মর্নিং ওয়াকের এই দশরকম উপকারিতা জানেন কী?

প্রতিদিনের রুটিনমাফিক ব্যস্ততা তো থাকবেই কিন্তু ক্লান্ত হয়ে পড়লে চলেনা। শরীরের সবকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল রাখতে এবং প্রতিদিনের কাজ করার শক্তি মজুত করতে মর্নিং ওয়াক একটি অব্যর্থ উপায় হতে পারে, জানেন কী?
সকালে ঘুম ভেঙেই ঘাম ঝরানো শরীরচর্চা করতে অনেকসময়ই ভালো না লাগতে পারে, তাই দিন শুরু করুন মর্নিং ওয়াক দিয়ে। হোক না আপনার বাড়ির কাছের কোন পার্কে, কিংবা সমুদ্রের ধার বরাবর, অথবা পাড়ার মোরের ক্যাফে অবধি, আধঘণ্টাও যদি হাঁটেন তা আপনার জন্য অত্যন্ত উপকারি।
জেনে নিন মর্নিং ওয়াকের ১০টি উপকারিতা।

মর্নিং ওয়াক
source: Firstcry parenting


১। কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে

সকালবেলা একটু হেঁটে আসলে আপনি অনেক বেশি চাঙ্গা বোধ করবেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটলে কার্যক্ষমতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। সারাদিনের খাটুনির পরও আপনার ধকল পরবেনা। সারাদিন ধরে সজীব এবং হাসিখুশি থাকার একমাত্র পথ মর্নিং ওয়াক। যদি গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন শরীর সুস্থ রাখতে চান অবশ্যই সকালে উঠে পনেরো মিনিট মুক্ত বাতাসে হাঁটুন। যেকোনো বয়েসীই হন, যখনই দেখবেন ঘুম থেকে উঠেও ক্লান্তি লাগছে, শক্তি পাচ্ছেন না কাজ করার, একটুও দেরি না করে হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন। ফিরবেন যখন আপনার সেইদিনের প্রাণশক্তি মজুত হয়ে গেছে।

২। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করে

আত্মমর্যাদাবোধ এবং ভালো মনের অধিকারী হতে চাইলে এখন থেকেই শুরুর করুন মর্নিং ওয়াক। যেকোন রকমের মানসিক চাপ এবং অবসাদের হাত থেকে নিষ্কৃতির বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি হল ভোরের প্রথম আলোয় হাঁটা। প্রকৃতির বিশুদ্ধ বাতাস আপনার মন জুড়িয়ে দেবার পাশাপাশি আপনাকে সুস্থ চিন্তাভাবনা করারও কিছুটা সময় দেয়। হাঁটলে নিঃসৃত হয় সেরোটোনিন এবং এন্ডরফিনের মতো আনন্দ-হরমোন, যা আপনাকে ভেতর থেকে উজ্জীবিত এবং আশাবাদী করে।

৩। ভালো ঘুম হয়

নিয়মিত শরীরচর্চা করলে আপনার মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ পর্যাপ্ত হয়। যার ফলে আপনি নির্দিষ্ট সময়ে ভালো করে ঘুমোতে পারবেন। বিছানায় শোওয়ামাত্রই আপনার ঘুম এসে যাবে। যদি নিদ্রাহীনতা দূর করতে চান, ঘুমের ওষুধ না খেয়ে নিয়মিত মর্নিং ওয়াক করুন। মর্নিং ওয়াক আপনার শরীরে হরমোনাল ভারসাম্য রাখার সহজ উপায়। সকালে খানিকটা হাঁটার মধ্যেও অনেকরকম কার্যকলাপের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেন আপনি। নতুন নতুন যোগাযোগের মধ্যে থেকে নানান কাজের পরিকল্পনায় ভরা একেকটি সকাল আপনাকে মানসিকভাবে নিশ্চিন্ত ও আনন্দিত করবে। এরফলে সারাদিনের শেষে শান্তিতে ভালো ঘুম আনতে অসুবিধে হবেনা।

৪। মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়

মর্নিং ওয়াক আপনার মস্তিষ্কের সচলতা বৃদ্ধি করে। সকালের মুক্ত বাতাস সেবণের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার অভ্যাস আপনাকে প্রাণায়ামের সমগোত্র উপকারিতা দিতে পারে। মস্তিষ্কের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে আপনার ব্রেনের কার্যক্ষমতা অনেকখানি বাড়িয়ে তোলে। এটি স্মৃতিশক্তি বিকাশে এবং সমস্যা সমাধানের পারদর্শিতা বাড়াতেও অত্যন্ত কার্যকরী উপায়, যা অ্যালজাইমারসের দুরূহ সমস্যাও অনেকাংশে প্রতিরোধ করতে পারে।

morning walk
source: 1mg.com


৫। হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে

হাঁটলে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এটি একার্থে সারা শরীরের ব্যায়াম। আপনার শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রন করে হৃৎস্পন্দনের মাত্রাও স্বাভাবিক করে মর্নিং ওয়াক। যদি উচ্চ রক্তচাপ কিংবা নিম্ন রক্তচাপের মতো সমস্যায় ভোগেন, মর্নিং ওয়াক আপনাকে সুস্থ করে তুলতে পারে দ্রুত। প্রতিদিন ৩০মিনিট হাঁটলে আপনার হৃদরোগের প্রবণতা কমবে ৩৫ শতাংশ। সমীক্ষায় দেখা গেছে , যারা নিয়মিত মর্নিং ওয়াক করেন হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা তাদের একেবারেই থাকেনা। এছাড়াও এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।

৬। সামাজিক হতে শেখায়

সকালে হাঁটতে বেরনোর সময় দেখবেন রাস্তায় আপনি একা নন, আপনার মতো আরও অনেকেই সকালের বিশুদ্ধ বাতাসে মর্নিং ওয়াক করতে বেরিয়েছেন। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতার খুব ভালো ক্ষেত্র হতে পারে এই পথটুকু। নানান আলোচনায় ফুরফুরে মেজাজে একসঙ্গে পথ হাঁটুন, দেখবেন জীবনে একাকীত্বের সমস্যাও আর নেই। নিজেকে অনেক বেশি কর্মক্ষম মনে হবে সকালে হাঁটা পথে কাটানো মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য। যা দৈনন্দিন জীবনেও আপনাকে অনেক বেশি সামাজিক করে তুলবে।


morning walk
source: 1mg

৭। ডায়াবেটিস রোগের সম্ভাবনা কমায়

প্রতিদিনের মর্নিং ওয়াক আপনার শরীরকে সহজেই সতেজতা এনে দেয়। সেইসঙ্গে নানা ধরনের রোগ ব্যাধি থেকেও আপনাকে দূরে রাখে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস আপনাকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস মুক্ত করতে পারে। হাঁটলে আমাদের শরীরে গ্লুকোসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রনে থাকে। আপনার যদি ব্লাড সুগার থেকেও থাকে নিয়মিত মর্নিং ওয়াক আপনাকে অনেকখানি সুস্থ রাখবে।

৮। ভারসাম্য বজায় রাখে

পাশ দিয়ে চলমান কিছু দ্রুত বেরিয়ে গেলে বেসামাল হয়ে যান রাস্তা ঘাটে? সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কিংবা ব্রিজে উঠলে মাথা ঘোরে? আপনার মেরুদন্ডের অনেকগুলি ব্লক আসলে অকেজো হয়ে আছে, ঠিক মরচে ধরার মত। নিয়মিত মর্নিং ওয়াক করলে আপনার মেরুদণ্ডের সুস্থতা বজায় থাকবে, শরীরের নিম্নভাগের ভারসাম্যও ফিরে আসবে। রাস্তাঘাটে মাথা ঘোরা কিংবা উচ্চতার ভীতির মতো সমস্যাগুলি একেবারেই থাকবেনা।

৯। পেশি এবং গাঁটের ব্যথা কমায়

ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছাড়াও আপনার কাছে যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে যদি আপনি পেশি কিংবা গাঁটের যন্ত্রণায় ভোগেন। ব্যথার ওষুধ এর কোন সমাধান নয়। সেই ভুল না করে নিয়মিত মর্নিং ওয়াক করুন। বয়েসের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের আর্থারাইটিসের সমস্যা শুরু হয়। যদি অল্প বয়েস থেকে নিয়মিত হাঁটেন, আপনার সবকটি পেশি ও গাঁট সচল থাকবে। হাড়ের ব্যাধি আপনাকে কষ্ট দেবেনা।

১০। বাড়তি মেদ কমায়

কেবলমাত্র ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করতে পারছেন না বলেই মেদ ঝরানোর আর কোন উপায় নেই তা নয়। প্রতিদিন ৪০মিনিট নিয়ম করে হাঁটুন ,আপনি অবশ্যই মেদহীন এক সুস্থ শরীরের অধিকারি হবেন। জোরে হাঁটলে অনেকসময় ট্রেডমিলে ছোটার থেকেও বেশি ক্যালরি খরচ করতে পারেন আপনি। মর্নিং ওয়াকের ফলে আপনার নির্দিষ্ট সময়ে খিদেও পাবে। কোষ্ঠবধ্যতার মতো সমস্যা জীবন থেকে দূর হয়ে যাবে। ফলে বাড়তি মেদ আর আপনাকে চিন্তায় ফেলবেনা।