“দাদা আমি সাতে-পাঁচে থাকি না।”- গতবছর করোনা আবহে লকডাউন চলাকালীন এই লাইনটা হঠাৎই তরুণ প্রজন্মের মনগ্রাহী হয়ে উঠেছিল। বাংলা সিনেমা জগতের প্রখ্যাত অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের নিজের লেখা ও আবৃত্তি করা এই কবিতাটি হৃদয় ছুঁয়েছিল বাংলার আপামর সাহিত্যপ্রেমী মানুষের। তবে সম্প্রতি এই জনপ্রিয় লাইন নিয়েই পাল্টা কটাক্ষের মুখে পড়ছেন এই অভিনেতা। কিন্তু কেন?
সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে দেখা যাবে, রুদ্রনীল সত্যিই কোনো সাতে-পাঁচে থাকেন না। তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও কি এই কথা প্রযোজ্য? প্রশ্ন ওঠে।
রুদ্রনীল ঘোষের বাম-যোগ:
![রুদ্রনীল ঘোষ 'সাতে পাঁচে' থাকেন না? ''সুবিধাবাদী'' তকমায় সরব নেটিজেনরা! রইল 3 বিশ্লেষণ 1 রুদ্রনীল](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2021/01/21-32-59-images.jpg)
টলিউড অভিনেতার বক্তব্য অনুযায়ীই, বাম আমলে সিপিআইএম-র সর্বক্ষণের কর্মী বা পার্টির হোলটাইমার ছিলেন তিনি। একাধিক সাক্ষাৎকারে অকপটে একথা স্বীকার করতে শোনা গেছে তাঁকে। তিনি জানিয়েছেন দলের সঙ্গে মতবিরোধের জেরেই নাকি সেই সদস্যপদ তিনি ত্যাগ করেন। সত্যিই কি মতবিরোধ? নাকি দলের দুঃসময়ে নিজের পিঠ বাঁচানো? প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনদের একাংশ।
রুদ্রনীল ঘোষের ঘাসফুল-যোগ:
![রুদ্রনীল ঘোষ 'সাতে পাঁচে' থাকেন না? ''সুবিধাবাদী'' তকমায় সরব নেটিজেনরা! রইল 3 বিশ্লেষণ 2 21 31 55 images](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2021/01/21-31-55-images.jpg)
![রুদ্রনীল ঘোষ 'সাতে পাঁচে' থাকেন না? ''সুবিধাবাদী'' তকমায় সরব নেটিজেনরা! রইল 3 বিশ্লেষণ 2 21 31 55 images](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2021/01/21-31-55-images.jpg)
এরপর ২০১১ সালে এক ঐতিহাসিক পালাবদলের সাক্ষী থাকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল। ৩৪ বছরের বাম সাম্রাজ্য ধূলিস্যাৎ করে ক্ষমতায় আসেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে পালাবদল হতেই রুদ্রনীল ঘোষের রাজনৈতিক আগ্রহও বদলে যেতে দেখা যায়। দল বদল করে লাল ছেড়ে সবুজে ঝোঁকেন তিনি। শুধু তাই নয়, দিনে দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহের পাত্রও হয়ে ওঠেন এই রুদ্রনীল ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদী হাত মাথায় নিয়ে অল্প দিনেই বড়সড় একটা সরকারি পদও যে বাগিয়ে বসেন তিনি, তাও নিন্দুকদের চোখ এড়ায় না। এতগুলো বছরে ঠিক কতদিন তিনি অফিসে গিয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে থাকেন কেউ কেউ।অবশ্য অফিসে না গেলেও, মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসতে তাঁকে বরাবরই দলের যে কোনো বড় কর্মসূচিতে সামনের সারিতেই দেখা গেছে।
রুদ্রনীল ঘোষের গেরুয়া ঝোঁক:
![রুদ্রনীল ঘোষ 'সাতে পাঁচে' থাকেন না? ''সুবিধাবাদী'' তকমায় সরব নেটিজেনরা! রইল 3 বিশ্লেষণ 3 12 50 29 1611426950 canva photo editor1 1](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2021/01/12-50-29-1611426950_canva-photo-editor1-1.png)
![রুদ্রনীল ঘোষ 'সাতে পাঁচে' থাকেন না? ''সুবিধাবাদী'' তকমায় সরব নেটিজেনরা! রইল 3 বিশ্লেষণ 3 12 50 29 1611426950 canva photo editor1 1](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2021/01/12-50-29-1611426950_canva-photo-editor1-1.png)
তবে এই খেলাও ক্রমশ ঘুরে যেতে দেখা গেল ২০১৯ লোকসভা ভোটের পর থেকে। রাজ্যে যতই শক্তি বাড়ালো বিজেপি, রুদ্রনীল ঘোষও যেন ততই বেঁকে বসলেন তৃণমূলী শিবিরে। নাম না করে দলের অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধেই সংবাদমাধ্যমে বিষোদগার করতে দেখা গেছে তাঁকে। তাঁকে নাকি কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না, বিভিন্ন জায়গায় এমনটাই অভিযোগ করতে থাকেন তিনি। শুধু তাই নয়, এমনটা চলতে থাকলে দল ছেড়ে বেরিয়ে যেতেও নাকি তিনি দ্বিধাবোধ করবেন না, দিয়েছিলেন তেমন হুমকিও। তাই বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে দলীয় নেতাদের নাম থাকলেও, তাঁর কলম জানায়, তিনি ‘সাতে-পাঁচে’ থাকেন না।
সম্প্রতি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখা গেছে রুদ্রনীল ঘোষকে। নিজেই সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেছেন অভিনেতা। আর তা নিয়েই ফের শুরু হয়েছে চর্চা। নেটিজেনদের বিদ্রুপের মুখে ‘সুবিধাবাদী’ তকমা জুটেছে ‘সাতে পাঁচে’ না থাকা রুদ্রনীল ঘোষের। উল্লেখ্য ২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধারেকাছেও দেখা যায় নি অভিনেতাকে।
![রুদ্রনীল ঘোষ 'সাতে পাঁচে' থাকেন না? ''সুবিধাবাদী'' তকমায় সরব নেটিজেনরা! রইল 3 বিশ্লেষণ 4 12 49 49 images 1](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2021/01/12-49-49-images-1.jpg)
![রুদ্রনীল ঘোষ 'সাতে পাঁচে' থাকেন না? ''সুবিধাবাদী'' তকমায় সরব নেটিজেনরা! রইল 3 বিশ্লেষণ 4 12 49 49 images 1](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2021/01/12-49-49-images-1.jpg)
বেশ কয়েক মাস ধরেই রুদ্রনীল ঘোষের দল বদলের জল্পনা চলছে। যদিও এই বিষয়ে সরাসরি কিছুই জানাননি রুদ্রনীল। তবে রুদ্রনীল বলেছেন, রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত থেকেও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে পারেননি তিনি, বরং লকডাউন থেকে আমফান পরবর্তী সময়ে তিনি নিজের মতো করে দুঃস্থ মানুষদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। তাই যে রাজনৈতিক দল মানুষের পাশে থাকবেন, তাদের সঙ্গে রুদ্রনীল ঘোষ আছেন। গেরুয়া ঝোঁকের ইঙ্গিত এই মন্তব্যে স্পষ্ট।
পাশাপাশি অভিনেতা এও বলেন, যদি তিনি দলবদল করেন সে কথা নিজেই জানাবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এর সঙ্গে তোলা ছবি আরও উসকে দিল এই তারকা অভিনেতার শিবির বদলানোর জল্পনা। বেশিরভাগ মানুষই সোশ্যাল মিডিয়ায় রুদ্রনীল ঘোষের সেলফির নীচে মন্তব্য করেছেন লাল সবুজের পর এবার সুবিধা বুঝে কি তবে গেরুয়া? বলা বাহুল্য, উত্তর দেবে সময়।