবর। সেক্ষেত্রে বামফ্রন্ট নিজের কোটা থেকে আরজেডিকে আসন ছাড়ত। এর আগেও মবাম শরিক হিসেবে লড়াই করেছে আরজেডি। সে সময়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। বামফ্রন্ট সূত্রে খবর আরজেডি জোট শরিক হিসেবে লড়াই করলে কলকাতার জোড়াসাঁকো কেন্দ্রটির পাশাপাশি পশ্চিম বর্ধমান জেলায় আরও একটি বা দু’টি আসনে প্রার্থী দিতে পারতো তারা। দেখা যাচ্ছে ব্রিগেড সমাবেশে হাজির না হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পরও বিশেষ কোনো লাভ হল না লালু পুত্রের।

লালু প্রসাদ যাদবের পুত্রের মতই একই রকম লোকসান হল সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদবের ছেলে অখিলেশের। দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের শরিক ছিল সোস্যালিস্ট পার্টি। কিরণময় নন্দের নেতৃত্বাধীন এই দলটি বিধানসভায় তিন থেকে চারটি আসনে বরাবর জয়লাভ করত। কিরণময় বাবু বাম আমলে দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য মন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি নিজের দলকে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে মিশিয়ে দেন। এখন সমাজবাদী পার্টির অন্যতম জাতীয় সহ-সভাপতি থাকার পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ থেকে জিতে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন তিনি। বামফ্রন্ট সূত্রে খবর সমাজবাদী পার্টি এবারে চাইলে আগের মতো তাদের জন্য চারটি আসন ছাড়া হত না, কিন্তু দুটি আসনে খুব সহজেই তারা লড়াই করতে পারতেন।

ঘটনা হল অখিলেশ যাদব পশ্চিমবঙ্গে না আসলেও উত্তরপ্রদেশ থেকে বার্তা পাঠিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় আরজেডির পাশাপাশি সমাজবাদী পার্টির জন্য‌ও কোনো আসন ছাড়া হয়নি। সে দিক থেকে দেখতে গেলে গো-বশয়ের এই দুটি রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব পশ্চিমবঙ্গে একরকম বিপন্ন হয়ে পড়ল। এই মুহূর্তে তাদের জোটের সঙ্গে হাত মেলানো যথেষ্ট মুশকিল। কারণ দীর্ঘ টালবাহানার পর সবে গতকাল জোটের আসন বিভাজন ফর্মুলা চূড়ান্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনো রাজনৈতিক দলই নতুন করে আরজেডি বা সমাজবাদী পার্টির জন্য আসন ছাড়তে চাইবেন না।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত তেজস্বী যাদব বিহারের যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিমান রাজনীতিবিদ হলেও তার যে অভিজ্ঞতা কম তা পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রমাণ হয়ে গেল। কারণ অভিজ্ঞতার অভাবেই তিনি বাম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে হাত না মিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর ভরসা করতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত লালু পুত্রকে খালি হাতে ফিরতে হওয়ায় হিন্দিভাষী ভোটব্যাঙ্ক তৃণমূলের ওপর বিরূপ হয় কিনা সেটাই এখন দেখার।