নিজস্ব সংবাদদাতা- রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের তপশিলি জাতি ও উপজাতি সেলের মিটিংয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির শীর্ষ নেতাদের এ রাজ্যে এসে সাধারণ জনগণের বাড়ি গিয়ে পাত পেড়ে খাবার ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, “সংবাদমাধ্যমের সামনে বিজেপি নেতারা এমন ভান করেন যেন মনে হবে তারা ওই গরিব মানুষের বাড়িতে তৈরি করা খাবার খাচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনা তা নয়। বাইরে থেকে মিনারেল ওয়াটার নিয়ে গিয়ে তোমরা গরিব লোকের বাড়িতে খাবার খেয়ে তাদের অপমান করছ। সোনার থালায় খাবার খেয়ে গরীবের বন্ধু সাজার চেষ্টা করছ তোমরা।”
এর আগে রাজ্যে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বেশ কয়েকবার দরিদ্র সাধারণ মানুষের বাড়ি গিয়ে খাবার খান। নাম না করে তাদেরকে কটাক্ষ করে যুব তৃণমূল সভাপতি বলেন, “সকালে কলা পাতার সঙ্গে দোস্তি, রাত্রিবেলায় ফাইভ স্টার হোটেলে বসে মস্তি। এটাই হল বিজেপি।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এই মিটিংয়ে বক্তব্য রাখেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বারবার বাঙালি আবেগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর পাশাপাশি দলত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার করতে গিয়ে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সিরাজউদ্দৌলা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের সময় তিনি তার সেনাপতি মীরজাফরের মাথায় নিজের মুকুট পরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন এইটার মর্যাদা রক্ষা কর, এই সিংহাসনের মর্যাদা রক্ষা কর। কিন্তু মীরজাফর সে কথা শোনেনি। ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশকে পরাধীন করে তোলার মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিল সে। মানুষজন কিন্তু সিরাজকে মনে রেখেছে, আর মীরজাফরের নাম ঘেন্নার সঙ্গে উচ্চারণ করে।”
তৃণমূল নেত্রীর সিরাজউদ্দৌলা ও মীরজাফর গল্পের মূল লক্ষ্য যে শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব ব্যানার্জি তা সকলেই বুঝতে পেরেছেন। ঘটনা হল দল ছাড়ার পর এই দুই প্রাক্তন মন্ত্রীকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে গদ্দার বলে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু বিজেপির হয়ে একের পর এক জনসভায় বিস্ফোরক বক্তব্য রেখে চলেছেন শুভেন্দু ও রাজীব। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য সরকারের পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তিও ক্রমশ বাড়ছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে নিজের ওপর তৈরি হওয়া চাপ কাটাতেই তৃণমূল নেত্রী অতি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন এই দুই দলত্যাগী নেতা সম্বন্ধে।